২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৩২:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বললেন
জিয়ার ভয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
জিয়ার ভয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন


জিয়ার ভয়ে তো আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল। আমার পাশাপাশি অনেক ছাত্ররা তা-ই করেছিল। যারা সেদিন প্রেসিডেন্ট জিয়ার আগমনে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করেছিল, বক্তব্য দিয়েছিল সেদিন রাতে তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।  কথাগুলো বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে একটি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এঘটনা তুলে ধরেন। তার এই বিশেষ ঘটনাটি বলেছেন দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ এর সঙ্গে । 

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একজন ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও লেখক। ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি কুমিল্লা (উত্তর) জেলা বিএনপির সভাপতি এবং বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। কুমিল্লা-২ আসন থেকে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার জীবনের এমন ঘটনা বলেন এভাবেই..

এটা সবাই জানেন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতাম। ১৯৬৯ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ভু-তত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সে বছরেই আমি কলস্বো প্ল্যান স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যাই এবং ১৯৭৫ সালে ফিরে আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেই। ১৯৭৯তে আমি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে উন্নীত হলাম। সে সময়ে দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি একদিকে ছিলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। এর পাশাপাশি তিনি নিয়ম মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন, এই ইচ্ছা পোষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে গিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন ২৮ অক্টোবর  সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ভিসি তখন জানিয়েছিলেন যে, চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে চত্বরে কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিছু শিক্ষার্থীরা এসে টিএসসি চত্বরের বাইরে পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। জিয়াউর রহমান তাদেরও কাছে গেছেন। শুনেছেন। এটা সম্পর্কে অনেকেই জানেন। শিক্ষার্থীরা এসময় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অনেক দুর্ব্যবহারও করেছেন। কিন্তু এই প্রতিবাদে অংশ নেয়া অনেককে নিয়ে তিনি টিএসসিতে মিলনায়তনেও প্রবেশ করেছেন। সে সময়ে ভিসি জানতেন জিয়াউর রহমান চ্যান্সেলর হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। তাই স্বাগত বক্তব্য রেখেই ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব জিয়াউর রহমানকে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান। এই সময়ে জিয়াউর রহমান জানান যে, তিনি এসেছেন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান বললেন তিনি এসেছেন শিক্ষকদের কথা শুনতে। এমন পরিস্থিতি হবে তা ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব বুঝতে পারেননি। 

এখন পর্যন্ত এই প্রশ্ন করা হয়...

তখন শিক্ষক সমিতির প্রেসিডেন্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক করিম বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান। উনি ছিলেন সিনিয়র শিক্ষক। উনি দেশের বা বিশ্বাবিদ্যালয়ের কোনো সমস্যা নিয়েই কথা বলেননি। বক্তব্য শেষ হবার পর এসময় জিয়াউর রহমান আরেকবার বললেন, তাকে আরো কিছু বলার জন্য আহ্বান জানালেন। কিন্তু এবারো তিনি দেশ ও বিশ্বাবিদ্যালয় ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে কিছু বললেন না। তখন জিয়াউর রহমান আহ্বান জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপেক্ষাকৃত তরুণ শিক্ষকদের দিয়ে বক্তব্য দিতে। দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিয়াউর রহমানের সামেনে কিছু বলার জন্য? এমন প্রশ্নতো এসেই যায়। এখন পর্যন্ত এই প্রশ্ন করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেখানে তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে কেনোইবা আমাকে আহবান জানানো হলো? এটা নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। এটা বলা দরকার। 

জিয়া তরুণ শিক্ষকদের বক্তব্য শুনতে চাইলেন...

