২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:২৩:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেশকে রাহুল আনন্দ
ফ্র্যান্সের প্রেসিডেন্ট আমার বাসায় আসবেন এটা চিন্তাও করিনি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
ফ্র্যান্সের প্রেসিডেন্ট আমার বাসায় আসবেন এটা চিন্তাও করিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাচ্ছেন রাহুল আনন্দ ও তার স্ত্রী


ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করেছেন। এ সময় তিনি ধানমন্ডিতে সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় কাটিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে রাহুল আনন্দ কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির। 

প্রশ্ন: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আপনার বাসায় আসার পর আপনাকে নিয়ে নতুনভাবে মানুষ আলোচনা করছে। বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?

রাহুল আনন্দ: আমার জন্য এটা খুবই ভাগ্যের। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আমার বাসায় আসবেন এটা কোনোদিন চিন্তাও করিনি। 

প্রশ্ন: কবে জানতে পেরেছিলেন যে তিনি আপনার বাসায় আসবেন?

রাহুল আনন্দ: তিনদিন আগে জানতে পারলাম তিনি আমার বাড়িতে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তখন আমার আনন্দ লাগলেও শঙ্কিত ছিলাম। আমার এই ভাঙ্গা বাড়িকে কিভাবে সাজাবো বা কিভাবে দেখানো তা নিয়ে। আমি খুব অগোছালো মানুষ। আমার কোনো কিছু গোছালো নেই। তারপরও যতটুকু পেরেছি বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজিয়েছি। তবে সাজগোজে কৃত্রিম কোনো আয়োজন ছিল না। এমন কি তাকে বসানোর জন্য কোনো সোফা বা চেয়ারও আনিনি। আমার বাসার টুলেই বসে তিনি আড্ডা দিয়েছেন। রং চা, ব্ল্যাক কফি খেয়েছেন। 

প্রশ্ন: ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আপনার যোগাযোগটা আসলে কিভাবে?

রাহুল আনন্দ: চলতি বছরের জুনে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলিয়স ফ্রঁসেজ ডি ঢাকায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সঙ্গীত পরিবেশন ও নাট্য মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেখানে তিনি বেলজিয়ান ম্যাক্স ভ্যান্ডারভর্স্টের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই পারফরম্যান্স সম্পর্কে জানার আগ্রহী হয়েছেন। ওই থেকেই আসলে যোগাযোগ। 

প্রশ্ন: ওনার সঙ্গে আপনার কি কথা হয়েছে?

রাহুল আনন্দ: ওনার সঙ্গে অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে। আড্ডার এক ফাঁকে তিনি জানতে চেয়েছেন আমার স্বপ্নের কথা। বলেছি, আমি পৃথিবীটাকে সবুজ দেখতে চাই। তিনি তখন বলেন, এইক্ষেত্রে তুমি কিভাবে ভূমিকা রাখবে? তখন বললাম, আমি যেখানে গান করি সেখানে গাছ লাগানো, নদী-প্রকৃতির যত্ন নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। ১৯৯৪ সাল থেকে আমি ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাই। কিছু দিন আগে বাংলাদেশ-সীমান্তে গাছ লাগিয়েছি। 

প্রশ্ন:আপনার জীবনে আনন্দ বেদনা কতটুকু?

রাহুল আনন্দ: যতটুকু আনন্দ ততটুকুই বেদনা। বেদনা ছাড়া তো আর আনন্দ হয় না।

প্রশ্ন: কিছু কি ফারাক নেই?

রাহুল আনন্দ: আনন্দ বেদনা দুটোই মধুর। অনেক বেদনায় যেমন মানুষ কান্না করে, অনেক আনন্দেও মানুষ কান্না করে। অনেক বেশি বেদনায় যেমন মানুষ পাথর হয়ে যায় তেমনি অনেক বেশি আনন্দেও পাথর হয়ে যায়। ফারাক হচ্ছে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। এক পিঠে তার আনন্দ আরেক পিঠে তার বেদনা। জল যেমন যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের রঙ রূপ ধারণ করে, গানগুলোও তেমন। আপনি যখন একটি গান শুনবেন তখন সেটি আপনার গান। আমার মাধ্যমে গীত হতে পারে, আমার মাধ্যমে সুরকৃত হতে পারে, আমার মাধ্যমে একটি রূপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন গানটি শুনছেন তখন সেটি আপনার গান, আমার নয়। গানটি যখন গাইছেন তখন সেটি আপনার গান। আপনিই জানবেন আপনার ঝরা পাতা কোনটি।

প্রশ্ন: বেশি আনন্দ হয় কিসে?

রাহুল আনন্দ: বেশি আনন্দের ব্যাপারটা তো সময়ের উপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন: যেমন?

রাহুল আনন্দ: যখন নতুন গানের সুর তৈরির জন্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসি তখন এক ধরনের আনন্দ। একটা সুর তৈরি করার চেষ্টা করা। সুর ধরা দিচ্ছে কি দিচ্ছেনা অথবা ছলনা করছে। এটা ছলনার মধ্য দিয়ে যাওয়াটাও একটা আনন্দ। ছলনাটা বেদনা আবার যখন পাওয়া যায় সেটা আনন্দ। 

প্রশ্ন: গানে সুর দরকার কেন?

রাহুল আনন্দ: গান যে সব সময় সুর নির্ভর হতে হবে এমটা নয়। বেসুরো গান বলেও তো একটা কথা আছে। একটা গানকে শিমুল মুস্তাফা যখন আবৃত্তি করেন তখন সেটি হয়ে যায় কবিতা। 

প্রশ্ন: কবিতা ও গানের মধ্যে পার্থক্য কি?

রাহুল আনন্দ: খুব বিস্তারিত বলতে পারবো না। যেটুকু বলতে পারি, অনেকে বলেন সব গানই কবিতা, সব কবিতা গান নয়। আমি নতুন করে নিজের মতো করে তৈরি করেছি, সব গানও গান নয়, যে গান উড়তে পারে সেটাই গান। উড়তে পারার অর্থ হচ্ছে যে গান আমার গলা থেকে উড়ে গিয়ে আরেকজনের গালয়া বাসা বাঁধে সেটাই গান। যে গান শুধু আমিই গাইলাম সেটা কোন গান নয়। 

প্রশ্ন: স্বপ্ন দেখেন?

রাহুল আনন্দ: দেখি।

প্রশ্ন: কেমন সে স্বপ্নগুলো?

রাহুল আনন্দ: ঘুমিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখি তার বেশিরভাগই তো মনে থাকে না। এবং আমার ধারণা অধিকাংশ মানুষই রাতের স্বপ্নগুলো সেভাবে মনে রাখতে পারে না। সেটাই বোধহয় স্বপ্ন জেগে জেগে যেটা দেখা হয়। সেক্ষেত্রে বলবো, আমি সাধারণ পর্যায়ের মানুষ, আমার স্বপ্নগুলোই সাধারণ। বেশি বড় স্বপ্ন আমি দেখতে পারি না। আমার স্বপ্ন হলো আমার আশেপাশের মানুষকে হাসি ও আনন্দের মধ্যে দেখতে চাই। অন্তত আমার পাশে যে মানুষটি থাকে তাকে আনন্দ দিতে চাই, আমার যত বেদনাই থাকুক।

প্রশ্ন: কল্পনায় এই মহূর্তে কোথাও যেতে বললে কোন জায়গায় যাবেন?

রাহুল আনন্দ: বেশি দূরে যাবো না, চারুকলায় যাবো। চারুকলার ঐ অঙ্গনটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। যদিও আমি এখন আর সেখানকার ছাত্র নই তবুও সেখানে হাঁটতে আমার ভালো লাগে। সেখানে আমার কিছু গাছ লাগানো আছে এবং গাছগুলোর সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে। কেউ আমাকে না দেখলেও ঐ গাছগুলো আমাকে দেখে। 

প্রশ্ন: আরেক জীবনে গাছ হয়ে জন্মাতে হলে কোন গাছ হতে চাইবেন?

রাহুল আনন্দ: যে গাছে সারা বছর ফুল ফোটায় এমন কোন গাছ।

প্রশ্ন: খ্যাতিকে কীভাবে উপভোগ করেন?

রাহুল আনন্দ: খ্যাতি আর জনপ্রিয়তার মধ্যে পার্থক্য আছে। এখানে আমরা একটা ভুল করি। জনপ্রিয়তাকে খ্যাতির সাথে ভুলভাবে মিলিয়ে ফেলি। কখনও জনপ্রিয় মুখকে আমরা বলি তারকা। কিন্তু তারকা ও জনপ্রিয় দুটো ভিন্ন জিনিস। জনপ্রিয় যে কেউ হতে পারে, তারকা সবাই হতে পারে না। আমাদের গানের দলকে জনপ্রিয় দল বলতে পারেন, খ্যাতিমান নয়। মানুষজন জলের গানকে পছন্দ করে এই পর্যন্তই। খ্যাতিমান হতে হলে যে পর্যায়ে যাওয়া দরকার জলের গান ঐ পর্যায়ের ধারেকাছেও যায়নি। 

প্রশ্ন: গানের পাশাপাশি আপনি একজন চিত্রকর ও নাট্য শিল্পী। এরমধ্যে কোন পরিচয়টি আপনার বেশি পছন্দ? 

