২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন


ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এখন লিটল বাংলাদেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২২
ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এখন লিটল বাংলাদেশ লিটন বাংলাদেশ লেখা সাইন হাতে কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ


নিউইয়র্কের ব্রুকলীন বাংলাদেশী অধ্যুষিত একটি বড় জনপদ। এখানে বাংলাদেশী জনগোষ্ঠির বসবাস এবং ব্যবসা বাণিজ্য। এক সময় ব্রুকলীনে বাংলাদেশীদের প্রিয় স্থান ছিলো চার্চ ম্যাকডোনাল্ড। এই চার্চ ম্যাকডোনাল্ডই মূলত: প্রবাসী বাংলাদেশীদের তীর্থ স্থানে পরিণত হয়। নিউইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশীদের বিজয় পতাকা উড়লেও ব্রুকলীন ছিলো অনেকটা পিছিয়ে। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের স্টালিং এভিনিউতে নামকরণ করা হয় বাংলা বাজার এভিনিউ। এরপর জ্যামাকাইকায় নামকরণ করা হয় লিটন বাংলাদেশের। কিন্তু বর্তমানে ব্রুকলীন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নতুন প্রজন্মের জন্য রাজনীতির সিঁড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। নিজেদের একজন প্রতিনিধি থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটির জন্য। তারই প্রমাণ রেখেছেন কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। তার নেতৃত্বেই ব্রুকলীনের চার্চ ম্যাকডেনাল্ড এখন লিটন বাংলাদেশ।

শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে এবং উৎসবমুখ ও আনন্দঘন পরিবেশে গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে লিটল বাংলাদেশে নামফলক উন্মোচন করা হয় চার্চ ম্যাকডোনাল্ডে। এই সময় আবেগ আপ্লুত ছিলেন শাহানা হানিফ। তিনি বলেন, আমার প্রিয় এলাকাবাসী, সালাম, আদাব এবং শুভ অপরাহ্ন। কেমন আছেন আপনারা? আজ বিশেষ একটা দিনে, আপনাদের মতো আমিও, এখানে দাঁড়িয়ে গর্ব করে বলতে পারি, আমরা কেনসিংটনের বাসিন্দা, ব্রুকলিনে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশী জনগোষ্ঠী। কেনসিংটন হচ্ছে সেই এলাকা, আমার বাবা-মা তুলনামূলক উন্নত জীবনের জন্য তাদের প্রিয় বাংলাদেশ ছেড়ে যেখানে অভিবাসী হয়েছিলেন, যেখানে আমার জন্ম, আমার বেড়ে ওঠা। এই ব্লকের শেষ মাথায় যে স্কুলটা, পিএস ওয়ান সেভেনটি নাইন, আমি সেখানে পড়েছি। এই যে পাশে, এদিকে, যেখানে এখন রাঁধুনী রেস্টুরেন্ট, একসময় সেটার নাম ছিলো লিটল বাংলাদেশ, আমার বাবা ছিলেন সেই রেস্টুরেন্টের মালিক। এই জনপদে আমার শেকড় বেশ গভীরে। সবকিছু বোঝার বয়স থেকে এই এলাকায় আমার প্রতিবেশীদের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে শুরু করেছিলাম আমি। এখনো নিরলসভাবে করে যাচ্ছি। এবং কেনসিংটনে সিটি কাউন্সিলমেম্বার হিসেবে আমার ভাবনা, জনসমাজ হিসেবে আপনাদের আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। সিটি কাউন্সিলে আমার দায়িত্ব শুরুর মাত্র ১০ মাসের মাথায় ‘লিটল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করতে পারা আমার জন্য বেশ আনন্দের। এই উদযাপন আমার অন্তরে একটা বিশেষ জায়গা দখল করে আছে, এবং আপনারা সবাই আজকের এ আয়োজনে যোগ দিয়েছেন দেখে আমি আপ্লুত, আমি কৃতজ্ঞ।

আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ আর চার্চ এভিনিউ’র সংযোগস্থলটাকে কেনো লিটল বাংলাদেশ নামকরণ করা হলো? এই এলাকা আমাদের, এখানেই থাকি আমরা। এই এলাকার সাথে আমাদের সুখ দুঃখগুলো জড়িয়ে আছে। এখানে আমরা যারা বসবাস করি, তাদের প্রত্যেকের প্রতিটা দিনকে নিরাপদ করতে, আমাদের যে প্রতিশ্রুতি, তা আরো জোরদার করবে এই লিটল বাংলাদেশ। সিটিতে জনসমাজ হিসেবে আমাদের অবস্থান ও শক্তিমত্তাকে এই ‘লিটল বাংলাদেশ’ আরো গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। অভিবাসী এশীয়দের মধ্যে আমরা সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা জনগোষ্ঠী এবং এই সিটির বাসিন্দাদের সাথে আমাদের প্রতিদিনের যোগাযোগ কিংবা সম্পর্ক বেশ জোরালো এবং দৃশ্যমান।  একটা মর্যাদাপূর্ণ জীবন, মানসম্মত আবাসন, গৌরবোজ্জ্বল কর্মক্ষেত্র, উপযুক্ত মজুরি, মানসম্পন্ন শিক্ষাসহ আরো অনেক কিছুর পক্ষে কথা বলা ও কাজ চালিয়ে যেতে আমাদের নিজেদের ক্ষমতায়নের জন্য এই লিটল বাংলাদেশ। ৪০ বছর কিংবা এরও আগে যারা এখানে অভিবাসী হয়ে এসেছিলেন, তাদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেয়া, আমাদের জনসমাজের নানা রকমের অর্জনকে উদযাপন করার উপলক্ষ্য এই লিটল বাংলাদেশ। কেনসিংটনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, এই প্রতিবেশে আমাদের অগ্রজদের যতো অবদান, এর সবকিছুর সাক্ষী হয়ে আছে এই রাস্তা। এটি এই জনসমাজের একটা স্থায়ী অংশও বটে। আজ আমরা এই রাস্তার নামফলক উন্মোচিত করার মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটির মানচিত্রে জায়গা করে নেবো।

চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে বাংলাদেশীদের আধিপত্যের কথা বলতে গেলে জনাব শহীদুল্লাই ও মরহুম আবুল কাসেমের নাম নিতে হবে আমাকে/ তারা দুইজন এখানে “এশিয়ান ওরিয়েন্টাল গ্রোসারি” দিয়ে বাংলাদেশীদের ব্যবসার গোড়াপত্তন করেছিলেন এখানে। তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।

আবারো, আমি অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের সবার প্রতি, যারা এই জনপদ, আমাদের জন্য গড়ে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে কারোর নাম উল্লেখ না করে আপনাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছি। আমি বিশ্বাস করি, ছোট বড় নানা অবদানের ফসল এই লিটল বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটির কম্প্রোটোলার ব্যান্ড ল্যান্ডার, অ্যাসেম্বলী মেম্বার ববি ক্যারল, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক লিডার এ্যাট লার্জ এটনী মঈন চৌধুরী, বিপার এ্যানি ফেরদৌস, বাংলাদেশী আমেরিকান্স ফর পলিটিক্যাল প্রগ্রেসের শিহাব চৌধুরী, ড্রামের খালেদা আক্তার রুবি, কম্যুনিটি লিডার ফারুক ওয়াদুদ, ডা. লোটাস আহমেদ, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাশেম, সাবিরা চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আব্দুর রব মিয়া, গ্রেটার নোয়াখালি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু, সংগঠনের ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজি মফিজুর রহমান, বাংলা সিডিপ্যাপের প্রেসিডেন্ট আবু জাফর মাহমুদ, চট্টগ্রাম সমিতির প্রেসিডেন্ট মনির আহমেদ, ড্রামের নাজমুল হোসাইন, নওরীন শামাহা, নিউজার্সির কাউন্সিলওম্যান শিপা উদ্দিন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট এবং শাহনা হানিফের বাবা মোহাম্মদ হানিফ, মা মিসেস হানিফ, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট শামসুদ্দিন আজাদ, ডা. মাসুদুল হাসান, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, মাকসুদুল হক চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ, খোরশেদ খন্দকার, আর আমিন, নাজরুল ইসলাম, ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, জাহাঙ্গীর সরোয়ার্দী প্রমুখ।

শেয়ার করুন