২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:২৩:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


হঠাৎই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে জাতীয় পার্টি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
হঠাৎই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে জাতীয় পার্টি জি এম কাদের


সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতির আগামাথা বোঝা যাচ্ছে না। মুখে দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরসহ অন্যরা সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। কিন্তু ওটা শুধু ওই পর্যন্তই। রাজপথে সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে এমন কোনো তৎপরতা নেই, বলা যায় শূন্যের কোঠায় দলটির অবস্থান। দুই-চারটি সভা, যা হয় অনেকটাই ইনডোরের মতো অবস্থা। মিডিয়াতেও কথা বলেন। কিন্তু রাজপথে নেতাকর্মীদের নিয়ে যে একটা কর্মী প্রদর্শনী বা নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ দেওয়া, তাতে তারা নেই। কারণ মাঠের বাইরের রাজনীতিতে বেশ তৎপর দলটি। বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির গতিপথ কী সেটা নিয়ে এখন বিদেশিরা সরব। বিশেষ করে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোট যেভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে, তাতে সব ফোকাস এখন তাদের নিয়ে। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার মধ্যমণি। জাতীয় পার্টি পিটার হাসের সঙ্গে কিন্তু কয়দিন পর পরই সাক্ষাৎ করে আসছে। নিজেদের ভাবনার কথা জানান দিচ্ছে। সর্বশেষ, গত ১৪ আগস্ট সোমবার দুপুরে আবারও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বৈঠক করেন জি এম কাদের। গুলশানে মাশরুর মাওলার বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। 

কিন্তু দলটির মাঠ পর্যায়ের কী অবস্থা, দেশ শাসন করার ইতিহাস ও বড় দলের তকমা থাকলেও মাঠে তাদের বর্তমান কী অবস্থা, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে গত তিন টার্ম সাপোর্ট দেওয়ার পর সেটা কেউই কিন্তু জানে না! তবুও সারাক্ষণ জাতীয় পার্টি গুরুত্বহীন থাকলেও নির্বাচন এলে হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

জাতীয় পার্টি অবশ্য বড় দল, অনেক সমর্থন, এমনকি দেশের কাগজকলমে তারাই এখন প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু বিএনপির অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টিকে পরিকল্পিত ওই স্থান দেওয়া হলেও বিএনপি ইতিমধ্যে প্রমাণ দিয়ে ফেলেছে তাদের সমর্থন কোন পথে। ফলে সে তুলনায় রহস্যজনক অবস্থাতেই দলটি। 

প্রটোকল অনুসারে জাতীয় পার্টি সব বিদেশি পর্যবেক্ষক বা নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গেও সাক্ষাৎ ঘটে। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য দলটির আসলেই কী মেসেজ সেটা এখনো অস্পষ্ট। দলটি কী আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে, নাকি একক নির্বাচন করবে-এ দুই প্রশ্ন তো আছেই, এর বাইরে চলমান রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে নির্বাচনে দলটি যাবে, নাকি বিএনপির মতো তত্ত্বাবধায়কের অধীন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না-এটা ক্লিয়ার করা বাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে একটা আভাস এসেছে, এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আরো খানিকটা দেরি করবে তারা। 

গুঞ্জনটা এখানেই যে, জাতীয় পার্টি সব সময় ক্ষমতার সুঘ্রানে থেকে অভ্যস্ত। এখনো কোন পক্ষ সরকার গঠনের দিকে যাবে, সেটা তারা হয়তো নিরূপণ করতে পারছে না। অন্তত বাংলাদেশের রাজনীতি যখন একেবারেই ওপেন সিক্রেট চলছে কে কোন পক্ষে, কোন দল কোনদিকে। জাতীয় পার্টির এমন রহস্যজনক পথচলার মধ্যে এবার সফরে যাচ্ছেন তারা দিল্লিতে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি আগামী ২১ আগস্ট দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। পরদিন ২২ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা এ তথ্যটি সাংবাদিকদের সঙ্গে শেয়ার করে বলেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে জি এম কাদের দিল্লি সফরে যাচ্ছেন। ২৩ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। মাশরুর মাওলা ছাড়াও পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জি এম কাদেরের সহধর্মিণী শেরিফা কাদের এমপি এই সফরে থাকবেন। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এবার অবশ্য সে তৎপরতা অনেকটাই কম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণে। মার্কিনিরা বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টা সরাসরি তদারকি করছেন, তাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিনিধি আসছেন একের পর এক। কিন্তু ভারতের এমন চুপ থাকাও ভালো ঠেকেনি অনেকের কাছে। শেষ পর্যন্ত অল্প-আধটু করে মুখও খুলতে শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী এ দেশ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অন্তত একাধিকবার অনেকটা নিরপেক্ষভাবেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেখানে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইস্যু দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনে আস্থার কথা জানিয়েছেন প্রকারান্তে। 

এরপরও ভারতের কী মত বাংলাদেশে-এটা জানতে উন্মুখ সবাই। সজাগ দৃষ্টি সেদিকে। এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৫ সদস্যের একটি দল সম্প্রতি ভারত সফর করে গিয়েছেন। ওই সফরে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক  তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জামান এবং দলের সংসদ-সদস্য অ্যারোমা দত্ত। জানা গেছে, ওই সফরে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গেও বৈঠক হয়। 

এবার যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যাচ্ছেন, সেখানে এর শিডিউল অনেকটা ওরকমই। ফলে জাতীয় পার্টি কী মেসেজ সেখান থেকে নিয়ে আসবে, সেদিকে এখন সজাগ দৃষ্টি রাজনৈতিক মহলের।

শেয়ার করুন