২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৩৬:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


‘শ্রমিকনেতা হত্যাকান্ডকে কিসের আলামত?’ বললেন নেতারা
গাজীপুরে শ্রমিকনেতা হত্যাকান্ডে তোলপাড় শিল্পাঞ্চল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৬-২০২৩
গাজীপুরে শ্রমিকনেতা হত্যাকান্ডে তোলপাড় শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে শ্রমিকনেতা হত্যাকান্ডে প্রতিবাদ/ছবি সংগৃহীত


গাজীপুরে শ্রমিকনেতা শহীদুল ইসলামের হত্যাকান্ড নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় শিল্পাঞ্চল। রাজধানীতে এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে গত সোমবার ও মঙ্গলবার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ। পুরো শ্রমিক পাড়া বিক্ষুদ্ধ এমন ঘটনায়। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন এটা কিসের আলামত..। 

গাজীপুর মহানগরীর গাজীপুরা সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ (৫০) নামে এক শ্রমিকনেতার মৃত্যু হয়েছে।  রোববার রাত নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। শহীদুলের সহকর্মীদের অভিযোগ, শ্রমিকদের পক্ষে বেতন-ভাতা নিয়ে কথা বলায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি মারা গেছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও দুই শ্রমিক নেতা। নিহত শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কাস ফেডারেশনের গাজীপুরের সভাপতি ছিলেন। জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার আজগর আলীর ছেলে। আহতরা হলেন- মো. মোস্তফা কামাল (২৫) ও আহমেদ শরীফ (৩৫) ।


এরাও শ্রমিক নেতা। স্থানীয় শ্রমিক ও তার সহকারীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায় গাজীপুরের সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকায় প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড নামের পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকদের চলতি মাসসহ দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া ঈদের বোনাসও দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ চলছিল। শ্রমিক পক্ষে থেকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের গাজীপুর শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলছিলেন।


রবিবার শ্রমিকদের বকেয়া এবং ঈদ বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সারাদিন অপেক্ষা করিয়ে বেতন-বোনাস তারা দেয়নি। রাত ৯টার দিকে শহিদুল ইসলামসহ তিনজন কারখানা থেকে বের হয়ে প্রধান ফকের সামনে অবস্থান করা অবস্থায় ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসীদল তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা তিনজনই গুরুতর আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে গাজীপুরের তারগাছ এলাকার তায়রুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শহিদুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্য দুজনকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন শ্রমিকদের পক্ষে বেতন ভাতা নিয়ে কথা বলায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় তার মৃত্যু হয়।



শ্রমিক নেতারা বললেন কিসের আলামত

শ্রমিক নেতা হত্যাকা- কিসের আলামত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। একই সঙ্গে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়েছে।গার্মেন্ট টিইউসির সভাপতি শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা সাদেকুর রহমান শামীম সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, এধরনের হত্যাকান্ড শ্রমিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আক্রমণ, যা সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। নেতৃবৃন্দ গতকাল গাজীপুরে শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো বর্বরোচিত ঘটনার হুকুমদাতাদেরসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও দ্রুততম সময়ে ন্যায় বিচারের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ নিহত শ্রমিকনেতার পরিবার, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।


বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবৃতিতে গাজীপুরে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলামের হত্যাকান্ডে তীব্র  নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন মালিকপক্ষের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতেই যে শহীদুল ইসলামকে প্রাণ হারাতে হয়েছে তা স্পষ্ট।  তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা রাখার কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, একদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর অন্যদিকে মালিকপক্ষের ভাড়া করা সন্ত্রাসী মাস্তানদের দৌরাত্মের কারণে শ্রমিক ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠকদের জীবন আজ হুমকির মুখে। বিবৃতিতে তিনি  অনতিবিলম্বে শহীদুল ইসলামের খুনি ও মদদদাতাদের গ্রেফতার ও উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন।


একইসাথে তিনি শ্রমিক অঞ্চলে হত্যা - সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে  প্রতিরোধ জোরদার করার জন্যেও শ্রমিক - জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহীদ’কে হত্যা এবং মোস্তফা কামাল ও আহমেদ শরীফ কে আহত করার ঘটনার নিন্দা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিএবং প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা অবিলম্বে পরিশোধের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।

এর আগে বাংলাদেশে একজন শ্রমিক নেতা হত্যার তদন্তে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ। তার নাম আমিনুল ইসলাম। সেও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নামের একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা ছিলেন।২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমিনুলের আশুলিয়ার সংগঠনের কার্যালয়ে যান মোস্তাফিজুর। তাঁরা আমিনুলকে ডেকে নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এজাহারটি পুলিশের করা হত্যা মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। মামলাটি প্রথমে ঘাটাইল থানার পুলিশ তদন্ত করে।


পরে তদন্তকরে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। সে বছরে গত ৪ই এপ্রিল ঢাকার সাভার থেকে নিখোঁজ হওয়ার দু'দিন পর টাঙ্গাইলে তার লাশ উদ্ধার হয়। পুলিশও বলছিল উদ্ধার করার পর আমিনুল ইসলামের শরীরে তারা আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছে। অন্যদিকে হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ বলেছিল, এর আগেও আমিনুল ইসলামকে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ ধরে নিয়ে অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর একারণে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যেনো এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়।


শেয়ার করুন