৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


মানবাধিকার নিয়ে প্রতিবেদন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা কমছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা কমছে


বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা, হানাহানি ও হতাহতের ঘটনায় নাগরিক জীবনে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকার বিপরীতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে অতি উৎসাহি অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এতে করে সুষ্ঠু রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের অধিকারের লংঘন ঘটেছে। 

মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন জুলাই ২০২৩’এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হচ্ছেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

রিপোর্টে বলা হয় বিরোধী দল বিএনপি যেহেতু মনে করে বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর নহে। আর এজন্য দলটির সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, অর্থাৎ তাদের ভাষায়, তাঁরা এক দফার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও তাদের সমাবেশ হতে এক দফার ঘোষণা দিয়েছেন এবং দাবি করছেন আগামী নির্বাচন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই হতে হবে। বিরোধী দলীয় কর্মকান্ডকে চলমান রাখতে দেশব্যাপি বিভাগীয় ও জেলাগুলোতে পদযাত্রার ও পরবর্তীতে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগও প্রতিহতের কর্মসূচি দিয়েছে। এটা কেবল অগণতান্ত্রিক নয় বরং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি। ক্ষমতাসীন দলের সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকার বিপরীতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে অতি উৎসাহি অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এতে করে সুষ্ঠু রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ৪৬ টি ঘটনায় বিএনপির বিরুদ্ধে ৪১টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এ সমস্ত মামলায় ১২৭০২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২১৭৪ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ১১৯ জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ মামলাগুলোতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০৫২৮ জনকে।

এ মাসে ৪১টি রাজনৈতিক মামলার মধ্যে ৩৭টি বিএনপির বিরুদ্ধে, ২টি জামায়েত ইসলামী বাংলদেশের বিরুদ্ধে, ২টি মামলা করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়েত ইসলামী বাংলদেশ যুক্তভাবে। মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ ৩৩ টি, আওয়ামী লীগ ৫টি, আইনজীবী ২টি এবং সরকারি বাঙলা কলেজের অফিস সহকারী করেছেন বিএনপির বিরুদ্ধে একটি মামলা। জুলাই মাসে ৪১টি রাজনৈতিক মামলায় মোট ১৩৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১১০৭ জন বিএনপি, ৯১ জন জামায়েত ইসলামী কর্মী, ৩ জন যুবক যারা ঢাকা যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদেশ যাবে বলে, এবং ১৬৩ জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে বিএনপির ১৩ জন কর্মীকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপির দাবি, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় ভবঘুরে, অভ্যাসগত ইত্যাদি অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তাঁদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ভবঘুরে হিসেবে গ্রেফতার এক নতুন আলামত। এ মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৭৬৯ জন। জুলাই মাসে গণমাধ্যমে সূত্র অনুযায়ী নির্বাচনী, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ঘটনায় মোট ৭৬৫ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১ জন পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে কৃষক দলের কর্মী এবং ৩ জন যুবলীগের কর্মী ।

এমএসএফ’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুলাই’য়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন, তাদের পরিচয়ে অপহরণের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা ও পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা নিদারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা অব্যহত রয়েছে। কারা-হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে যা উদ্বেগজনক, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটেই চলেছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। একই সাথে প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। 

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তিনজন বিরোধী দলীয় কর্মীকে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে, অপর একটি ঘটনায় জানা যায় একই পরিবারের শিশুসহ তিন সদস্যকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একমাস পর মামলা দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। 

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে কারা হেফাজতে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ মাসে ৫ জন হাজতি ও ৫ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ৬ জুলাই মধ্যরাতে নীলফামারী জেলা কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে হাজতি দুলাল হোসেন আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় আহত হাজতিকে কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ হেফাজতে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও বেল্ট দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার/অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে ও এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে তাঁর মতামত প্রকাশে বাঁধাগ্রস্থ করা ও ভয় দেখানোর বিষয়টি ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে চলেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুলাই ২০২৩ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫টি মামলায় ৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১ জন বিএনপি কর্মী এবং ১ জন সাধারণ যুবক রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে। অপর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। এ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাভার থানায় দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জুন মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৭টি মামলায় ২ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন 

স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এ মাসে অন্তত ১২ জন সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করছে। শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় বরং তার মাধ্যমে সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ মাসে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র উদ্বেগজনক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ১২ জন সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

শেয়ার করুন