০১ মে ২০১২, বুধবার, ০৫:০২:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


দেশকে পাশা খন্দকার
ব্রিটেনে নতুন প্রজন্ম যেটা করতে পারেনি, আমেরিকানরা তা পারে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
ব্রিটেনে নতুন প্রজন্ম যেটা করতে পারেনি, আমেরিকানরা তা পারে পাশা খন্দকার


বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত পাশা খন্দকার এমবিই সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ, যিনি বিসিএ নেতা হিসেবেই সমধিক খ্যাত। যুক্তরাজ্যে রেস্টুরেন্ট মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ) ইউকের ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছিলেন বিসিএর সেক্রেটারি জেনারেল। প্রায় ১৬ বছর কারি ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্বে থাকার ফলে রাজনীতি, মিডিয়া কিংবা সমাজসেবা সবকিছুর ঊর্ধ্বে বিসিএ নেতা হিসেবেই তার আলাদা একটা পরিচিতি ও ভাবমূর্তি আছে। তিনি যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা ৫০-এর দশকে ব্রিটেনে কারি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আমি যখন ৮০ দশকে লন্ডনে কারি ব্যবসা শুরু করি, তখন রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০ হাজার। একসময় সেই ব্যবসার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এখন আর সেই রমরমা ব্যবসা নেই। অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্টাফ সংকট, প্রতিটি জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি এই ব্যবসায় দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে। আমাদের এই আইটেম বলতে পারেন লাক্সারি আইটেম। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষ লাক্সারি আইটেম খুব একটা খেতে চায় না। আমরা এই ব্যবসাকে সত্যিকারভাবে ডাইভারসিটি আইটেমে পরিণত করতে পারিনি। সোজাকথা আমাদের যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, আমরা সেখানে যেতে পারিনি। তাছাড়া বর্তমানে ডিজিটাইলাইজেশনের কারণেও সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা আনলাইনের ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। আমরা এজন্য প্রতিনিয়ত ফাইট করছি। আমাদের সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। তারপরও সবকিছু সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। একসময় আমরা চাইনিজদের তাড়িয়েছি। এখন মানুষ অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। তারা মসলা দিয়ে খাবার খেতে চায় কম। এই জায়গাটি দখল করে নিচ্ছে তার্কিশ এবং লেবানিজরা। যদিও মেইন স্ট্রিম থেকে এই ব্যবসায় আমরা স্বীকিৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, নানাবিধ কারণে ব্রিটেনে কারি ইন্ডাস্ট্রি এখন রুগ্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে বলতে পারেন। তবে একটি কথা বলতে পারি, আর সেটি হচ্ছে, এই ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকবে। কারণ কারি এখন আর আমাদের খাবার নয়, কারি এখন ব্রিটিশদের খাবার, ব্রিটিশ ফুড।

ব্রিটেনের রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পাশা খন্দকার বলেন, বর্তমানে ব্রিটেনে যারা ক্ষমতায়, তারা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। যে কারণে সরকার পরিচালনায় বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির লেজে গোবরে অবস্থা। বিশেষ করে ব্রিক্সিট থেকে বেরিয়ে আসার পরে যে অর্থনৈতিক চাপ তা তারা সামলাতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের বিদায়ের পর লেবার পার্টিও নেতৃত্বের শূন্যতায় ভুগছে। নেতৃত্বের কারণে লেবার পার্টি আশানারূপ সফলতা পায়নি। তাছাড়াও করোনা-পরবর্তী যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি তো সারাক্ষণ মিথ্যা কথা বলতেন। নিজে সত্য না হলে ন্যাশন চালাবেন কীভাবে? তিনি বলেন, কনজারভেটিভ পার্টির ক্রাইসিস এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তাদের কোনো ক্ষমতা নেই, কী দেশের ক্ষেত্রে, কী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে আবারও লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসবে।

