২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৫৫:৩০ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ দলের ওয়েস্টইন্ডিজ সফর
টেষ্টে আরেকটি হোয়াইটওয়াশের লজ্জা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৬-২০২২
টেষ্টে আরেকটি হোয়াইটওয়াশের লজ্জা বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং যখন অনাবরত ব্যার্থতাচ্ছন্ন। উইকেটেই দাড়াতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। সে মুহুর্তে দলের সবচে সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবালের ব্যাটিং ধরন। অনেকটাই টি-২০ স্টাইল। ওয়ানডেতেও এটা সবসময় মানানসই নয়। সিনিয়রদের কাছ থেকে কী অনুকরনীয় তরুনদের/ছবি সংগৃহীত


দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের। দুর্ভাগ্য দেশের ওই সকল মানুষের,যারা ক্রিকেটটাকে নিঃস্বার্থ ভালবাসেন। যার সাফল্য শত কষ্টের মাঝেও পুলকিত হন। আবার ব্যার্থতায় প্রচন্ডরকম কষ্ট পান। ২২ বছরের টেস্ট ক্রিকেট জয়ন্তীর পরের দিনেই ১০০ টেস্ট পর্যায়ের লজ্জা পেলো। ম্যাচের ভাগ্যলিপি তৃতীয়দিনই লেখা হয়ে গিয়েছিলো। দেখার ছিল- ১৩২/৬ অবস্থান থেকে বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয়ের কালিমা থেকে রক্ষা পায় কিনা? সেন্ট ভিন্সেন্টে ভারী বর্ষণে আউট ফিল্ড সিক্ত হয়ে খেলা দীর্ঘ সময় স্থগিত ছিল। খেলা শুরু হলে নুরুল সোহানের সাহসী ব্যাটিং বাংলাদেশকে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা থেকে বাঁচলেও ১০ উইকেট টেস্ট পরাজয় সেই সূত্রে হোয়াইটওয়াশ থেকে রক্ষা হয়নি। টেষ্টে এটা টানা তৃতীয় হোয়াইটওয়াশ। 

বাংলাদেশ ২৬ জুন ২০০০ আইসিসি পূর্ণ সদস্য /টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করেছিল। বিসিবি দিনটি মনে রেখেছিলো কিনা ঠাহর করা যায়নি। কিন্তু একদিন পরেই সেন্ট ভিন্সেন্ট টেস্ট পর্যায়ে বাংলাদেশ ২২ বছরের টেস্ট ইতিহাসে, ১০০ তম টেস্ট পরাজয়ের কালিমা/লজ্জা পেল। বছর দুয়েক আগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতেও ধবল ধোলাই হয়েছিল বাংলাদেশ। এর পরেও বিসিবি সভাপতির রাজনৈতিক শব্দচয়ন বিস্মিত করেছে। উনি বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটে নাকি বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। আরো নাকি সময় লাগবে। কথা হলো অন্য দেশগুলো কি বসে থাকবে? পুচকে আফগানিস্থান বাংলাদেশকে বলে কয়ে হারিয়েছে (চট্টগ্রাম টেষ্টে)। 

এদিকে বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিং করে প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রান সংগ্রহ করেছিল। প্রথম টেস্ট থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাটিং হলেও টেস্ট ম্যাচে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট মেজাজে বাংলাদেশের জন্য উপমা ধর্মী ব্যাটিং করে ৪০৮ রান সংগ্রহ করে ১৭৪ রানে এগিয়ে যায়। খালেদ , মিরাজ ,শরিফুল ভালো বোলিং করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাটিংয়ের বীর ছিলেন কাইল মায়ার্স। যিনি ১৪৬ রান করেন। প্রথম উইকেট , ৫ম উইকেট, ষষ্ট উইকেটে বড় জুটি হয়েছিল।

বাংলাদেশ হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেদের নিবেদন করে সিরিজ থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পারতো। কিন্তু কোথায় কী। তামিম, সাকিব পারলো না সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে। শান্ত ভালো খেলছিল।  হয়তো মনে করেছে ৪২ রান করে দলে স্থান পাকা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ইনিংসে সোহানের অপরাজিত ৬০ রান ছাড়া বলার কিছু নেই। সেটাও পরাজয় নিশ্চিত যেনে টেনশন মুক্ত ব্যাটিং করে। তবুও ওর প্রচেষ্টায় ইনিংস পরাজয়ের কালিমা থেকে রক্ষা। ১৩ রানে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি উইকেট নেয়ার সুযোগ এসেছিলো। এবাদতের হাত থেকে ক্যাচ ফস্কালে হয়নি তাও। ১০ উইকেটে টেস্ট জয় , সিরিজ জয় , হোয়াইটওয়াশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ টি সিরিজের ৮ টি জিতলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথা বলতেই হয়। ধীরে ধীরে টেস্ট ক্রিকেটের একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে উঠছে। রোচ এই সিরিজের কথা মনে রাখবে দীর্ঘ দিন। ২৫০ টেস্ট উইকেটের মাইল ফলকের জন্য। পেস বোলিংয়ে এখন ওদের অনেক বিকল্প।  ব্রাফেট, ব্লাকউড, ক্যাম্পবেল, মায়ার্স পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। ক্রমাগত হারের বৃত্ত থেকেই পারছে না।

টেস্ট ক্রিকেট খেলার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে না। আমি মনে করি অ্যালেন ডোনাল্ডের হাতে পেস বোলারদের উন্নয়ন স্বরনীয়। জেমি সিডোন্সকে এখন নতুনদের মাঝে সম্ভাবনা খুঁজতে হবে। তামিম ,সাকিব দায়িত্ব নিতে পারেনি। বিসিবি নাকি টেস্ট নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে। অবশ্য এমন স্বপ্ন অনেক দিন থেকেই দেখানো হচ্ছে। বিপর্যয়ে অনেক কথা। বাস্তবে তার ছিটেফোটাও নেয়ার ফুরসৎও তাদের নেই। তবু সে পরিকল্পনা দেখার অপেক্ষা ছাড়া আর কী-ই করার আছে। 


শেয়ার করুন