২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:১৪:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


কুরআনের শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেই সরকারের
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
কুরআনের শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেই সরকারের


দেশে কুরআনের শিক্ষাকে সর্বস্তরে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেই। কুরআনের শাশ্বত শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরে জনপ্রিয় ও সহজবোধ্য করতে হবে। আর এজন্য জাতীয় কুরআন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা ধারায় কুরআন শিক্ষা সম্প্রসারণে এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, কওমি বোর্ড (বেফাক ও অন্যান্য), আহলে হাদিস শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের মাঝে কুরআনের ভাষাকে সহজবোধ্য ও আনন্দপাঠে পরিণত করতে কুরআন-সহায়িকা পুস্তক প্রণয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ১৯ মার্চ রবিবার “কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ” শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় এমন বক্তব্য উঠে আসে। পুরো মানবজাতির কাছে নাযিলকৃত কুরআন কারীমের ভাব-ভাষা ও শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরে সহজবোধ্য করে ছড়িয়ে দিতে কুরআন একাডেমি ফাউন্ডেশন (কাফ) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. এম. শমশের আলী। বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দীন জাফরী উক্ত অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কুরআন একাডেমি ফাউন্ডেশন (কাফ)-এর পরিচালক আবু সাঈদ খান। 

আবু সাঈদ খান তার মূল প্রবন্ধে বলেন, কুরআন-কেন্দ্রিক প্রচুর আত্ম-জিজ্ঞাসা, আত্ম-সমালোচনার মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠীর আত্মোন্নয়নে কার্যকরি পথ-পন্থা অন্বেষণ এই নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য। সেসাথে কতিপয় প্রস্তাবনা পেশের মাধ্যমে কুরআনের শিক্ষা, মর্মকে কীভাবে সমাজের সম্ভাব্য অধিক সংখ্যক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায়, এবং সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে কীভাবে মানবজাতি সর্বোচ্চ লাভবান হতে পারে তার একটি টেকসই প্রচেষ্টা অন্বেষণ। সেই প্রচেষ্টার অপরিহার্য প্রাথমিক শর্তই হল, কুরআনকে জানা, কুরআনের বাণীগুলোকে সমাজের সর্বস্তরে জনপ্রিয়করণ, অবারিতকরণ ও উন্মুক্তকরণ যাতে করে এমন একটি সমাজব্যবস্থা তৈরি হয়, যেখানে মানুষ তাদের কথোপকথনে সচরাচর কুরআন প্রয়োগ করে কথা বলবে; কুরআনের আয়াত দিয়ে পরস্পরকে সংশোধন, সতর্ক করবে এবং দীনের নামে কোন মনগড়া কথা বলবে না। এটা অর্জিত হবে কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ (Socialization of Quranic Education) বা কুরআন পাঠ আন্দোলনের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানবসভ্যতায় পুরো কুরআনের অবমুক্তকরণ হবে, কুরআনের বাণী এবং মর্ম কাগজের পাতায় আর বন্দী থাকবে না। আয়োজনটির অন্যতম আর একটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য হল, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান নানা মতাদর্শগত বিভেদ সত্ত্বেও যেন বিভিন্ন ধ্যান-ধারণার প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃত্বের মধ্যে কুরআন শিক্ষার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার খাতিরে বারবার বসার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে তার একটি নমুনা স্থাপন করা। রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন শ্রেণির উদ্দেশ্যে প্রণীত সুনির্দিষ্ট নিম্বলিখিত প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে এবং মূল প্রবন্ধের উপর আলোচকগণ মতবিনিময় করেন।

ডক্টর এম. শমশের আলী বলেন, কুরআন হুদাল্লিন্নাছ, শুধু হুদাল্লিল মুত্তাক্বীন নয়। কুরআনের শিক্ষা হলো ইউনিভার্সালিটি। পুরো মানবজাতি একটা সিঙ্গেল নেশন। কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ বলতে শুধু মুসলিম সমাজ নয়, পুরো মানব সমাজকে ধরতে হবে। তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে, কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ শিক্ষাব্যবস্থার গোড়া থেকে চালু করতে হবে। তিনি এক ভাষার সাথে অন্য ভাষার শব্দের উচ্চারণ ও অর্থগত মিলের উদাহরণ উল্লেখ করে আরবি ভাষা রপ্ত করার গুরুত্ব আলোচনা করেন। বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে কুরআনের নির্দেশনার বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন। ড. শমশের সামাজিকীকরণের বিষয়ে আয়াত বুঝা ও ইউনিটির উপর জোর দেন। তিনি কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ বিষয়ে মিডিয়ায় সম্প্রচারেরও পরামর্শ দেন।

