২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:১২:১৪ পূর্বাহ্ন


আ.লীগ নেতৃত্বাধীন শরিকদের মন ভালো নেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
আ.লীগ নেতৃত্বাধীন শরিকদের মন ভালো নেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে শরিকদের বৈঠক


আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মন ভালো নেই। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের অনেক আস্থাশীল প্রমাণ করেও জাতীয় পার্টি জি এম কাদেরপন্থীরাও ভালো নেই। তবে ক্ষমতার আশে পাশে রাখা হলেও শরিকদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আচরণ আগের মত নেই। আর এনিয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যাথা দেখা যাচ্ছে না, যা শরিকদের আরো অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। 

আসনেও পিছিয়ে

অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দল গঠন করা হয়। এর পাশাপাশি একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন নীতি নিয়ে প্রায় দুই দশক পথ চলছে এই জোট। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা ছয়টি আসনে ছাড় পেলেও এবারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সির্বাচনে মাত্র দুটি আসনে জিতেছেন শরিক দলের প্রার্থীরা। কিন্তু এর আগে বলা হয়ে থাকে বড় ধরনের সমঝোতায় শরিকরা আওয়ামী লীগ থেকে অনেক আসন বাগিয়ে নিয়েছিল শরিকরা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড় পেয়ে ১৪ দলের তিন শরিক। এরা হলো জাসদের তিনজন, ওয়ার্কার্স পার্টির দু’জন এবং জাতীয় পার্টি-জেপির একজন। এরা সবাই নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে জিতেছেন মাত্র দু’জন। এরা হলেন বরিশাল-২ আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বগুড়া-৪ আসন থেকে জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজাউল করিম তানসেন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ভালোভাবে পরাজিত হয়েছেন পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। অন্যদিকে ধরাশায়ী হয়েছেন কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জাসদের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন। ১৪ দলের শরিকদের পরাজয় এখানেই থেমে থাকেনি। নৌকায় ছাড় না পেয়ে একাদশ সংসদের এমপি জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার রাগে- ক্ষোভে তাঁর ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। অন্যদিকে প্রার্থিতা জমা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ওই সংসদের অন্য দুই এমপি চট্টগ্রাম-২ আসনের তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং সাতক্ষীরা-১ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বিষয় নিয়ে শরিকদের মধ্যে নানান ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এখন বিভিন্ন ধরনের শলাপরামর্শে ব্যস্ত কিভাবে পরিস্থিতি সামলে নেয়া যায়। একটি সূত্র জানায় শরিকদের ক্ষোভ ভিন্ন দিকে টার্নও নিতে পারে। 

জাপা’তে চাপা অসন্তোষ

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি। এদলটি এবারে তাদের মতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অনেক দেনদরবারের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে বীরত্বের সাথে এবার ২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী দেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি। অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) পায় দুইটি আসন। এইসব নিয়ে জাপাতেও রাগ অভিমানের শেষ নেই। তবে জাপা’র একটি সূত্র জানায়, জাপা’র ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরতো ন্যূনতম মহানুভূতি নেই-ই এর পাশাপাশি দলকে কিভাবে বিপর্যস্থ করে রাখা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এমন ক্ষোভ থেকেই জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ কখনো নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে না, এমন আশঙ্কা অবাস্তব নয়। এই সংসদ জাতিকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। আবার জিএম কাদের এমপি বলেছেন, সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই সরকার আমাদের দল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা করে।

শেষ কথা.. ক্ষমতার পুরো স্বাদ আ.লীগের প্রাপ্য 

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিনিধির। তারা বলেন, ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ, ১১ দল, জাসদ ও ন্যাপকে নিয়ে । জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পর থেকে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও গড়ে ১৪-১৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে জয়ী হওয়ার পর ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মহাজোট সরকারে ঠাঁইও মিলেছিল শরিক নেতাদের। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে ১৪ দল ও মহাজোট শরিকদের কারও স্থান হয়নি। অভিযোগ করা হয়, এর পর থেকে চলে নানান ধরনের কূটকৌশল শরিকদের কিভাবে দূরে রাখা যায়। তবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা এই প্রতিনিধিকে বলেন, বিষয়টি আসলে এভাবে দেখলে হবে না। তার মতে, মাঠে মুলত প্রধান বিরোধী দল বিএনপিই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। আর এই প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবলোয় বারবার দেখা গেছে আওয়ামী লীগকেই একা ম্যানেজ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন সংকটে পরে তখন পাশে থাকে না ১৪ দলীয় জোট শরিকরা। মাঠে ময়দানে শরিকরা তখন নিজেদেরকে তথাকথিত নিরপেক্ষতার চাদরে মুড়ে নেয়। এটা আওয়ামী লীগকে বড়ই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তাই আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড মনে করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের পাশাপাশি অন্যরা বিশেষ করে জাপাকে আর দয়া দেখানো হবে না। কারণ যুদ্ধে আওয়ামী লীগের সৈনিকরাই নামে, তাই ক্ষমতার পুরো স্বাদ তাদেরই প্রাপ্য।

শেয়ার করুন