আসলেও সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দুইটি দল ছিল। আমাদের শিক্ষক সমিতি, সিনেট ও সিন্ডিকেট...। এসব কিছুতেই দুটি দল ছিল। একটা ছিল আওয়ামী পন্থী যেটা ব্লু বা নীল প্যানেল। অন্যটি হচ্ছে পিংক প্যানেল। এটা ছিল অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। আমি ছিলাম এই অ্যান্টি আওয়ামী পিংক গ্রুপের মেম্বার সেক্রেটারি। আর এই পিংক গ্রুপের আহ্বায়ক ছিল প্রফেসর আহমদ শরিফ। এখন দেখা যাচ্ছে আহমদ শরিফও সিনিয়র অধ্যাপক। কিন্তু জিয়াউর রহমান তো অপেক্ষাকৃত তরুণ শিক্ষকদের বক্তব্য শুনতে চেয়েছেন। এখানে একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখা যাবে তখন নিয়মও ছিল একজন ব্লু প্যানেল থেকে বক্তব্য রাখবেন। এর পর অন্য প্যানেল থেকে। তাহলে এখন হচ্ছে পিংকের প্যানেল। সে হিসেবে পিংক প্যানেল থেকে বক্তব্য তো দেয়ার কথা প্রফেসর আহমদ শরিফকে। তখন এমন পরিস্থিতিতে ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব অধ্যাপক আহমদ শরিফের কাছে জানতে চান তিনি কাকে বক্তব্য দিতে বলবেন। আমাদের সে সময়ের প্যানেলের সিনিয়র শিক্ষক আহমদ শরিফ সাহেব যখন বক্তব্য দিতে পারছে না তাই আমি মেম্বার সেক্রেটারি। তো আমি তো পিংক প্যানেলের সদস্যসচিব। আবার তরুণ শিক্ষক। সে হিসেবেই আমাকে অধ্যাপক আহমদ শরিফ সাহেব কিছু বলার জন্য আহ্বান জানালেন।

জিয়া বললেন-যা বলবেন নির্ভয়ে...

আমি বক্তব্য দিতে যাওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বললেন, যা বলবেন নির্ভয়ে বলবেন। আমি এই সময়ে পাল্টা বক্তব্য দিয়েই শুরু করলাম। বললাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ বা পদোন্নতি বা তাকে বরখাস্ত করা কোনো সময়েই চ্যান্সেলরের নেই। তাই আমি তো নির্ভয়েই বলবো। এটা তো জানেন যে, জিয়াউর রহমান তো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর।

বললাম সামরিক আইন কত দিন থাকবে...

যাক আমি বাংলাদেশের সম্পর্কে, সামরিক আইন সম্পর্কে, সে সময়ের প্রশাসন সম্পর্কে একদম সরাসরি প্রতিবাদ করেই সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে বক্তব্য রাখি। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠিন ভাষায়..আমি বলেছি আপনি জিয়াউর রহমান। মেজর জিয়াউর রহমান হিসেবে যখন যুদ্ধে যান, পরিবার-পরিজনেরও খবর রাখেন নাই। আপনি জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে গেছেন। আপনি জিয়া কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে, আপনি কোনোদিন চিন্তা করেছেন এদেশে কোনোদিন সামরিক আইন হবে। আপনি কঠোর ভাষায় এই সামরিক আইনের সমালোচনা করেই বললাম এটা (সামরিক আইন) কত দিন থাকবে? আমি এসময়ে সরাসরি জিয়াউর রহমানের বেশকিছু বিষয় নিয়ে কঠোর সমালোচনা করি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করলাম। আমি বললাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা প্রসঙ্গে। বললাম, এর আগে মুজিববাদী ও বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রলীগের মধ্যে প্রতিদিনই মারামারি গ-গোল হতো। আমি এ প্রসঙ্গ তুললে জিয়াউর রহমান এ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। 

জানতে চাইলাম-ডাকসু নির্বাচন দেন না কেন...

