২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৬:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করা হচ্ছে অভিযান চালাতে
ট্যাক্স ফাইলিংয়ে আরো সতর্ক হোন
মো. জামান তপন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৯-২০২২
ট্যাক্স ফাইলিংয়ে আরো সতর্ক হোন


আমেরিকায় রাজস্ব আদায়ে আইআরএসের ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে এ খাতে  ৯ বছর মেয়াদি বাজেট অতিরিক্তি ৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। যাতে করে লোকবল বৃদ্ধি ও টোটাল সিস্টেমকে আপগ্রেড করে অত্যাধুনিক করা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ আইআরএসের বাজেট সংকটের কারণে লোকবল পর্যায়ক্রমে হ্রাস পেয়েছে। ২০১০ সালে আইআরএসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৯৪ হাজার, যা ছাঁটাই হতে হতে ২০২১ এসে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজারে। অনেকে মনে করেন, দীর্ঘদিন আইআরএসের বাজেট কমানো এবং লোকবল ছাঁটাইয়ের কারণে রাজস্ব আদায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে আইআরএসের বাজেট প্রায় ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে, যা সংস্থাটির কর্মচারীদের সক্ষমতা হ্রাস করেছে এবং তারা অর্ধশত আগের টেকনোলোজি ব্যবহার করছে। সংস্থাটির কিছু কম্পিউটার এখনো সিওবিওএলেতে চালানো হচ্ছে। যে প্রোগ্রামিং ৬০-এর দশকের। আইআরএসের অফিসিয়াল সূত্র মতে, ২০১০ সাল থেকে বাজেট সংকটের কারণে সংস্থাটির ৩০ শতাংশ এনফোর্সমেন্ট স্টাফ কমানো হয়েছে এবং ধনী করদাতাদের ফাইল অডিট করার হার মারাত্মকভাবে কমেছে। নতুন বিলের মাধ্যমে এ বাজেট বরাদ্দ তা আমূল পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।

ডেমোক্রেটদের নতুন জলবায়ু, স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্যাক্স প্যাকেজ- যা মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন-২০২২ (ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট-২০২২) নামে পরিচিত। এই আইনে ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস)-এর জন্য প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার নতুন তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ক্রমাগতভাবে অনুদানপ্রাপ্ত এজেন্সি কর্মীদের ব্যাকআপ করতে এবং ধনী আমেরিকানদের কাছ থেকে অপরিশোধিত কর সংগ্রহের জন্য আইনপ্রয়োগকারী পদক্ষেপগুলিকে বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হয়। গত ১৬ আগস্ট ২০২২ কংগ্রেসে পাস করা ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট-২০২২ এ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করার পর তা আইনে পরিণত হলো। এ আইন পাসের মাধ্যমে আমেরিকানদের স্বাস্থ্য, এনার্জিসহ বিভিন্ন খাতে পরিবারের ব্যয় হ্রাস পাবে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করতে সহজ হবে। সরকারের আর্থিক ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে এবং বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ন্যায্য কর পরিশোধে সাহায্য করবে। অনেক ডেমোক্রেট মনে করেন এ ঐতিহাসিক আইন পাসের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমেরিকান পরিবারকে অধিকতর সহায়তা প্রদান ও আমেরিকার অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করা সম্ভব হবে। অপরদিকে রক্ষণশীল এবং কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে এ তহবিলকে একটি রাজনৈতিক ফ্ল্যাশ পয়েন্টে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যারা মিথ্যাভাবে দাবি করেছে যে আইআরএস ৮৭ হাজার নতুন এজেন্টের একটি ‘সেনাবাহিনী’ নিয়োগের জন্য অর্থ ব্যবহার করবে, যারা গড় করদাতাদের লক্ষ করবে।

