২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:২৫:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপির অহিংস কর্মসূচিতে প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১১-২০২২
বিএনপির অহিংস কর্মসূচিতে প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে সরকার


বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান খুলনা যাচ্ছিলেন বিএনপি’র বিভাগীয় সম্মেলনে যোগ দিতে। পথে তারা বিশাল গাড়ি বহর থামিয়ে দেয় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চান, কেনো তার গাড়ি যেতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপি’র সমাবেশে যেতে কি তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে? উত্তরে আইন শৃংখলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মসিউর রহমানকে খুলনায় সমাবেশে যোগ না দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। এতে অত্যন্ত ধীর স্থিরভাবে মসিউর রহমান পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, আপনাদের এক মিনিট সময় দেয়া হলো। এর মধ্যে বলে দেবেন সমাবেশে গাড়ি বহরকে যেতে দেবেন কি-না? হয় মরবো না-হয় মারবো। কোনটা চান? চমকে উঠেন মসিউর রহমানের এমন কথায়। দেখেন কয়েক হাজার নেতাকর্মীর পাশাপাশি এলাকার জনগণও যোগ দিয়েছে এই গাড়ি বহরের পেছনে। মুহুর্মুহু স্লোগানে বিব্রতকর পরিস্থিতির টের পায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। উপায়ন্তর না দেখে মসিউর রহমানের গাড়ি বহরকে দ্রুত খুলনায় জমায়েতে যেতে ছেড়ে দেন। গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের কয়েকদিন পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান তার ঝিনাইদহের বাড়িতে মারা গেছেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়।

এর পরের আরেক ঘটনা হলো বরিশালের সমাবেশ নিয়ে। এ সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। কেউ নদী সাঁতরিয়েও আসেন সমাবেশে যোগ দিতে। কেউ কাফনের কাপড়ও সাথে নিয়ে আসেন বলে শোনা যায়। কারণ সমাবেশে যেনো বিএনপি’র নেতাকর্মীর উপস্থিতি কম হয় সেজন্য আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। এছাড়া সংহিসতার আশঙ্কা ছিলো কারো কারো মধ্যে।  কিন্তু এসব করেও বরিশালে বিএনপি’র সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকানো যায়নি। কেননা কেউ চলে সমাবেশে যোগ দিতে সমাবেশস্থলেই চলে আসেন দু’দিন আগে। কেউ আসেন আগের দিন রাতেই। এসে সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়ে নেন। নির্বাচন ঠেকানো বা অন্য কেনো উদ্দেশ্যে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাত জেগে সমাবেশস্থলগুলি পাহারা দেয়নি। এসেছে শুধু সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও সফল করতে। সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্য সাধারণ জনগণকে অংশ নিতে দেখা গেছে নানান ধরনের বাধা বিপত্তিকে মোকবেলো করে। 

উপরের এসব তথা মিলেছে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বিএনপি’র বিভাগীয় বেশ কয়েকটি সম্মেলন কভার করে আসা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে। তারা আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা পত্রিকায় তুলে ধরেন, কিভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মামলা হামলার তোয়াক্কা না করে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এসব বিভাগীয় সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। আর সমাবেশের এমন পরিস্থিতি নিয়ে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ মহলে বিএনপি’র এধরনের কর্মসূচি নিয়ে প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে আছে। তারা বিএনপি’র এধরনের অহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে প্রচণ্ডভাবে ব্যর্থ করে দিতে নানান কৌশল নিচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

একনজরে বিএনপি’র বিভাগীয় সম্মেলন

গত বছরেরর ডিসেম্বর মাসে ’গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকেই বিএনপি মাঠে বেশ তৎপর রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচির নামে। বিএনপি ধারণা সরকার যতোই বলুক না কেনো তারা এখন থেকে সহজেই আগের মতো আইন শৃংখলায় নিয়োজিত বাহিনী সভা- সমাবেশে প্রতিবন্ধকতায় কঠোর হতে পারবে না। তবে এমন অবস্থাতেও বিএনপি বেশ জোরালো ও কঠোর আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামতে বেশি তৎপর ছিল না। কিন্তু এবছররে সেপ্টেম্বরে একটু নেড়ে চেড়ে বসে। এই মাসে বিএনপি এক কর্মসূচি ঘোষণা করে যার নাম দেয়া হয় বিভাগীয় শহরে গণ-সমাবেশ। এতে বলা হয় দলটি  ৮ অক্টোবর থেকে দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে গণ-সমাবেশ করবে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে যদিও বলা হয় গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলার নুরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম মোট ৫ জন হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়া’র মুক্তি এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বিভাগীয় গণ-সমাবেশ করা হবে। কিন্তু বিএনপি মাঠের টোন ও আর্ন্তজাতিক অবস্থান টের পেয়েই যে এমন কর্মসূচি দিচ্ছে তা স্পস্ট হয়ে গেছে। এমন কর্মসূচি অংশ হিসাবে ৮ অক্টোবরে হয় চট্টগ্রামে। ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে। আর ২২ অক্টোবরে হয় খুলনায়। ২৯ হয় অক্টোবর রংপুরে।  ৫ নভেম্বর  হয় বরিশালে। সামনে ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী। এবং এধরণের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ।