আমি এ প্রসঙ্গে পরিষ্কারই বললাম যে, আমাদের এই অসুবিধা আছে। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে গিয়ে সরাসরি জিয়াউর রহমানকে বললাম, আপনি জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। তো ডাকসু নির্বাচন দেন না কেন? ডাকসু ভিপি কি কখনো প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করেছে? তাহলে নির্বাচন দেন না কেন? এই জায়গায় জিয়াউর রহমান জবাব দিতে পারেননি। এখানে জবাব দিতে না পারলেও পরবর্তীতে তিনি ক্যাবিনেটে উঠিয়ে এক মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে বললাম, স্বাধীনতার পরে হঠাৎ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষক সংখ্যাও বাড়ানো হয়নি। আবার ক্লাসরুমও বাড়ানো হয়নি। শিক্ষকদের থাকার জায়গাও করা হয়নি। একটা আবাসিক ভবনও নির্মাণ করা হয়নি। আজকে থার্ড ইয়ারে উঠেও শিক্ষার্থীরা হলে সিট পায় না। অথচ একজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েই সিট পাওয়ার কথা। যা আমরা আগে পেয়েছি। আর এসব কারণে ছাত্ররা অস্ত্র হাতে ধরে। কোনো সরকারই চিন্তা করেনি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আসন বাড়িয়ে দেয়া হলো কিন্তু বাকিগুলো কি সমাধান হবে তা ভাবা হয়নি। ...এভাবে ১৫ মিনিট কথা বলার পর থেমে যাই। তিনি আমাকে আরো কিছু বলার জন্য বলতে বলেন। আমি আরো ১৫ মিনিট বললাম। কিন্তু আমি দেখলাম, আধা ঘণ্টা ধরে বক্তব্য রাখার পর তো একটা ভদ্রতা আছে..তাই নিজেই থেমে গেলাম। কিন্তু জিয়াউর রহমান আরো ১৫ মিনিট বলতে বললেন। জিয়াউর রহমান বললেন আপনি বলছেন। আর কারো বলার দরকার নেই। আপনি আরো বলেন। এভাবে মোট প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তব্য রাখলাম জাতি সম্পর্কে, দেশ সম্পর্কে। 

জিয়া বললেন-ক্যাম্পাসে অস্ত্র আসে কীভাবে?  

আমি বক্তব্য রেখে নেমে যাবার সময় জিয়াউর রহমান বললেন, আসেন..আপনি অনেক প্রশ্ন করেছেন। অনেক উত্তরও দিয়েছেন। আমাকেই আপনার প্রশ্ন করা দরকার। আপনি প্রশ্ন করেছেন, উত্তর দিয়েছেন। আপনি প্রশ্ন করেছেন, কিন্তু উত্তর পাননি। কিন্তু আপনারা তো দেশ ও জাতি সম্পর্কে বেশি জানেন, বোঝেন। আপনাদের চেয়ে বেশি জানবে কে? উনি এভাবে আমাকে ৪৫ জেরা করেছেন। একটা জেরা ছিল এমন...বললেন আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাতে আসেন শিক্ষক মানুষ। ছাত্ররা পড়াশোনা করতে আসে। আর কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছে। এখানে অস্ত্রের জোগান আসে কীভাবে? জিয়াউর রহমান এসময়ে আমার বক্তব্যে উদ্ধৃতি দিয়েই বলেন, আপনি বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি আছে। কিন্তু এটা ঢুকছে কীভাবে? চ্যান্সেলর জিয়াউর রহমানের এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি কি দিবো? সারা হলরুম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। এর আগে ডাকসু নির্বাচনের কথা বললে পুরো হল করতালি দিয়ে আমাকে অভিবাদন জানায়। কিন্তু জিয়াউর রহমানের এমন প্রশ্নের উত্তরে কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। এ সময়ে একটা জিনিস লক্ষ করলাম, যা বলতে পারি যে আল্লাহর রহমতেই আমার মধ্যে একটা উত্তর চলে আসে। আমি এমন প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে বললাম, মাননীয় চ্যান্সেলর হ্যাঁ.. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র আছে। আমি বক্তব্যেই বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি আসে কীভাবে? এই অস্ত্র হয় আমাদের গাজীপুরের অস্ত্র কারখানায়। না হয় বিদেশ থেকে আমদানি হয়। এসব অস্ত্র তো আসে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য। এসব অস্ত্র নিউমার্কেট বা চকবাজার কোথাও বিক্রি হয় না। এই অস্ত্র কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে? যে অস্ত্র সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আসে, তা বাজারে বিক্রি হয় না। কিন্তু সে অস্ত্র কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে? তার জবাব কি দেবেন দেশের প্রেসিডেন্ট। তার জবাব কি দেবেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক? তার জবাব দি দেবেন দেশের সেনাবাহিনী প্রধান। নাকি জবাব দিতে হবে আমার মতো একজন নিরীহ শিক্ষককে? আমার এমন উত্তরের ঠিক এই জায়গায় জিয়াউর রহমান আমার প্রতি ভীষণ কনভিন্স হয়ে গেল। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিসহ সেসময়ে সেই হলরুমে সব শিক্ষক আমাকে এমনভাবে ধরলো যে আমি যেন জিয়াউর রহমানকে ভীষণভাবে ক্ষেপিয়ে দিয়েছি। ..যে কারণে আমার পাশাপাশি সেসময়ে যারা জিয়াউর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আসায় প্রতিবাদ করেছিল তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা সব্বাই আমাকে পরামর্শ দেন যেন আমি আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাই।  কারণ সবাই ধরে নিয়েছে যে আমার বিরুদ্ধে একটা অ্যাকশন হবেই।

ঢাবির প্রোডাক্ট দুর্নীতে নিমজ্জিত হয় কীভাবে...?

এছাড়া আমি আরো অনেক জেরার মুখে পড়ি জিয়াউর রহমানের। তিনি জানতে চাইলেন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই বর্তমানে প্রশাসনে বড় বড় পদে আসীন। সচিব হচ্ছেন। বড় বড় ব্যবসা করেন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়তো ১০ ভাগ এমন বড় পদে আসীন হবে। তখন অবশ্যই সেই অবস্থাই ছিল। জিয়াউর রহমান এসব কথা বলে জানতে চাইলেন এই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া প্রোডাক্ট কি করে দুর্নীতি করে? কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রোডাক্ট দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়?

জিয়াউর রহমানের এমন প্রশ্নের উত্তর সে সময়ে দেয়ারটা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তখনো আমি বললাম জিয়াউর রহমানকে উদ্দেশ্য করে মাননীয় চ্যান্সেলর বলেই সম্বোধন করি। আমি জিয়াউর রহমানকে প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করিনি।  আমি জিয়াউর রহমানকে উদ্দেশ্য করেই বললাম মাননীয় চ্যান্সেলর এটা একটা আপনি খুব যৌক্তিক প্রশ্ন করেছেন। তাকে বললাম এই যে, আমি জিওলজি বিভাগের শিক্ষক। আমি জিওলজি বিভাগের বিভিন্ন পার্ট শিক্ষা দান করাই। কিন্তু এই শিক্ষা কার্যক্রমের অনার্স বা মাস্টার্সের কোথাও কিন্তু চরিত্র গঠনের সিলেবাস নেই। এই ছাত্রদের চরিত্রগত শিক্ষার পাশাপাশি সততা পরিবারের মাঝ থেকেই আসে। সেটা আসে প্রাইমারি স্কুল থেকেই। আপনি জানেন মাননীয় চ্যান্সেলর (জিয়াউর রহমান) এই প্রাইমারি স্কুলের বেশির ভাগ টিনের ঘরের। ভাঙা অবস্থায় আছে। এসবের অনেকখানেই মাটির মধ্যে বসে লেখাপড়া করে। তার পর আসে হাইস্কুলে। এর পর আসে কলেজে। তার পর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের এখানে চার বছর পড়েই চরিত্র গঠন হবে?  নাকি সেই জন্ম থেকে শুরু করে ওই কলেজ পর্যন্ত পার করেছে ঠিক সময়টাতেই চরিত্র গঠন হবে?  তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সেই প্রাইমারি শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চরিত্র গঠনের কোনো গাইডলাইন আমরা শিখাই নাই। অতএর একজন জিওলজি বা পলিটিক্যাল সায়েন্স বা অর্থনীতির ছাত্র প্রথম শ্রেণি পেয়ে চাকরিতে গেল। কিন্তু সেই পরিবেশে সে কি করবে তার কিন্তু কোনো শিক্ষা অনার্স বা মাস্টার্সে ছিল না। তাই এটার জবাব দিতে পারবো না। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে নীতি বা চরিত্র গঠনের ব্যাপারে প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারি বা বিশ্ববিদ্যারয় পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম বা পাঠ্যপুস্তকে সিলেবাসের কোথাও নেই।

সবাই ধরে নিয়েছে বিপদ নেমে আসছেই...

