০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৪১:০২ অপরাহ্ন


মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি প্রতীকী ছবি


রাজনীতিবিদ, শিক্ষকসহ শ্রমিক নেতারা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকের ভূমিকা এবং অবদানই প্রধান। মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম দ্রুত সম্পাদন করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করলে শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ চলমান নিয়মতান্ত্রিক বিক্ষোভে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তারা বলেন, এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে শ্রমিকের মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা উচিত। শ্রমিকরা কোন দয়া-দাক্ষিণ্য চাচ্ছে না। শ্রমিকরা অধিকারের জন্য লড়াই করছে। দাবি আদায়ে সরকার ও মালিক পক্ষকে বাধ্য করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা। 

‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গত ১১ জুলাই মঙ্গলবার পুরানা পল্টন মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে ‘মজুরি প্রশ্ন ও গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’-শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার। গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম সবুজের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র  সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. হারুনুর রশিদ, গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক নাইমুল হাসান জুয়েল, বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্যাক্সাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শামীম ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রেজা, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন, ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় নেতা তোফাজ্জেল হোসেন, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য প্রমুখ। 

বক্তারা বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকরা অর্থনীতির চরম দুর্দিনে ডলারে তাদের মুনাফার অংক গুণছেন কিন্তু শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে টাকায় এবং ৫ বছর আগে নির্ধারণ করা হিসাবে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ঘোষিত নি¤œতম মজুরি সেসময়ের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের প্রয়োজন, বাজারদর এবং দাবির সাথে সামান্যও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো না। গত কয়েক বছরে জিনিসপত্রের দাম, বাড়ি ভাড়া বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকদেরই শুধু নয় বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা চরম বেগতিক। এই অবস্থায় বিদ্যমান মজুরি দিয়ে দেশের ৭৮ ভাগ রপ্তানি আয় করা পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের পক্ষে কোন রকম জীবন ধারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। বক্তারা বলেন, বর্তমান বাজারে অন্তত ২৫ হাজার টাকার কম মজুরিতে কারও পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা আরও বলেন, শিল্পের উন্নয়ন হলে তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও এদেশে কেবল মালিকের উন্নয়ন হচ্ছে। মালিকদের মুনাফা বেড়ে চললেও শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে না। তারা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে রাষ্ট্র এতোটাই স্বৈরতান্ত্রিক যে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির দাবির কথাও শুনতে চায় না। বক্তারা মজুরি বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকের জন্য রেশনিং, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান। 

মতবিনিময় সভা থেকে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’-এর ৭ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির বিপদকালে কালক্ষেপণ নয়, মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম দ্রুত পরিচালনা ও মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে। বেসিক কমিয়ে নয়, ন্যূনতম ৬০% বেসিক ধরে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। নতুন মজুরি ঘোষণার আগ পর্যন্ত ৬০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।  পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে ৭ গ্রেড কমিয়ে ৫ গ্রেড করতে হবে।

শেয়ার করুন