২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:০১:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপি কর্মীর ওপর গুলি হামলা, শীর্ষনেতারা রক্তাক্ত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
বিএনপি কর্মীর ওপর গুলি হামলা, শীর্ষনেতারা রক্তাক্ত


বিএনপি নেতা-কর্মীর ওপর হামলা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। না সুদীর্ঘ দেড়যুগের হিসাবটা এখানে বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করার সূচনালগ্নের কথা। গত ৩১ জুলাই ভোলা জেলায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলিতে নিহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. আব্দুর রহিম গুলিতে নিহত হন। এরপর নারায়ণগঞ্জে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার ওপর পুলিশের গুলি, তাতে যুবদল কর্মী শাওন নিহত হন। ফলে নিহত হওয়ার সংখ্যা তিন। এছাড়া অজস্র হামলা, আহত হওয়ার ঘটনা তৃণমূলে। বিএনপি প্রতিবাদ হিসেবে তৃণমূলে মিছিল-মিটিংয়ের কর্মসূচি দিয়েছিল। সেখানে প্রায় প্রতিটা স্থানেই হামলা ও মামলার শিকার। কিছু কিছু স্থানে হামলায় আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে আবার মামলায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন অনেকেই। এটা দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও করে। তবে হামলার ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন শুধু কর্মীদের ওপর হামলা নয়। বিএনপির শীর্ষনেতাদের ওপরও আক্রমণ করার কৌশল নিয়েছে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ। 

বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি। যা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করে বিএনপি। সেখানে হামলা করে ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে রক্তাক্ত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে প্রতিপক্ষরা। আহত হয়েছেন অনেকেই। একইদিন নোয়াখালী থেকে ঢাকায় ফেরার পথে হামলা করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য বরকতুল্লাহ বুলুর ওপর। তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও সঙ্গী। তাদেরও আহত করা হয়েছে। বুলুর মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। 

বিএনপি এ নিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ওইদিন রাতে মশাল মিছিল করে বিএনপি। এছাড়াও পরের দিন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর যে খবর পাওয়া গেছে সেটা নারায়ণগঞ্জে বিএনপি, যুবদল নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

রূপগঞ্জ উপজেলায় ভুলতার পর এবার চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকায় বিএনপি ও যুবদলের পাঁচ নেতার বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে খবরে প্রকাশ। ১৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এসব হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা ‘বিএনপির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেয়। বাড়ির লোকজনকে মারধর ও জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীদের অধিকাংশই কিশোর।

এর আগের দিন রূপগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদলের মশাল মিছিলকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতির বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ছাড়া যুবদল ও ছাত্রদলের আরো পাঁচ নেতা-কর্মীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলার ভুলতা এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। রূপগঞ্জ উপজেলার যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব হামলা ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন। 

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, হামলায় তিনি, তাঁর বাবা মো. শাহাবুদ্দিন, মা উম্মে হানি, বড় ভাই মাসুম মিয়া, ছোট বোন রেহানা (১৪) ও ভাইয়ের ছেলে অনিক (১৫) আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তার মা ও বাবাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

বিএনপির হুঁশিয়ারি 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন, হামলা করছেন। এগুলো করবেন না। এগুলো করে বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদের পদত্যাগ করানো হবে।’ ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আমরা একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা আমাদের সব অর্জনকে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশ আত্মাকে বিসর্জন দিয়েছে, তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’ গত রোববার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা ও উপলব্ধি

বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’ সোমবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন কাদের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ-মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলো তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো। আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। এখানে কেন্দ্রের কোনো নির্দেশ নেই।’ 

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে এখানে-ওখানে দু’একটা ঘটনা ঘটিয়ে আজকে সরকারের দুর্নাম, আওয়ামী লীগের দুর্নাম। এগুলো যারা করবে, সহ্য করা হবে না। আর এইটার সুযোগ নিয়ে তারা আমাদের অপবাদ দেবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে যায় বিভিন্ন দূতাবাসে। গিয়েই নালিশ। বিএনপির আরেক নাম বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। দেশের মানুষের কাছে যতোটা না করে, তার চেয়ে বেশি বিদেশিদের কাছে।

বাম জোটের নিন্দা 

বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সোমবার এক বিবৃতিতে বাম জোট বলেছে, বাম জোটসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল সংগঠনের সভা-সমাবেশে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ হামলা করছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও দমন-পীড়ন বন্ধ করে সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার অনুসারে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অবাধ অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তারা।