রাহুল আনন্দ: আমি থিয়েটার করি, আমি চারুকলার একজন শিক্ষার্থী, আমি থিয়েটারের একজন শিক্ষার্থী। একটা সময় ছিলো যখন নিকটজনরা বলতো, একটা কিছু নিয়ে চেষ্টা করো। এতকিছু নিয়ে তো পারবে না। একটা সময় মনে হতো শুধু থিয়েটার করি, কিন্তু তখন গান বাজনাও করতে চাই, ছবি আঁকতে চাই। তারপর নিজে থেকে একটা কর্মপ্রক্রিয়া ঠিক করি। আমি থিয়েটার ভালোবাসি, আমি সঙ্গীত ভালোবাসি, আমি চিত্রকলা ভালোবাসি। তাই চিন্তা করলাম তিনটিকে মিশিয়ে কিছু করা যায় কিনা। যখন আমি গান করি তখন সেখানে থিয়েটারকে মেশাই, চিত্রকলাকে মেশাই। যখন চিত্রকলা করি তখন সেখানে আমার সঙ্গীতকে মেশাই, আমার থিয়েটারকে মেশাই।

প্রশ্ন: জলের গান কেন জলের গান?

রাহুল আনন্দ: বাংলাদেশের একটা গানের দল করার ইচ্ছে। যে যার মাতৃভাষাতেই স্বপ্ন দেখে, আমরা স্বপ্ন দেখি বাংলায়। যেহেতু বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় আমরা গান করবো সেহেতু দলটার নাম জলের গান। বাংলাদেশ একটা জলাভূমির দেশ, শত শত নদী, অদ্ভুত সুন্দর তাদের নাম। জলের সাথে সাথে এদেশের রূপ পরিবর্তিত হয়। বর্ষায় এক রকম, শরতে এক রকম আবার শীতে সেখানে শুকনো, কখনও আবার সবুজ ধানগাছে ভরা অথবা হলুদ সর্ষে ফুলে। 

প্রশ্ন:ঝরা পাতার সাথে কী কথা?

রাহুল আনন্দ: এই ঝরা পাতাটি হতে পারে গাছের একটি ঝরা পাতা, ডায়েরির ঝরা পাতা, চিঠির পাতা, জীবন খাতার একটি পাতা, গতকালের একটি দিন, একটু আগের এক ঘন্টা, জীবনের শত সহশ্র মুহূর্তগুলো, আমার ঝরে পড়া বন্ধু, ঝরে পড়া প্রেম যাকে আমি হারিয়ে বারবার খুঁজি অথবা এমন অনেক কিছু। 

প্রশ্ন: অর্থাৎ এটি নির্ভর করবে শ্রোতার অনুভূতির উপর?

রাহুল আনন্দ: ঠিক তাই! জল যেমন যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের রঙ রূপ ধারণ করে, গানগুলোও তেমন। আপনি যখন একটি গান শুনবেন তখন সেটি আপনার গান। আমার মাধ্যমে গীত হতে পারে, আমার মাধ্যমে সুরকৃত হতে পারে, আমার মাধ্যমে একটি রূপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন গানটি শুনছেন তখন সেটি আপনার গান, আমার নয়। গানটি যখন গাইছেন তখন সেটি আপনার গান। আপনিই জানবেন আপনার ঝরা পাতা কোনটি। 

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত প্রশ্ন। রেগে গেলে কী করেন?

রাহুল আনন্দ: আগে ভাঙচুর করতাম। আক্ষরিক অর্থেও ভাঙচুর করতাম, মানসিক অর্থেও ভাঙচুর করতাম।এখন অবশ্য ভাংচুরটা করি না, রাগটাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এখন বুঝতে পারি রাগটা আমার জন্য ক্ষতিকর, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে আমার কাজের। আগে অনেক বিষয় না বুঝেই রাগ করতাম, এখন বুঝতে পারি বা অপর পক্ষটা বোঝার চেষ্টা করি। আগে শুধু আমাকে দেখতাম কিন্তু এখন অন্য পক্ষকেও দেখার চেষ্টা করি। 

প্রশ্ন: মন খারাপ হয়?

রাহুল আনন্দ: সকলেরই মন খারাপ হয়। কেউ যদি বলে তার মন খারাপ হয় না তাহলে সেটি মিথ্যা বলা হবে। এই সময়টায় আমি কখনও চুপচাপ হয়ে যাই আবার কখনও একটু গভীরে গিয়ে ভাবতে চাই মন কেন খারাপ। তবে বেশিরভাগ সময় আমি আমার শৈশব অথবা কৈশরের সময়টাতে ডুব দেই।

শেয়ার করুন