সিনেট ফিন্যান্স কমিটির শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান সেন মাইক ক্ষেপে বলেছেন নতুন তহবিল আমেরিকানদের থেকে ‘আরো বেশি রাজস্ব কমাতে’ ব্যবহার করা হবে। যারা ৪ লাখ ডলারের কম উপার্জন করে তারা ‘সহজ টার্গেটে’ পরিণত হবে। প্রতিনিধি হাউজ সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাককার্থি হাউস বলেছেন, এ অর্থ ‘মধ্যবিত্তদের হয়রানি করতে’ ব্যবহার করা হবে। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইনডিপেনডেন্ট বিজনেস এনফোর্সমেন্ট এই প্রচেষ্টাকে একটি ‘পরোক্ষ কর’ বলে অভিহিত করেছে, যা ছোট ব্যবসার ওপর আরো অডিট এবং পরীক্ষার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব দাবি মিথ্যা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই অর্থ ধনী আমেরিকান এবং বড় করপোরেশনগুলোর ওপর কর আদায়ের ক্ষেত্রে ফোকাস করবে। ট্যাক্স পলিসির পরামর্শদাতা ও বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা নাতাশা শেরিন বলেছেন, যারা বার্ষিক ৪ লাখ ডলারের নিচে আয় করে, তাদের আয়কর অডিট বর্তমান সময়ে যা করা হয় তার চেয়ে খুব বেশি বাড়ানো হবে না, বরং ট্যাক্স প্রদানকারীদের ট্যাক্স ফাইলিংয়ে আরো উন্নয়ন করা হবে। কেননা এ তহবিল আরো লোকবল বাড়াতে সহায়ক হবে। রাজস্ব বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে ১৫ হাজারেরও কম কর্মচারী ছিল। যাদের কর প্রদানকারীদের ৬ মাসে ২০০ মিলিয়ন কলের উত্তর দিতে হতো। অর্থাৎ প্রতি কর্মচারীকে ১৩ হাজার কলের উত্তর দিতে হতো। আইআরএস মনে করে, কর্মচারী বৃদ্ধির ফলে নিয়মিত করদাতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্নআয়ের করদাতাদের সব ফোন কলের উত্তর দেয়া বা সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অফিসের এক তথ্যে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী-কর্মকর্তা কমানোর ফলে সব ধরনের ব্যক্তিগত কর প্রদানকারীর কর প্রদান কমেছে এবং ২ লাখ ডলারের ওপর আয়কর দাতাদের অডিট করার হার মারাত্মভাবে হ্রাস পেয়েছে। আরেক তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ২৫ হাজার ডলার থেকে ২ লাখ ডলার আয়কর প্রদানকারীর ফাইল অডিট করা হয়েছে মাত্র ০.১৭ শতাংশ। আর যারা মিলিয়ন ডলার বা তার অধিক আয়কর প্রদান করেছে, তাদের ফাইল অডিট হয়েছে মাত্র ২.৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৮ সালে প্রোপাবলিকার এক গবেষণা থেকে জানা যায়, খুব নাটকীয়ভাবে ধনীদের ট্যাক্স ফাইলিং অডিট কমেছে আর নিম্নআয়ের মানুষের অডিট অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে যারা আর্নড ইনকাম ট্যাক্স ক্রেডিটসহ অ্যান্টি-প্রোভাটি ট্যাক্স ক্রেডিট সুবিধা পান। বাজেট ও লোকবল কমানোর কারণে আগস্টের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ২০২১ সালের ব্যক্তিগত করদাতার ৯.৭ মিলিয়ন ফাইল আনপ্রসেসড অবস্থায় রয়েছে। ধনীদের কর আদায়ে ট্যাক্স কোডের ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, কংগ্রেস কখনো কখনো উচ্চ অগ্রাধিকারমূলক রাজস্ব আইন দ্রুত অগ্রসর করার জন্য ‘কনসোলিয়েশন’ নামে একটি বিশেষ আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। ১৯৭৪ সালের কংগ্রেসনাল বাজেট অ্যাক্ট দ্বারা তৈরি, কনসোলিয়েশন নির্দিষ্ট ট্যাক্স, খরচ এবং ঋণসীমা আইনের দ্রুত বিবেচনার জন্য অনুমতি দেয়। সিনেটে, রিকনসোলিয়েশন বিলগুলো ফিলিবাস্টারের সাপেক্ষ নয় এবং সংশোধনের সুযোগ সীমিত। এই প্রক্রিয়াটিকে বিতর্কিত বাজেট এবং ট্যাক্সব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য প্রকৃত সুবিধা প্রদান করে।

শেয়ার করুন