এই জোট বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্টব্যবস্থা কায়েম করে কেউ ক্ষমতা স্থায়ী করতে পারেনি। এই সরকারও পারবে না। হামলা-মামলা, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতি দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা 

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) পৃথক বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যের নেতারা এসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জোনায়েদ সাকির সই করা গণতন্ত্র মঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নোয়াখালী থেকে কর্মসূচি করে ফেরার পথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বিএনপির নেতা বরকতউল্লাহ বুলুর ওপরে হামলা এবং তাকে ও তার স্ত্রীকে আহত করা এক নজিরবিহীন ঘটনা। পুলিশের গুলিতে নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে ঢাকার বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বলনের মতো কর্মসূচিতেও হামলা করে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তাবিথ আউয়ালসহ নেতাকর্মীদের আহত করা স্পষ্ট করছে সরকার পুরোপুরি উম্মাদ হয়ে গেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সারা দেশে বিএনপির সভা-সমাবেশ ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, বিভিন্ন জেলায় গণতন্ত্র মঞ্চের সভা সমাবেশ ও শরিক বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ওপরে হামলা-মামলা, বিভিন্ন স্থানে বামপন্থী দলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা, সরকারের মরিয়া অবস্থার প্রকাশ। সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর গুণ্ডাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে এই মরিয়া আক্রমণে কেবল হামলা-মারপিট-ভাঙচুর-লুটপাটই নয়, এমনকি কুপিয়ে ও গুলিবর্ষণ করেও হত্যা করছে। জনসম্মতিহীন সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে পুরোপুরি দলীয় গুণ্ডাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ায় পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে গেছে।’

জেসিডি সভাপতি আসম রব 

জেএসডি সভাপতি আ স ম রব বলেছেন, দলীয় সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা: ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে। সারাদেশে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাদের বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট ও ককটেল বিস্ফোরণে দায়ী সরকারদলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীকে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাকে ধরে রাখার আশায় দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের সরকারের আত্মঘাতী অপকৌশল বাংলাদেশকে হাইতি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া বা সুদানের মতো ব্যর্থমুখী রাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, চাইনিজ কুড়াল, রামদা ও রড হাতে মিছিল করে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরের দরজা ভেঙে পরিবারের সবার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, কোথাও পিস্তল ঠেকিয়া মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করছে, কোথাও ছোট্ট শিশুদের গলায় রামদা ধরে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। কয়েক জায়গায় বাড়ির ফটকের তালা ভেঙ্গে হামলা করে বাড়িতে ঢুকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলাকারীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মা- বাবা, কিশোরী বোন, ভাতিজাসহ ভাইকে পিটিয়ে আহত করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেশি অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে। অস্ত্র হাতে হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এরপরও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা বা গ্রেফতার না করে নির্যাতিতদের নামেই নতুন করে মামলা দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় রাষ্ট্রের পক্ষে বর্তমান সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং মানুষের নিরাপত্তাকে চরম হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, সহিংসতা, অস্থিরতা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং অসহনীয় পুলিশি শাসন এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা চরম চ্যালেঞ্জের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে। সরকারকে অবিলম্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ

বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সভা-সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে দুর্নীতি-লুটপাট ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। দ্রব্যমূল্যসহ মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনদুর্ভোগ অতীতের সব সীমা পেরিয়েছে। সরকার মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের স্বার্থই রক্ষা করছে।’ ফিরোজ বলেন, ‘দমন-পীড়ন, নির্যাতন, হামলা-মামলা করে অতীতে কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, বর্তমান সরকারও পারবে না।’ 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘প্রকাশ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে সরকার দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিরোধীদের ওপর হামলা আক্রমণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব তৎপরতা সরকারের দমনমূলক স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এসব করে শেষ রক্ষা করা যাবে না।’ 

নাগরিক ঐক্য 

‘বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং ঢাকার বনানীতে তাবিথ আউয়ালসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই হামলা প্রমাণ করে সরকার অবৈধ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বরকত উল্লাহ বুলুর ওপর সস্ত্রীক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছিলেন না। চায়ের দোকানে ঢুকে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।’

মাহমুদুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বালনের মতো কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে তাবিথ আউয়ালসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার এবং সরকারি দল যে কতটা সন্ত্রস্ত, তা এই দুটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা থেকে বোঝা যায়। তারা হামলা, মামলা, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং জনগণকে ভয় দেখিয়ে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো আরেকটি প্রহসনের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়।’

শেয়ার করুন