২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:০৬:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
‘সরকার দেশে সংঘাত সৃষ্টি পায়তারা করছে’
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৭-২০২৩
‘সরকার দেশে সংঘাত সৃষ্টি পায়তারা করছে’


ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন ক্ষমতাসীনদের পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ‘সরকার দেশে সংঘাত সৃষ্টি পায়তারা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবারের সমাবেশ উপলক্ষ্যে দলের এক যৌথ সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব সংবাদ ব্রিফিঙে এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিগণ তারা উস্কানিমূলক কথা বলছেন এবং একই সঙ্গে উস্কানিমূলক কাজও করছেন। যেমন আপনার… যুব লীগ তাদের প্রোগ্রাম ছিলো ২৪ জুলাই। আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার পরে তারা সেটা ২৭ জুলাই পরিবর্তন করেছেন। এটা পরিস্কারভাবে একটা সংঘাতমূলক অবস্থা সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই তারা এটা করছেন। এটা কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। আমি পরিস্কারভাষায় বলতে চাই, যদি কোনোরকম কোনো আনট্রুয়ার্ড ইনসিডেন্ট হয় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব কিন্তু সরকারকে বহন করতে হবে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন করে এসেছি প্রতিটি আন্দোলন আমাদের শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে, আমাদের ওপর বহু আক্রমন করেছে, আমাদের বহু লোককে আহত করেছে, নিহত হয়েছে… তারপরও আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোল চালিয়ে যাচ্ছি। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে-কোনো কিছু ঘটেনি এরপরেও মিথ্যা মামলা যার কোনো অস্তিত্ব নাই… ৯ হাজার আসামী করেছে(সম্প্রতি)। তারপরও আমরা অত্যন্ত সংযত অবস্থায়,শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিকভাবেই আমরা জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করব, এই ভয়াবহ সংঘাতমূলক পরিস্থিতি পরিহার করবে আওয়ামী লীগ, তার যুব লীগ এবং সরকারও সেটা নিশ্চিত করবে।”

মহাসমাবেশে আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ এটা তো করছেই তারা।আপনারা দেখেছেন যে, এতো কিছুর পরেও কোনো সমাবেশকে তারা আটকাতে পারেনি। আপনারা নৌকায় পার হয়েছে, বেলায় পার হয়েছে, হেটে এসেছে…। মানুষের আগ্রহ এতো বেশি যে পরিবর্তনের জন্য যে, তারা যেভা্বে হোক এই মহাসমাবেশে উপস্থিত হবেন।”

‘মহাসমাবেশের ভ্যানু প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ মহাসমাবেশের জন্য আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি। আমরা আশা করছি যে, আজকের মধ্যেই এব্যাপারে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা আজ-কালের মধ্যে তা জানিয়ে দিতে সক্ষম হবো। আমরা আশা করবো, কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবেন এই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মহাসমাবেশ সফল করতে সহযোগিতা করবেন।”

 

মহাসমাবেশে জনগনের জন্য কি বার্তা থাকবে… জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ এই মহাসমাবেশে সমগ্র বাংলাদেশের সমগ্র মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি। আগে যেসব সমাবেশ ছিলো যেমন তারুণ্যের সমাবেশ… এসব তিনটি সংগঠনের কর্মসূচি ছিলো। আর এই সমাবেশ হচ্ছে সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সংগঠন… আবার যুগপত আন্দোলনে যুক্ত দলগুলো আছে। সব মানুষকে নিয়ে আমরা এই মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছি।

‘‘ আর মহাসমাবেশের বার্তা একটাই … পদত্যাগ। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করা।”

আন্দোলনের সফলতার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এখানে তো জনগন নেমে পড়েছে, এটা জনগনের আন্দোলন। এই আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। এটা অন্যভাবে…। আওয়ামী লীগ তো হরতাল ভাঙার দলে পড়ে গেছে। তারা জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগনের বেশিরভাগ আমরা বলব, ৯৯% জনগন এই পরিবর্তন চায় এবং সেই আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েছে।’

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে মহানগর বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও আশ-পাশের জেলাসমূহের নেতৃ্বৃন্দের এই যৌথ সভা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় ঢাকা মহানগর উত্তরের আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিনের আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মোস্তাক মিয়া, অনিন্দ্য  ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, মাহবুবুল হক নান্নু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বিনজীর আহমেদ টিটো, এম এ খালেক, হারুুনুর রশীদ, জেলার আফরোজা খানম রীতা, ঢাকা জেলা খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, গাজীপুর জেলা ফজলুল হক মিলন, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন প্রমূখ ছিলেন।  

অঙ্গ ও সহযোগী সংসগঠনের মধ্যে মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, উলামা দলে শাহ নেছারুল হক,  ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ নেতারা ছিলেন।

‘এই দাবি শুধু বিএনপি নয়, সব দলের দাবি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা শুধু বিএনপির দাবি নয়, সমগ্র মানুষের দাবি। আজকে কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাহেবের বক্তব্য পত্রিকায় দেখলাম… তিনি পরিস্কার করে বলছেন যে, সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত, পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা রাস্তা করে দেয়া উচিত। চরমোনাইয়ের পীর সাহেবের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন তারা পরিস্কার করে বলছেন যে, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। জাতীয় পার্টি যারা সময় মোটামুটিভাবে সংসদে কাজ করেছেন, তারাও পরিস্কার করে বলেছেন যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না, এই সরকারের অধীনে সিলেকশন হয়। সুতরাং এদেশে আর কোনো রাজনৈকি দল অবশিষ্ট নেই যারা মনে করেন যে, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।”

তিনি বলেন, ‘‘ বার তারা(সরকার) সংবিধানের কথা বলেন। ওই সংবিধান যে সংশোধন করেছে পঞ্চদশ সংশোধনী… এটা সম্পূর্ণ ভাবে অসাংবিধানিকভাবে সংশোধন করা হয়েছে যেটা অবৈধ। সেই কারণে এই সরকারও অবৈধ। এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে… সেটাই আমাদের প্রধান দাবি।পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলন শুরু হয়েছে। এক দফা আন্দোলনে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তারা আজকে রাজপথে নেমেছে। আমার বিশ্বাস জনগনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার বাধ্য হবে যে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।”

ফখরুল বলেন, ‘‘গোটা জাতির কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে যে, আজকে সময় এসেছে বাংলাদেশের মানুষের তাদের নিজেদের অধিকারের ফিরে পাবার আন্দোলনে নেমে পড়ার জন্য। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই, এই আন্দোলন সফল হবে, জনগনের যে যুদ্ধ, যে সংগ্রাম এটা সফল হবে।”

‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রতি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আমার প্রতি অনুরোধ থাকবে, এই আন্দোলন জনগনের আন্দোলন। এই আন্দোলনে আপনাদের একাত্মতা ঘোষণা করা উচিত এজন্য যে এই আন্দোলন জনগনের আন্দোলন।এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংবিধানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমাদের মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনতে চাই, আমাদের হারানো অধিকার ফিরে পেতে চাই, ভোট দিয়ে সংসদ তৈরি করতে চাই… এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। আপনাদের মাধ্যমে এটাও জানাতে চাই, যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন তাদের প্রতি বলতে চাই, আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি, বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, জনগনের যে দাবি সেই দাবির প্রতি সকলের সমর্থন থাকবে.. এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

 

‘নির্বাচন না হলে ইইউর পর্যবেক্ষন পাঠানো অর্থহীন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা আগেই বলেছি, যেখানে নির্বাচনই হবে সেখানে পর্যবেক্ষক পাঠানো অর্থহীন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্ববেক্ষক পাঠাবেন কি পাঠাবেন না এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা মনে করি, এখানে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন না হলে সেখানে পর্যবেক্ষক পাঠানো অর্থহীন। এখানে যদি আমরা অংশগ্রহন না করি, বিরোধী দল যদি অংশ না নেয় তাহলে তো সেই নির্বাচন তো নির্বাচন হবে না। সুতরাং সেখানে পর্যবেক্ষক পাঠানো অর্থহীন হবে।”

 

শেয়ার করুন