২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:২৭:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


দেশকে নুরুল হক নুর
সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ নূরুল হক নূর


গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেছেন, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দল সব্বাই এক আছি, ঐক্যবদ্ধ। এই এক থাকাটাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। সব্বাই শেখ হাসিনার পতন এবং দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তবে ইন্ডিভিজিউল দলতো তাদের স্বতন্ত্র চিন্তা ভাবনা আছে। তাদের নিজস্ব প্লান পরিকলপনাও আছে। মৌলিক বিষয়েতো তারা এক। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

ড. রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং নুরুল হক নূরকে সদস্য সচিব করে ’বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে ২০২১ সালের অক্টোবরে। নুরুল হক নূর কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে খ্যাতি পান। কোটাবিরোধী আন্দোলন করে আলোচনায় আসা সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। পরে তিনি ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। তবে দেশবাসীর কাছে তিনি ভিপি নূর হিসাবেই পরিচিত এবং এই নামেই তাকে চেনেন।

দেশ: বিএনপির উদ্দেশে সম্প্রতি ইসি মো. আলমগীর বলেছেন, এ পর্যন্ত ভালো কাজ করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও ভালো কাজ করব। সব সময় আমাদের আহ্বান থাকবে যে, আপনারা নির্বাচনে অংশ নেন, আমাদের পরীক্ষা নেন। আপনারা তো আমাদের পরীক্ষাই নিচ্ছেন না। পরীক্ষা না নিয়েই আমরা যে অকৃতকার্য হলাম, কীভাবে আপনারা বুঝলেন? আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত সব সময়। প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপিসহ কেনো আপনারা এই নির্বাচন কমিশনকে তার নিরপেক্ষতা বা যোগ্যতা পরীক্ষা করতে অংশ নিচ্ছেন না?

নুরুল হক নূর: আসলে নির্বাচন কমিশনকে নিয়েতো পরীক্ষার কিছু নাইতো। সাংবিধানিকভাবে তাদের ওপর যে দায়িত্ব রয়েছে তা তারা পালন করবে।  তাদের দায়িত্ব হচ্ছে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন আয়োজন করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার তাই করা। কিন্তু আমাদের দেশেতো যারা এসব সাংবিধানিক পদগুলিতে যায় তারাতো রীতিনিতি বর্জন করেই যায়। সে কারণে তাদের বর্তমান অবস্থান-তো দেখাতে পারবে না। স্বাভাবিকভাবে বর্তমান কমিশনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে একটা অনাস্থার ভাব রয়েছে জনগণের মধ্যে। একারণে মানুষ এখন ভোটকেন্দ্রে যায় না। নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্রে এখন কুত্তা বিলাই ঘুরে । কিন্তু নির্বাচন কমিশন এব্যাপারে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে বলবে যে ভোটের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা-তা কিন্তু করছে না। কিন্তু জনগণকে যদি নির্বাচন কমিশন ভোট কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে প্রথমত তাদেরকে সারা দেশে একটি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেনো প্রতিটি প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা করতে পারে। এক জনের ভোট যেনো আরেকজন না দেয়। কিন্তু তা-তো হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে এখন জনগণ বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচনেই কোনো দলই অংশ নিতে চাচ্ছে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারেই পুর্নব্যক্ত করেছে। এখন নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিকার অর্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের অবস্থানটা সরকারের কাছে জানিয়ে দেয়া দরকার। নির্বাচন কমিশন বর্তমান সরকারকে জানিয়ে দেয়া দরকার যে তারা তাদের ওপর এই দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব না। তারা বলে দিতে পারে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষম। যেহেতু বিরোধী দলগুলি অনাস্থা প্রকাশ করছে। সেটা তাদের জন্য একটা ভালো দিক হতে পারে। তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে পরীক্ষার কথা বলে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আহবান করলে - এই তামাশার নির্বাচনে বিরোধী দলের কেউই তো অংশ নেবে না। 

দেশ: সংসদে নির্বাচন কমিশন আইন পাস হয়েছে ।এই আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সে হিসাবে বাংলাদেশে এটি নতুন কি-না? তাই তাদেরকে পরীক্ষা করার সুযোগ আছে কি-না? এব্যাপারেও আপনি বা আপনার জোট কি এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না?