ব্রিটেনে নতুন প্রজন্ম নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পাশা খন্দকার বলেন, ব্রিটেনে এখন চতুর্থ প্রজন্ম চলছে আর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম। ব্রিটেনে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম খুবই ভালো করছে। তারা লেখাপড়ায় শীর্ষে। ব্রিটেনের অর্থনীতির চাকা তাদের হাতে। তবে তাদের মধ্যে ঐক্য নেই। তারা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে কিছু দিচ্ছে না, তারা নিজেদের মতোই আছে। আবার রাজনীতিতেও তাদের আগ্রহ নেই। অথচ এই রাজনীতিই হচ্ছে পরিবর্তনের আসল হাতিয়ার, দাবি আদায়ের আসল হাতিয়ার। রাজনীতিই হচ্ছে আসল শক্তি। এটাও সত্যি, আমরা তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। রাজনীতিতে আনতে পারিনি বা উৎসাহিত করিনি। তবে আমি মনে করি, ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের নতুন প্রজন্ম যেটা করতে পারেনি, সেটা আমেরিকায় বাংলাদেশিদের নতুন প্রজন্ম সেটা করতে পারে। ব্রিটেনের নতুন প্রজন্মের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমেরিকায় বাংলাদেশি প্রজন্ম এখন ওবামাও সৃষ্টি করতে পারে। যেটা ব্রিটেনে ভারতীয়রা করেছে। যে কারণে তারা এখন ব্রিটেনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

পাশা খন্দকার সিলেট শহরের একটি বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম খন্দকার নুরুর রহমান। তবে তিনি পাশা খন্দকার হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। বাবা খন্দকার আব্দুল মুছাব্বির ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নেভিতে কাজ করেছেন। ষাটের দশকে লন্ডন চলে যান।

ছেলেবেলায় চট্টগ্রামে চাচার কাছে বড় হয়েছেন পাশা খন্দকার। চাচা খন্দকার আব্দুস সবুর সিভিল সার্ভেন্ট ছিলেন। তার আরেক চাচা খন্দকার আব্দুল মালিক ১৯৭৯ সালে সিলেট-১ সংসদীয় আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সংসদ সদস্য ছিলেন।

পাশা খন্দকার অষ্টম শ্রেণি থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একসময় বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম সিটি কমিটির এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সিলেট এমসি কলেজে চলে আসেন। এখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সিলেট শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রজীবনেই বাংলাদেশের রাজনীতির অবিসংবাদিত নেতা মওলানা ভাসানীর সাহচর্য পেয়েছেন পাশা খন্দকার।

পাশা খন্দকার এমসি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৮০ সালে লন্ডন চলে যান। ১৯৯০ সালে গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ী গ্রামের সুহেল আহমদ চৌধুরীর মেয়ে দিপিকা চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যবসায়িক জীবনে পাশা খন্দকার ১৯৮৪ সালে লন্ডনের কেন্টে গান্ধী তান্দুরী রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নিউ রমনি এলাকায় কারি লাউঞ্জসহ কেন্ট ও সারেতে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট করেছেন।

এছাড়াও পাশা খন্দকার সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিসিএসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণসহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

পাশা খন্দকার লেবার পার্টির সিনিয়র অ্যাকটিভিস্ট। দুই বছর সিএলপির দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে জড়িত ছিলেন। লেবার পার্টির সিনিয়র নেতা হিলারী বেন ও স্যার কেয়ার স্টারমার জন্যও কাজ করেছেন। তিনি বর্তমানে লেবার পার্টির ডাইরেক্টর (কমার্শিয়াল) হিসেবে কাজ করছেন।

২০১৮ সালে ব্রিটেনের রানির জন্মদিনে পাশা খন্দকার ‘মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার (এমবিই)’ খেতাব পেয়েছেন। বাংলাদেশি ক্যাটারিং ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের বিশেষ অবদান ও স্থানীয় এলাকা কেন্টের আইলসফোর্ডে কমিউনিটিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইউকের উপদেষ্টা।

শেয়ার করুন