এরকমভাবে আরো অনেক প্রশ্ন করা হয়েছে। এভাবে জিয়াউর রহমানের একের পর এক জেরাকে আমার সহকর্মী হতে সবাই ধরে নিয়েছে আমার ওপর বিপদ নেমে আসছেই। এ কারণে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছেড়ে দূরে কোথায় থাকার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে ছাত্রদের মধ্যে যারা গণ্ডগোল করেছিল, প্রতিবাদ করেছিল তাদেরও আত্মগোপনে যেতে বলা হয় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। ছাত্রদের বলা হলো আজকে (ঐ ঘটনার দিন) তোমরা হলে থেকো না। শিক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বললেন যে আজ রাতে হলে হলে তল্লাশি হবে। আর আমাকে সব শিক্ষকই বললেন যে, আমি যেন এখনই খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করি। এমন অবস্থায় আর কি করা। তখন আমি আমার একটি পাবলিক গাড়ি ছিল, যা নিজে চালাই, সেটা নিয়ে এক আত্মগোপনে চলে গেলাম। বলা যায়, নিরুদ্দেশ হয়ে গেলাম।

এর পরের ঘটনা তো অন্যরকম। চলছে আমার আত্মগোপনের পর্যায়। এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার এক আত্মীয়ের বাসায় রাতযাপন করার সিদ্ধান্ত নেই। পরে আমাকে আজকে যে ড. মঈন খান আছেন তার বাবা মোমেন খান জিয়াউর রহমানের প্রথম ফুড অ্যাডভাইজর ছিলেন। পরবর্তীতে যিনি খাদ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। এই মোমেন খানের সঙ্গে আমার একটা পারিবারিক সম্পর্ক হয়েছিল, লন্ডনে যখন ছিলাম। লন্ডনে যখন তিনি যে বাড়িতে উঠতেন তখন সেই বাড়িটা ছিল উনার এক আত্মীয়ের। আর আমি লন্ডনের সেই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। আর উনার ছেলেও লেখাপড়া করেন। কিন্তু লন্ডন থেকে দূরে। মইন খান এসে মাঝে মধ্যে মোমেন খান সাহেবকে সঙ্গ দিতেন। যতবারই মোমেন খান এসেছিলেন, ততবারই মঈন খান সঙ্গ দিতেন। আর বর্তমানে ড. মঈন খান আর আমি তো একই ব্যাচের ছিলাম। সে ছিল পদার্থবিজ্ঞানের আর আমি ভূ-তত্ত্বে। আর এই বিভাগও ছিল পাশাপাশি। আর আমার সঙ্গে আগেই পরিচয় ছিল। আমার তো তার সঙ্গে আগেই পরিচয় ছিল। সেখানেই মোমেন খানের সঙ্গে আমার খুব আন্তরিক সম্পর্ক হয়ে যায়। আমার স্ত্রী ছিলেন আমার সঙ্গে লন্ডনে। উনি আমার স্ত্রীকে অনেক স্নেহ করতেন। মেয়ের মতো স্নেহ করতে তিনি। আমি যখন বাংলাদেশে আসি তখন উনার গাড়ি দিয়ে আমাকে রিসিভ করে নিয়ে আসা হয়। এমনই একটা সম্পর্ক। আর ঘটনাচক্রে ঐদিন মোমেন খান সাহেবও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে টিএসসিতে ছিলেন, যা পরে জেনেছিলাম এবং জিয়াউর রহমান ক্যাবিনেটে এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন এবং এক মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দেয়ার নির্দেশ দেন। এখানে অনেকেরই জেনে রাখা দরকার যে, উনি টিএসসিতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা আমার মুখ থেকে শোনেন এবং ক্যাবিনেটে এসব নিয়ে আলোচনা তোলেন। এই সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি হল নির্মাণের ঘোষণা দেন। একটি হলো ছাত্রীদের জন্য শামসুন নাহার হল আর দুইটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান হল। আর অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট নির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি। আজকের এই শামসুন নাহার হলটি জিয়াউর রহমানের অনুদানের হল। আর এসব নির্মাণের ব্যাপারেই আমার দেয়ার বক্তব্যের পরই তিনি দেন। এজন্য পরবর্তীতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছি। এসব নিয়ে ক্যাবিনেটের এক বৈঠকে আলাপ করতে করতে সে সময় জিয়াউর রহমান সে সময়ে তার শিক্ষা উপদেষ্টা সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের কাছে জানতে চান-আপনি ডাকসু নির্বাচন দেন না কেন? কিন্তু সৈয়দ আলী আহসান সাহেব কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তখন ক্যাবিনেট বৈঠকে জিয়াউর রহমান বলতে থাকেন যে, আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গিয়েছিলাম। এখানে উল্লেখ্য যে, জিয়াউর রহমান কিন্তু সৈয়দ আলী আহসানকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাননি। কারণ তিনি জানতেন সৈয়দ আলী আহসানের উপস্থিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষকরা মেনে নেবেন না। তো জিয়াউর রহমান বলতে লাগলেন ক্যাবিনেটের বৈঠকে। জিয়াউর রহমান বললেন, আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন তরুণ শিক্ষক অনেক জ্ঞান দিয়েছেন। অনেক তথ্য দিয়েছেন তিনি। এই সময়ে জিয়াউর রহমান জানতে চান কেন এগুলো এতোদিন ক্যাবিনেটে আসেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সমস্যা সমাধানে কোনো তৎপরতা নেই? জানতে চান কোন ডাকসু নির্বাচন দেন না? এসব কথা বলে জিয়াউর রহমান তখন বলেন সেই তরুণ শিক্ষককে আপনারা চেনেন নাকি? নাম তো ইতিমধ্যে আপনারা জেনে যাবেন? তখন সেখানে উপস্থিত মোমেন খান সাহেব অন স্পট বলে ফেললেন সে তো আমার ছেলের মতো। একথা শুনে জিয়াউর রহমান বলেন, ও তাহলে তো চমৎকার, ভালো হয়েছে.. আমার সঙ্গে কথা বলে যাবেন কিন্তু মোমেন সাহেব...। এর পর কথা হলে জিয়াউর রহমান মোমেন সাহেবকে বললেন, ওকে নিয়ে আসেন আমার কাছে।