নুরুল হক নূর: কিভাবে বিরোধী দল এই নির্বাচনী কমিশনের ওপর আস্থা রাখবে বলেন? এই নির্বাচন কমিশন ঢাকা থেকেই সরাসরি সিসি টিভিতে দেখলো যে গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনে অনিয়ম হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসাবে কিন্তু নির্বাচন কমিশন ভোট নেয়াই বন্ধ করে দিলো। অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ। এরপর ইএনও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অনিয়মে জড়িত ৮১ কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে অনিয়মের ব্যাপারটি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে উনি ব্যবস্থা নিতে পারেননি। কারণ ৮১ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেতো তার চাকরিই থাকবে না। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০টি আসনে অনিয়ম হলে কয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবেন? আসলেতো ইসি এধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিতেই পারবে না। তাই ইসির কর্মকর্তারা ভালো ভালো কথা বলে, টেলিভিশনে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। এগুলি দিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিউজ হওয়া ছাড়াতো বাস্তবতায় আর কোনো মিল নেই। ইসি যতো বলুক আইন হয়েছে, ওটা হয়েছে, সেটা হয়েছে আসলে প্রকৃত অর্থে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থা বা কাঠামোতে প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলবেন সেটাই হবে চূড়ান্ত। এখানে অন্য কারো কথা বলার কোনো মূল্যই নেই, কারোর কিছু করারও নেই। সেজন্যই  দৈত্য-দানবীয় মার্কা প্রধানমন্ত্রী-সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। দেখেন ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮-এই চারটা নির্বাচন হয়েছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। এবং এগুলির মধ্যে দু’ইটা নির্বাচনেই কিন্তু আওয়ামী বিজয়ী হয়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়েতো আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকার কথা না। এজন্য আমরা মনে করি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করতে পারে।  

দেশ: নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ আপনারা এখন একদিকে আছেন। সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে আছে সরকার-এ অবস্থায় দেশের ভবিষ্যত কি?

নুরুল হক নূর: দেশের ভবিষ্যতকে আসলে জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বর্তমান সরকার ১৪বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে যেভাবে স্বাধীনতা স্বার্বভৌম বিপন্ন করছে, প্রতিবেশি দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ করে দিয়েছে-ট্রানজিট থেকে নিয়ে বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে- যার কারণেই বাংলাদেশে আজকে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। আর এধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে  বিশেষ করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই দরকার। ফলে জনগণ যদি বিরোধী দলগুলির সাথে ঐকবদ্ধ হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় তাহলেতো এই সরকার সাতদিনও টিকতে পারবে না। আমি মনে করি বর্তমান সরকারের পতন হওটাই সার্বিক সঙ্কট সমাধানের একটি রাস্তা। আর সরকার পতন হলে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এবং সে নির্বাচনে যারা জনগণের ম্যান্ডট পাবে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসবে। সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সরকার হলে তখনতো কাকে কারো গোলামি করে ক্ষমতায় থাকতে হবে না। কাউকে বন্দর দিয়ে কিংবা ট্রানজিট দিয়ে বা অমুক জোটে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে না। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে জনগণের জন্য যারা কাজ করবে তারাই ক্ষমতায় থাকবে। বর্তমান সরকারতো ভারতসহ বিভিন্ন শক্তির ওপর ডিপেন্ডেবল হয়ে ক্ষমতায় আছে। তাদের স্বার্থ রক্ষা করেই ক্ষমতায় আছে। 

দেশ: আপনি বলছিলেন জনগণ যদি বিরোধী দলগুলি সাথে ঐকবদ্ধ হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় তাহলেতো এই সরকার সাতদিনও কোনোভাবেই টিকতে পারবে না। তার মানে কি বিরোধী দলের আন্দোলনে জনগণ এখনো সম্পৃক্ত হচ্ছে না বা ভরসা পাচ্ছে না..

নুরুল হক নূর: বিষয়টি হচ্ছে বর্তমান সরকার যেভাবে বিরোধী দলের ওপর হামলা মামলা চালিয়েছে তা কিন্তু পাকিস্তানি আমলেও হয়নি। এর আগে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে কখনোই ১৪ বছর কেউ ক্ষমতায় থাকেনি। একারণে দেশে রাজনীতি সভা সমাবেশ করার একটি প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। আর এজন্য আমি মনে করি যে জনগণকে বিরোধীদলের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে একটা ঘাটতি আছে। আমার মনে হয় যেকোনো সময়ে এধরনের পরিস্থিতি ভেঙ্গে যাবে। 

দেশ: আপনারা কি সব্বাই আসলেই ঐকবদ্ধ আছেন..?

নুরুল হক নূর: ঐকবদ্ধ বলতে সব্বাই তাদের দলের ব্যানার বন্ধ করে একসাথে আন্দোলন করবে ব্যাপারটা সেরকম না। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা বিরোধী দলতো দেখি সব্বাই এক আছি। এই এক থাকাটাই এমুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। সব্বাই শেখ হাসিনার পতন এবং দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তবে ইন্ডিভিজিউল দলতো তাদের স্বতন্ত্র চিন্তা ভাবনা আছে। তাদের নিজস্ব প্লান পরিকলপনা আছে। মৌলিক বিষয়েতো তারা এক। 

দেশ: আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

নুরুল হক নূর: আপনাকে এবং দেশ পত্রিকার পাঠককেও ধন্যবাদ। 

শেয়ার করুন