মূল প্রবন্ধের উপর প্রথমেই পর্যালোচনা পেশ করেন কুরআন গবেষক ও লেখক শওকত জাওহার। তিনি কুরাআন থেকে একাধিক আয়াত পেশ করে বলেন, কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ একটি স্বাভাবিক ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। আর এজন্য বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদ্ধতি বা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তিনি জাতীয়করণের সহায়ক কর্মসূচি হিসেবে প্রধানত “জাতীয় কুরআন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা” প্রস্তাবনাটির বিষয়ে আলোচনা করেন।

ড. কামাল উদ্দিন জাফরী কুরআনের রেফারেন্স দিয়ে বলেন- আল্লাহ বলেন, আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি লিয যিকর- অনুধাবনের জন্য। সুতরাং কুরআন কঠিন না। আপনারা যে বিষয় নিয়ে আমাদেরকে এখানে ডেকেছেন- কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ- এটা যৌক্তিক ডিমান্ড, এটা শুধু আবেগ নির্ভর নয়। তিনি এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করেন এবং উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সাধুবাদ জানান।

সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণের অভিযাত্রায় আমি আপনাদের সাথে থাকবো। কুরআনের শিক্ষাকে সামাজিক আন্দোলনে নিয়ে যেতে হবে- মাতৃভাষায় কুরআন চর্চা করতে হবে। সবার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক আরবি শিক্ষা চাপিয়ে দেয়া নয়, মুসলিমদেরকে ইমামরা সূরার অর্থ বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, কুরআনের ম্যাসেজকে মাতৃভাষায় হৃদয়ে ধারণ করে কর্মে প্রয়োগ করতে হবে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কুরআন গবেষক একেএম মোস্তফা বিন মালেক বলেন, কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আমি এটার সাথে থাকতে চাই, আপনারা সবাইও এটার সাথে থাকবেন এ আহবান রাখছি।

মাহমুদুল হক জালিস বলেন, আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যখন কুরআন শিক্ষা আমাদের মধ্য থেকে উঠে গেছে বললেই চলে।  আমরা যদি কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ করতে চাই তাহলে আমাদেরকে দাবি করতে হবে বাংলাদেশে বিদ্যমান সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কুরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হবে। তিনি সেমিনারের কামিয়াবি কামনা করেন এবং কুরআনের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মিরপুরের একটি কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম শহীদুল্লাহ কাসেমী কুরআন চর্চার ক্ষেত্রে সহি উচ্চারণ শেখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ফরিদাবাদ মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল মোমেন আজহারী বলেন, ছোট বয়স থেকেই কুরআন শেখানোর গুরুত্ব আলোচনা করেন। তিনি কওমী মাদরাসায় কুরআন শেখানোর বাস্তব চিত্র নিয়ে আলোচনা করে এর কিছু মডিফাই প্রয়োজন আছে বলে মত প্রকাশ করেন।

বিশিষ্ট লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা বলেন, মুসলিমদের নিয়ে আমার দুঃখবোধ বেশি। কারণ এদেরকে উগ্র করার জন্যও পরিকল্পনা করা হয়, নির্যাতন করার জন্যও পরিকল্পনা করা হয়। আমি সম্পাদনার কাজে কয়েকবার কুরআনের অনুবাদ পড়ে দেখলাম যে, ধর্ম সম্পর্কে যা বলা হয় কুরআনের সাথে তার অনেক ক্ষেত্রে মিল নেই। তিনি আরও বলেন, কুরআন একটি গ্রন্থ। তাই এটাকে গ্রন্থের মতো করে যতদিন লাগে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে, যেন এর সম্পূর্ণ ভাব বুঝা যায়। বারবার পড়তে হবে।

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আব্দুল হাই আলোচনা সভার মূল চেতনাকে যথার্থ অর্থে ধারণ ও উপলব্ধি করে বলেন, কুরআনের শব্দ ও বাক্য মানুষের কাছে এমনভাবে পরিচিত করতে হবে যেমন বিভিন্ন সাহিত্যের শব্দ বা বাক্য মানুষ তাদের কথাবার্তায় ব্যবহার করে- তাহলেই কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ ঘটবে।

শেয়ার করুন