২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৫০:১৫ অপরাহ্ন


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগে আ.লীগ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগে আ.লীগ


বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশ বিদেশে প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ক্রমাগত আশ্বাস বিষয়ে আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। এরই মাঝে বাংলাদেশ থেকে অবাধ অর্থপাচার, অবাধ দুর্নীতির নানা তথ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভিসা নিষেধাজ্ঞা বা স্যাংশন কার কার ওপর আরোপ হয়েছে এ নিয়ে সত্য-মিথ্যা নানা গুজব বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি কিছুতেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচন বিষয়ে সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধীদল নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকায় অচল অবস্থা বিরাজ করছে। অবস্থাদৃষ্টে অন্তত এবারসহ দুটি জাতীয় নির্বাচন সর্বসম্মত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে করা যথাযথ সিদ্ধান্ত কি না, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হলে সংকটের সমাধান হবে বলে মনে হয় না। 

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন কনস্টিটিউশন অনুযায়ী, শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায় কি না। সেই সরকারে ১৯৯০-এর মতো সরকার এবং বিরোধীদলের সুপারিশে সর্বাধিক সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে ১০ সদস্যের সরকার গঠিত হতে পারে। আর যদি প্রয়োজন হয় সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন ডেকে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে। এই বিষয়ে সমাধানে আসতে হলে সরকার এবং বিরোধীদল উভয়কেই বেশকিছু ছাড় দিতে হবে। সরকারকে বাস্তবতা বুঝতে হবে যে ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো একতরফা নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই।  দেশ-বিদেশে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা যে ব্যাখ্যা দেয় না কেন, সাধারণ জনসাধারণের কাছেও সেটি বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না।  

এদিকে হামাস-ইসরায়েলের সংঘর্ষ বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া এবং ইরানের ওপর পুনরায় কঠোর অবরোধ প্রদানের কথা সক্রিয় বিবেচনা করছে। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ পর্বে মহাসংকটে। প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রার সংকটে প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি সংকুচিত হবে, জ্বালানি বিদ্যুৎসংকট ত্রিমুখী সংকটের সৃষ্টি করবে।  

ব্যক্তি, দল সবকিছু থেকে দেশ বড়। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ক্রমাগত তিন টার্ম ক্ষমতায় থেকে সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে নানা সিন্ডিকেট নানাভাবে দুর্নীতি করে জনজীবন বিষিয়ে তুলেছে। দেশে এখনো দেশপ্রেমিক অনেক মেধাবী মানুষ আছে। সমাজে প্রিয়জন বলে বিবেচিত কিছু সৎ, যোগ্য সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষদের সমন্বিত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন বর্তমান অচল অবস্থা থেকে মুক্তির অপসন হতে পারে। পার্লামেন্ট বহাল রেখে স্পিকারকে প্রধান করে অথবা প্রধান বিচারপতির অধীনেও এই সরকার গঠিত হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই বর্তমান সরকারি দল নির্বাচনে হেরে যাবে এই বিবেচনার বাস্তব ভিত্তি নেই।  দেশের মানুষ অনেক সচেতন। মিডিয়ায় সত্য-মিথ্যা অনেক কিছুই বলা হচ্ছে।  ভারতীয় মিডিয়ায় অনেক কিছুই লেখা হচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে।

সচেতন দেশপ্রেমিক মহল একটা কাজ অবশ্য করতে পারে সেটা হলো-সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধীদলকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে সমাধানে আসতে সহায়তা করা। আগামীর কঠিন দিনগুলোতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শক্তিশালী সরকার গঠন ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, খুব শিগ্গিরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেবে যেটা সংবিধান মোতাবেক। কিন্তু এটাই সর্বসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়। শুধু সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করলো আর সেটা বিরোধীদল মানলো না, সেটাতে কোনো সুফল বয়ে নিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। 

এটা মনে রাখতেই হবে যে, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি সরকারগুলোর দাদাগিরি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন