২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:০৩:২১ পূর্বাহ্ন


জ্বলছে মিয়ানমার : উত্তেজনার পারদ বাংলাদেশে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
জ্বলছে মিয়ানমার : উত্তেজনার পারদ বাংলাদেশে বাংলাদেশে আসা আশ্রয় প্রার্থীরা


মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের উত্তাপ সীমানা পেড়িয়ে আচড় লেগেছে বাংলাদেশে। ওই উত্তাপের আঁচ লেগেছে সীমান্তবর্তী ভারতেও। যার রেশ ধরে কয়েক দিন আগে ঢাকা ঘুরে গেলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সফরটা এমন এক সময় করেছেন তিনি যাবার পরপরই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন দিনের ভারত সফর শুরুর কথা রয়েছে। তবে সফরসূচিতে কী ছিল সেটা জানা না গেলেও মিয়ানমারের ইস্যুটা যে বেশ জোড়ালো ছিল সেটা অনুমেয়। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এখনো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে বৈঠক চূড়ান্ত হয়নি।

সংঘর্ষের সূত্রপাত 

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। গত অক্টোবর থেকে রাখাইন প্রদেশে জান্তার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি জোট। আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি জোটটির তিন সদস্য। আরাকান আর্মি জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। 

বেশকিছুদিন থেকেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংডুতে জান্তার বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তীব্র সংঘাত চলছে। উত্তপ্ত ওই সংঘাতে ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখাকালীন পর্যন্ত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশসহ (বিজিপি) আরও কয়েকটি সরকারি বাহিনীর অন্তত ২৬৪ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। 

এদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় এসেছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। একই সময়ে মিয়ানমারের থেকে আসা মর্টার শেলে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত দুজন নিহত হয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে ওই নিহত হওয়ার ঘঠনা। নিহত নারী জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫)। আর রোহিঙ্গা ব্যক্তির নাম নবী হোছেন (৭০)। 

এদিকে তুমব্রু সীমান্তের তিনটি গ্রাম এখনো মানবশূন্য রয়েছে বলে খবর বেড়িয়েছে। চলমান অস্থিরতায় ঘুমধুম ছয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এছাড়া সীমান্তে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন। তিনি জানান, সীমান্ত ঘেষা গ্রামের লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ আতঙ্কিত মানুষ তাদের নিজ নিজ আত্মীয়ের বাসায় চলে গেছে। 

ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত তলব 

মিয়ানমারের সীমান্তের ওপার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের বিমান বাহিনী যাতে বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম না করে সে ব্যাপারেও কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি সোমবারও থেমে থেমে সীমান্তের ওপার থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সবমিলিয়ে রাখাইনের দুই পক্ষের সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। 

আবারও মর্টার শেলের আঘাত 

৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠীর তুমুল লড়াই চলছে। এর মধ্যে কোন কোন সীমান্ত শহর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। আরাকান আর্মির সাথে টিকতে না পেরে এরই মধ্যে গত দু’দিনে ২৬৪ জন বিজিপি’র সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি তাদের আশ্রয় দিয়েছে। 

এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবারও ওপার থেকে এপারে মর্টারশেল, বোমা এসে পড়েছে একাধিক বার। ঘুমধুম ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজারসংলগ্ন ছৈয়দ নুরের বসতঘরে একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে ঘরটির জানালা ভেঙে গেছে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান, রাতভর সীমান্তের মধ্যে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছি। গ্রামবাসীদের মধ্যে খুবই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সপরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। মর্টারশেল পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, এক ব্যক্তির বাসায় মর্টাশেল পড়েছে শুনে আমরা সেখানে গিয়েছি। 

এদিকে, ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকে নিজ বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাসায় থাকছেন। গ্রামের দোকানগুলোতে তালা ঝুলছে। 

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ তথ্যমতে, ২৬৪ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে শুধু বিজিপি সদস্য নন, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস সদস্য ও আহত মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিক আছেন। মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু পয়েন্ট পরির্দশন করে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে যান ডিসি ও পুলিশ সুপার। পরে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে নিহত জলপাইতলী এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমবেদনা জানান ডিসি। সেই সঙ্গে প্রশাসনে পক্ষ থেকে হোসনে আরার পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন। পরির্দশন শেষে সার্বিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক। 

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত জনগণকে অনুরোধ করছি নিরাপদে আশ্রয়ে আসার জন্য। সবাই যেন কয়েকটা দিন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে এটা আমার অনুরোধ। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে কয়েকদিন আগে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। 