সরকারের যে কারণে মাথাব্যাথা

বিএনপি এধরনের বিভাগীয় সম্মেলনের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম অবস্থায় সরকারের মাথা ব্যাথাই ছিল না। করোনা মহামারির প্রকোপসহ বেশ কয়েকটি কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি । যেসব কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে দেয়া কয়েকটি কর্মসূচি। কিন্তু এসব কর্মসূচিতে বিএনপি খুব একটা ভালো করতে পারেনি। আবার দলের নেতাকর্মীরা পায়নি খালেদা জিয়াকে মুক্তি করার মতো জোরালো অন্দোলন। বরং এসব নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে আড়াই বছর ধরে সাময়িক মুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। খালেদার মুক্তি নিয়ে বিএনপি তার নেতাকর্মীদের কোনো সুখবর দিতে পারেনি। অভিযোগ আছে নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চেয়ে তাকে চিকিৎসায় দেশের বাইরে পাঠানো নিয়েই বিএনপি’র একটি অংশকে মাঠে নানান ধরনের কর্মসূচি দিয়ে ব্যস্ত রাখা হয়েছিলো। যার নেপথ্যে সরকারই ছিল বলে বিএনপি’র বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়। কিন্তু এর পরে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি বেশ কয়েকটি কর্মসূচি দেয়। এসব কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় সহিংস ঘটনা। সরকার এসব ঘটনায় নড়ে বসে কারণ। তারা বুঝতে পারে বিএনপি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে ইস্যু করে নয় আরো অন্য কারণেই এসব কর্মসূচি পালন করছে। কেননা সেপ্টেম্বর জুড়ে ছিলো বিএনপি’র নানান ধরনের সভা সমাবেশ। যার অন্য উদ্দেশ্য ছিল বলেই সরকার ধরে নেয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এবং ব্যাশেলেতের সফরকে কেন্দ্র করে সরকার মানবাধিকার ইস্যুতে কৌশল নেয়। বিএনপিকে রাজনৈতিক মাঠে সভা- সমাবেশ করার অবাধ সুযোগ দিয়ে প্রমাণ করে বাংলাদেশে রাজনেতিক দলগুলি অবাধ সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি মিশেল ব্যাশেলেত সফরের পরেও কর্মসূচি নেয়ার ব্যাপারে সরকারের টনক নড়ে। কারণ তারা বুঝেছে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বিএনপি মাঠে তাদের মাঠের অবস্থানকে জানান দিচ্ছে। সে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের ভারত সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও বিএনপি তাদের কর্মসূচি টেনে নিয়ে যেতে থাকে। সর্বশেষ দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে গণ-সমাবেশের ঘোষণা দেয়। আর এতে সরকার বুঝে ফেলে বিএনপি’র মোটিভ। দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে গণ-সমাবেশ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের নানান ধরনের আলাপ আলোচনা ও শঙ্কার কথা জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে মুখে যা-ই বলা হোক না কোনো বিএনপি’র এসব সমাবেশকে সফল বলে ধরে নেয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। বিএনপি’র এসব সফল কর্মসূচির পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে বিএনপি’র পক্ষ থেকে অতি শান্তিপূর্ণ কৌশলে সরকার হতবাক হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে একজন আওয়ামী লীগ নেতা এই প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেছেন, সরকারের শীর্ষ মহলে বিএনপি’র সমাবেশ নিয়ে প্রচন্ড ¯œায়ু চাপে আছে। তার বক্তব্য হচ্ছে সরকার জানে বা বুঝতে পারে যে বিএনপি এখনই হুট করে আগেরবারের কর্মসূচিগুলির মত হটকারি কিছু করে বসবে না। কিন্তু এধরনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশগুলিতেও সরকার এখন কোনোভাবেই ভালো চোখে নিচ্ছে না। তারা মনে করে শান্তিপূর্ণ এমন অহিংস কর্মসূচিতে বিএনপি সাধারণ জনগণের মন জয় করে নিচ্ছে বা জনসমর্থণ বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের প্রতি। আর এজন্য সরকারের মধ্যে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচিকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলা সরকারের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ও তার দলে মধ্যে এনিয়ে দিনের পর দিন দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তারা বিএনপি’র এধরনের অহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে প্রচন্ডভাবে ব্যর্থ করে দিতে নানান কৌশল নিচ্ছে। 

আপাতত ধর্মঘট-মামলা মোক্কদমা

বিএনপির এসব কর্মসূচি ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজপথে সক্রিয় থাকবে বলে  ধরে নেয়া হচ্ছে।  চলবে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আর মামলা মোক্কদমা। বিভাগীয় সম্মেলনে যোগদানের সময় বিভিন্ন ধরনের ঘটনায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে এখন মামলায় জড়িত করার অভিযোগ উঠেছে দলটির পক্ষ থেকে। তাছাড়া নানান ইস্যুতে নেতা কর্মীদের সভা সমাবেশে আসতে প্রশাসনিকভাবে বাধা সৃষ্টি করারও অভিযোগ উঠেছে।  জনগণের জানমাল রক্ষার কথা বলে একের পর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ ঢাকা জেলা কমিটির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এমন আভাস মিলেছে। ইতোমধ্যে দেখা গেছে ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশের দিনই কুমিল্লায় মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে দলটি। আবার ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি আছে, ওই দিন কুমিল্লায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের করার কথা। বরিশালে বিএনপি’র সমাবেশে মাঠে থেকেছে আওয়ামী লীগও। বরিশালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। খুলনা ও রংপুরের মতো ইতিমধ্যে বরিশাল পরিবহন মালিক সমিতি ওই দিন ধর্মঘট ডেকেছে। বরিশালের পর ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ। তারপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এর বিপরীতে আছে আওয়ামী লীগের নানান ধরনের কর্মসূচি। বিএনপির ঢাকার সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি।  এমাসে বিএনপিকে চাপে রাখতে সব ধরনের কৌশলই রাখছে আওয়ামী লীগ সরকার।

শেষ কথা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের মতে, সবদিক বিবেচেনা করলেই দেখা যাবে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে পড়েছে সরকার। সরকার একদিকে দেশের আর্থিক সঙ্কটকে মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর খড়গ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে গত জুলাইয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তায় চায়। ঋণের শর্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গত ২৬ অক্টোবর আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১৫ দিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছে। প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। তাদের নানা রকম তৎপরতায় সরকার ব্যতিব্যস্ত। অন্যদিকে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্ন্তজাতিক অঙ্গনের নানান ধরনের চাপে। কারণ এরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এমনটাই ফুটে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের সাম্প্রতিক বক্তবেও। তিনি রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাবশালী দেশগুলোর সমর্থন আদায়ও চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবার দেশের রাজনৈতিক মাঠে রয়েছে বিএনপি’র ভিন্ন ধরনের অহিংস আন্দোলন। এতে তারা এবার স্পষ্ট করে বলেছে, অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে কখনও দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি, হবেও না। এবার এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়েই তাঁরা ঘরে ফিরবেন। তবে আরেক ধরনের আশঙ্কার কথা খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি অবশ্য দেশের অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যেখানে উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি, আমাদের তৈরি থাকতে হবে যেকোনো অবস্থায়। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলে ফেলেন। যদিও তিনি রাজনৈতিক দলের চাপের কথা বলেননি তবে সেটাও যে তার মাথায় আছে তা-ও প্রকাশ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে। বিএনপি’র আন্দোলন নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাই সব মিলিয়ে বলা যায় আওয়ামী সরকার এতোদিন যে পায়ে চলছিল তা দিয়ে সামনের দিতে কতটা চলতে পারবে তা তাদেরই ভাবিয়ে তুলেছে। এমন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটা পারঙ্গম হবে তা বুঝতে এবছরের ডিসেম্বর পর্যন্তই সকলকে টান টান উক্তেজনা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।

শেয়ার করুন