২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:১২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


ক্রমশ সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বাংলাদেশে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৩
ক্রমশ সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বাংলাদেশে


শাসক দল এবং প্রধান বিরোধীদলসহ সরকারবিরোধী দলের অনমনীয় মনোভাব এবং একগুঁয়েমির জন্য বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অচলাবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় সুযোগসন্ধানী বিদেশি মহল খবরদারি করছে এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমতার নেশায় অস্থির রাজনৈতিক মহল পরস্পরকে ঘায়েল করার অপপ্রয়াসে বিদেশি দেশ এবং শক্তির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছে। 

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নিজস্ব সরকার গঠনের সার্বভৌম অধিকার আছে। এ দেশ পরিচালনায় নেতা-নেত্রী নির্বাচনের অধিকার বিশেষভাবে দেশের মানুষ সংরক্ষণ করে। সেখানে যে কোনো বিদেশি শক্তির প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। হোক সেটি প্রতিবেশী ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা চীন। তবে এটাও ঠিক সংবিধানের আওতায় স্বাধীন, মুক্ত পরিবেশে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সংরক্ষণ জরুরি। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মত সমাধানে আসতে পারবে না। 

বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সর্বত্রই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদির অগ্নিমূল্য, জ্বালানি সংকট। বাংলাদেশ এই অবস্থার বাইরে না। সীমিত সম্পদ দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রশ্ন আছে অনেক দুর্নীতি, অপশাসন নিয়ে। কিছু ভ্রান্ত পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে। কিন্তু কোভিড মহামারি এবং চলতি ইউক্রেন যুদ্ধের অপপ্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দেশের তুলনায় ভালো, এটি স্বীকার করতেই হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়বে। জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই না করা সম্ভব না হলে, অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। ২০২৬ সাল নাগাদ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে ট্রান্সিশন দুরূহ হয়ে পড়বে। ২০২৩ শেষ দিকে অথবা ২০২৪ শুরুতে জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে ন্যূনতম পর্যায়ে ঐকমত্য তাই অপরিহার্য। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন করে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকার নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করায় অসুবিধা দেখি না। 

সরকার তিন টার্মে দেশের অর্থনীতি ব্যাপক সম্প্রসারণ করেছে, বর্তমানে ডিজিটাল সময়ে জনগণ সবকিছু জানে এবং বোঝে। এখন আর জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণকে ভয় দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। যেভাবেই বলি ২০১৪ বা ২০১৮ ধরনের নির্বাচন করার আর সুযোগ নেই। সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হলেও এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ জনগণকে ভোট প্রদানে উৎসাহিত করা। নানা কারণে বাংলাদেশ বিশ্বসমাজের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে আগ্রহী এবং সচেতন। তবে কোনো দেশ বা শক্তি বাংলাদেশে কোনো দল বা ব্যক্তিকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করবে, সেই অবস্থা এখন আর নেই। 

সম্প্রতি দেখছি, সরকারি মহলে কিছু অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আস্থাহীনতার কারণে সরকারি মন্ত্রী এবং নেতারা কিছু অতিরিক্ত কথা বলছেন। আমি অনেকটা নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, সরকার এখন আর নির্বাচন প্রভাবিত করার মতো অবস্থানে নেই। তবে তৃণমূলে সরকারি দলে সমস্যা এবং সংকটে আছে। দলের অভ্যন্তরীণ সংকট মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে সরকারি দলকে পরাজিত করে ক্ষমতায় ফেরার মতো পরিস্থিতি বিরোধী দল বা ফ্রন্টের আছে বলে মনে হয় না। 

দেশ এখন উন্নয়নের যাত্রাপথে উড়ন্ত। অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে। ২০২৬ থেকে উন্নয়নশীল পর্যায়ে পৌঁছালে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে রেখেছে। এই সময়ে দেশ শাসনে শক্তিশালী দক্ষ সরকার না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে। মেধাবী-যোগ্য কর্মকর্তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব দিতে হবে। না হলে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।  

দেশ যখন কঠিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের খপ্পরে, তখন রাজপথে পরিস্থিতি সংঘাতময় না করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ন্যূনতম সমঝোতা করে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া দেশপ্রেমিক সবার দায়িত্ব।  কোনো গণতন্ত্রই ১০০ খাঁটি নেই কোথাও, সেটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত কোথাও না। বাংলাদেশকেও বাস্তবতা মানতে হবে।

শেয়ার করুন