শুরু হলো আমাকে খোঁজাখুঁজি

ব্যস শুরু হলো আমাকে খোঁজাখুঁজি। মোমেন খান সাহেব বারবার আমার বাসায় ফোন করে। তো আমার স্ত্রী ফোনে এটা সেটা বলে আর কি..বলে না আসে নাই এখনো..এই চলে আসবে..এই আর কি..। দুই দিন পর মোমেন সাহেব রাগ করে বলেন, আমার স্ত্রীর কাছে জানতে চান এই কি হয়েছে কই সে..রাতে আসেনি? কেন আসেনি? গত রাতেইও আসেনি কেন আসে না, এসব আরকি..। আর এদিকে সমস্যা হচ্ছে আমার স্ত্রীকে কিন্তু এসব কিছুই জানাইনি। ফলে মোমেন খান সাহেবকে আমার স্ত্রী ঠিকভাব বলতে পারছে কেন আসছে না বাসায়..কি কারণ..আমি তো আসলে ঢাকাতেই একজন আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে আছি। এভাবে বারবার জিজ্ঞাসার পর আমার স্ত্রীকে মোমেন খান সাহেব বিস্তারিক জানান। আমার স্ত্রীকে বলা হয় যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো ওকে খুঁজছেন..। আমার তো একটা দায়িত্ব হয়ে গেছে মোশারফকে নিয়ে যাওয়ার। মোমেন সাহেব তখন আমার স্ত্রীর কাছে আমি যে বাসায় ছিলাম, তার ফোন নম্বরটা চাইলেন। এই জায়গায় আমার স্ত্রী বাধ্য হয়ে ফোন নম্বরটা তাকে দিয়ে দেন। আর এদিকে আমার স্ত্রী তো আসলে এতো সব কিছু জানেও না। আমিও বলি নাই। 