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, আমরা সবাই একসাথে কাজ করছি। কোন ধরনের অনুপ্রবেশ যেন ঘটতে না পারে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। এলাকার লোকরা যাতে আতঙ্কিত না হয় এজন্য আমরা সবাইকে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে বলে বার্তা দিচ্ছি । 

কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে গত বছর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) লড়াই চলছে। মাঝে কিছুদিন উত্তেজনা কমে এলেও সপ্তাহ ধরে আরও দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় মাঝেমধ্যে মর্টারশেল ও গুলি বাংলাদেশে এসে পড়ছে। 

মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও বিদ্রোহীদের চলমান সংঘর্ষের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশেও। এ নিয়ে সীমান্তের পাশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য ধারণের নির্দেশ 

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনুপ্রবেশের ঘটনার মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে ধৈর্য ধারণ করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মায়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সীমান্তের এপারে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বিষয়টি সংসদকে অবহিত করেন। 

দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে ‘ধৈর্য ধরার নির্দেশ’ প্রধানমন্ত্রীর 

“মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা আলোচনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং আমরা সে আলোচনা করার জন্য তাদেরকে ফেরত পাঠানো বা ফেরত যদি পাঠানো না যায় অন্যান্য ব্যবস্থা কী করা যায় সেটাও হবে।” সার্বিক বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা নির্দেশ দিয়েছেন সেটা হচ্ছে আমাদের যে সশস্ত্রবাহিনী বা প্যারা মিলিটারি বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ডারে স্কুল বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “মর্টার শেলে আমাদের একজন ও ওদের একজন মারা গেছে এটাও সঠিক। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

বিএনপির বিবৃতি 

মিয়ানমারের ঘঠনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ এই অবস্থায় অনির্বাচিত আওয়ামী ডামি সরকারের অন্তঃসারশূন্য বক্তব্য এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানানো ও কার্যকর রাজনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার পরিবর্তে শুধু ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের অবস্থান গ্রহণ নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকার সীমান্ত অরক্ষিত রেখে অতীতের ন্যায় অন্তঃসারশূন্য যে বক্তব্য দিচ্ছে তাতে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বড় ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদিদের তুমুল গোলাগুলি-সংঘর্ষ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। দুপক্ষের ছোড়া গুলি, মর্টার শেল, বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চারের খোল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এতে প্রতিদিনই বাংলাদেশের ভেতরে হতাহত, ঘরবাড়ি দগ্ধ হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত এলাকা ছাড়ছেন স্থানীয়রা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) শতাধিক সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ভিড় জমাচ্ছে শত শত নাগরিক যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে। 

স্থায়ী কমিটি মনে করে, জনসমর্থনহীন সরকার সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশের সীমান্ত ও স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ না নিয়ে ডামি সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বলা হয়, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অনির্বাচিত বলেই সাহস করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। আজকে অন্য দেশের দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির সম্মুখীন, স্বাধীনতা যখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে, তখন শেখ হাসিনার ডামি সরকার কিছুই করতে পারছে না। তারা জনগণকে বন্দুকের মুখে জিম্মি করে অন্যের সেবাদাসত্ব করতে বাধ্য হচ্ছে বলেই এই অবস্থা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতালিপ্সা আর অপরিণামদর্শিতার কারণেই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এক বড় সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই দীর্ঘকাল অবস্থান একটি নতুন মানবিক সংকট হিসেবে বিদ্যমান।’ বিবৃতিতে নীতিনির্ধারকরা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকার ক্রমাগত কূটনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। মেরুদ-হীন এই নতজানু সরকারের কারণেই জাতীয় সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে এবং জননিরাপত্তা অরক্ষিত। আওয়ামী ডামি সরকার কেবল দেশেবিরোধী মত দমন করতেই পারঙ্গম। অথচ সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন করে দেশের মানুষকে হত্যা করা হলেও ভীত-পরনির্ভরশীল সরকার বলছে ধৈর্য ধরতে হবে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের দায়িত্ব কি কেবল বাংলাদেশিদের লাশ গ্রহণ করা?’ 

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার শাসনামলে তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে মায়ানমারের তৎকালীন শাসকশ্রেণি সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ তারা যেকোনো আগ্রাসী আচরণের উপযুক্ত জবাব দিতে সদাপ্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান গণধিকৃত সরকারের সেই সক্ষমতা নেই বলেই সীমান্তে অন্যায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। এতে আরও বলা হয়, ‘বিএনপির শাসনামলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েক লাখ মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শহীদ জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়, সাহসী ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অতিদ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হয়।’ 

শেয়ার করুন