২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪৫:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


আ.লীগের শরিকরাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণে পথের কাঁটা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
আ.লীগের শরিকরাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণে পথের কাঁটা


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সব শরিকরা। তারাই পরামর্শ দিচ্ছে এবং এর পাশাপাশি আবদার করছে যেনো শেষ বিচারে আসনটি শরিকদেরই থাকে। এর পাশাপাশি নির্বাচনের আগেই যেনো আসনের বিষয়টি ফয়সালা বা কনফার্ম হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ পড়েছে মহা বেকায়দায়। অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রমাণ করতে হবে যে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেননা খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক সভা-সমাবেশে এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমেই জোর গলায় বলেছেন ২০২৪ সালে বাংলাদেশে একটি একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কিন্ত সেপথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতার দীর্ঘদিনের পার্টনার বা শরিকরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তা রাজনৈতিক মাঠ ঘুরে জানা গেছে। 

শরিকদের মুখে একটা অন্তরে আরেকটা

‘তারা (আওয়ামী লীগ) পাস করতে পারবে কনফার্ম। তারপরেও তারা সিল মারছে। কেন? কারণ সিল মারাটা তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। একটা ম্যানিয়া হয়েছে। পাস করবে তারপরেও তারা সিল মারবে। মানে কষ্ট করতে রাজি না। ভোটারদের তারা কষ্ট দিতে চায় না। তারা মনে করে ভোটাররা কেন কষ্ট করবে। তারা নিজেরা করে ফেলে। এই কারণে আমরা নির্বাচনে যাবো কী যাবো না- এই প্রশ্নে পড়ে রয়েছি।’

মাত্র কয়েকদিন আগেই এমন বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ভোটকেন্দ্রে ওই নেতাকে একাধিক ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। এমন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেই মুজিবুল হক চুন্নু ওই বক্তব্য দেন। এমন বক্তব্য দেযার পাশাপাশি তিনি জানান যে তার দল আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবেন কি-না সে ব্যাপারেও প্রশ্নবোধক ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য দেন। বলেন, এই কারণে আমরা নির্বাচনে যাবো কী যাবো না- এই প্রশ্নে পড়ে রয়েছি।’ এর আগে বহুবার খোদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, যত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হোক সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না। তৃণমূলের রাজনীতি গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। শাসকশ্রেণি ও তাদের দল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটাকেই বলা হয় একনায়কতন্ত্র। স্বৈরশাসন হলে জনগণের কথা মতো দেশ চলে না। এখন দেশের মানুষ স্বৈরশাসনে নিষ্পেষিত। এই নেতাই আবার বলেছেন, দেশের মানুষ একটা অনিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সর্বশেষ নির্বাচনে যাওয়ার এখনও পরিবেশ তৈরি হয়নি জানিয়ে জিএম কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসারও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন, এই অবস্থায় যদি আমরা নির্বাচনে যাই আর যদি পরবর্তীতে সরকার সমস্যায় পড়ে তাহলে কী হবে? কিন্তু শেষ বিচারে জাপা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে গেছেন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম শরিক হচ্ছে জাতীয় পার্টি। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো বর্তমানে এই জাতীয় পার্টি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে ভাগেই আসন বাগিয়ে নিতে বড় ধরনের দরকষাকষিতে নেমেছে ক্ষমতাসীনদের সাথে। এই দরকষাকষি এমন পর্যায়ে গেছে যে, আওয়ামী মহা বেকায়দায় পড়েছে। কারণ জাপা হুমকি দিচ্ছে তাদের সাথে দরকষাকষি না হলে নির্বাচনে শেষ মেষ থাকবে কি-না তা তারা বলতে পারছে না। জানা গেছে, দলটি ভাগে পাওয়া আসনে জয়ের নিশ্চয়তা পেতে জাপা আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র সব প্রার্থীর প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি করছে ক্ষমতাসীনদের আওয়ামী লীগের ওপর। 

একিই আবদার ১৪ দলের

এদিকে শুধু আসন ভাগাভাগিই না ভোটের আগে ভাগেই তাদের জন্য যেনো আসনটি মোটামুটি নির্ধারিত হয়ে যায়-এমনটাই চায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শরিক ১৪ দলের নেতারা। তারা এখন নিজ দলমত আদর্শ ত্যাগ করে সংসদ সদস্য হতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট করতে মারাত্মকভাবেই আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারাও তাদের ভাগে পাওয়া আসনে জয়ের নিশ্চয়তা চায়। চায় তাদের জন্য বরাদ্ধ আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র সব প্রার্থীর প্রত্যাহার। 

বাকিরাও চায় নির্বাচনের আগে ভাগাভাগি

এদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোর কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হতে মোটেই আগ্রহী না। নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন ইসলামী দল ছাড়াও কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ সব দলই চায় নিশ্চিত জয়। চায় আওয়ামী লীগের আনুকূল্য। 

শেষ কথা

আগামী ৭ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হচ্ছে ৪৪টি। ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। রাজনৈতিক মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ১৫টি দল ভোটে যাচ্ছে না। অথচ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক হওয়ার চাপ দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রকাশ্যেই বলেও ফেলেছে যে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলে আসা বিদেশিরাই শুধু নন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এমনকি দেশের ভেতর থেকেও বার বার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সর্বশেষ বৈঠকেও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে মাত্র কয়েক দিন আগেও বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গণমাধ্যমে বলেছেন, বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। এমন বাস্তবতায় হতে যাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচনকে অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক দেখা মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন সরকার। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে ক্ষমতাসীনরা বেশ কয়েকটি কূটকৌশল নিয়েছে। ইতোমধ্যে সফলতা এসেছে ৩৩টি আসনে। অংশগ্রহণমূলক দেখানো হলো ক্ষমতাও হাতে রইলো এমন পরিকল্পনাতেই চলছিল আওয়ামী লীগ। বলা যায়, সে-ই ছকেই মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণ করতে আওয়ামী লীগের কৌশল ভেস্তে যাবার উপক্রম, তার সাথে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ক্ষমতার অংশিদারদের নানান ধরনের ফোসফাসের কারণে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার আশে পাশে থাকা এসব রাজনৈতিক দলগুলি এখন প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে জয়ী হয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে বা একেবারেই আগ্রহী না। একধরনের অভ্যাসেও পরিণত হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। তবে একটি সূত্র জানায়, শরিকদের অনেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চাপ দিচ্ছে এই বলে যে যেভাবেই হোক না কেনো তারাতো (আওয়ামী লীগ) একতরফাই নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এমন নির্বাচনে আবার এতো রাখঢাক কেনো? গোপনীয়তার কি আছে? তাই আগেভাগেই নিজ নিজ অসন কনফার্ম করে ফেললেই বা কি যায় আসে? এমন পরিস্থিতিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমনটা প্রমাণে হোঁচট খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করছে দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন প্রমাণের পথে অন্যতম কাঁটা হচ্ছে ক্ষমতার এই শরিকরা। আর একারণেই সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জিততে হবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে। কিন্তু তার এমন আহবানে কোনো সাড়া যে মিলছে না তা রাজনৈতিক মাঠ ঘুরে দেখা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীনরা আসলে কি করবে তাই দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

শেয়ার করুন