যাক, আমার স্ত্রীর থেকে ফোন নম্বরটা নিয়েই মোমেন সাহেব আমাকে ফোন করেন।  ফোনে আমাকে পেয়েই রাগারাগি। এই কি হয়েছে..বাসায় থাকো না কেন?..আমি তখন বললাম মোমেন সাহেবকে..। বললাম কি হয়েছে জানেন না আপনি তো সেদিন টিএসসিতেই ছিলেন? আমি সেদিন বক্তৃতা দেয়ার পর সবাই আশঙ্কা করেছে যে, আমার ওপর কঠোর ব্যবস্থ নেওয়া হবে। তখন মোমেন সাহেব বললেন তো কি হয়েছে? তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? ছাত্ররা যে প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করেছে-এটা সেটা করেছে, কই তিনি কি কোনো ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন? ব্যবস্থা নিয়েছেন? আর তোমারে কি লোক পাঠিয়ে অ্যারেস্ট করছে?  আমি বললাম, না তাতো হয়নি। তাহলে তুমি কীসের ভয়ে আন্ডার গ্রাউন্ডে গেছো?-জানতে চাইলেন মোমেন সাহেব। ফোনে এই সময় মোমেন সাহেব আমাকে তার বাসায় যেতে বললেন। যাক বাসায় যাওয়ার পর উনি বললেন, তোমাকে তো প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খুঁজছেন। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাকে খুঁজে বের করতে। আমি তো তিনদিন ধরে তোমার কোনো হদিসই পাচ্ছি না..যাক আমাকে বাসায় পেয়ে আমার সামনেই সঙ্গে সঙ্গেই মোমেন সাহেব লাল টেলিফোনে উনাকে (প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে) ফোন করলেন। জিয়াউর রহমান তখন আমাকে তার বাসায় নিয়ে আসতে বলেন পরের দিন শুক্রবারে। আর জিয়াউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন ২৮ অক্টোবর  সোমবার। 

জিয়া বললেন-পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?

বাসায় ঢুকতেই তখন প্রথমেই জিয়াউর রহমান বললেন.. ইউ হ্যাভ ফায়ার অন ইউ..(তোমার ভেতরে আগুন আছে)। আমাকে সাহস দিলো। আমি তো মনে করছি আমাকে গালি দিবো..আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক না করে বুকেই চাপ দিলো..জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ডাইরেক্ট কথাবার্তার শুরুই ছিল ‘ইউ হ্যাভ ফায়ার অন ইউ..’। এরপর জিয়াউর আমার সঙ্গে বসে বললেন, আমার ধারণা ছিল না যে বাংলাদেশে আমার সামনে কেউ এভাবে সাহস করে কথা বলবে। আপনি যে বক্তব্য রেখেছেন, কেউ এভাবে সাহস করে বলবে তা ধারণা ছিল না..এখন পর্যন্ত আমার সামনে এভাবে কেউ বক্তব্য রাখতেও পারেনি..আমি বললাম, স্যার আমি তো বক্তৃতার প্রথমেই বলেছি যে, আপনি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না। এটা শুনে জিয়াউর রহমান পাল্টা বললেন.. কেন আপনি তো বলে আমার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন..। আমি জানতে চাইলাম, স্যার এটা আপনি কীভাবে জেনেছেন? জিয়াউর রহমান বললেন..এই যে মোমিন খান সাহেব বলছে আপনাকে তিনদিন ধরে খুঁইজ্যা পায় না। এর পর অনেক কথাবার্তা হলো। তার শেষ কথা হলো- আপনি দেশ ও জাতি সম্পর্কে অনেক চিন্তা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভিস দিচ্ছেন ভালো কথা..এখন দেখেন জাতির জন্য কিছু করা যায় কি-না..এর পর তিনি আমাকে ইউএনও প্রতিনিধিদলে পাঠাইলেন। সেখান থেকে ডেকে এনে বিএনপি গঠন করা হলে তার প্রথম কমিটিতে আমার অজান্তেই ছাত্রবিষয়ক করেন। এই যে শুরু হয়েছে..আমি অধ্যাপক থেকে রাজনীতিবিদ..এটাই আমার রাজনৈতিক জীবনের বড় ঘটনা।

শেয়ার করুন