২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:১৩:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে রুনা লায়লা
গানেই জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দিলাম
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
গানেই জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দিলাম রুনা লায়লা


রুনা লায়লা। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্ম। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী, ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীতশিল্পী। রুনা লায়লা তাদের দ্বিতীয় সন্তান। মামা সুবীর সেনও ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের সংগীত ক্যারিয়ারে ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান তিনি কণ্ঠে তুলেছেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: সঙ্গীতে আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ার। এত লম্বা সময়ে নিশ্চয়ই অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে। এই বাধা মোকাবেলার গল্পটা শোনতে চাই।

রুনা লায়লা: আসলে আমি বিপদ দেখে কখনোই ভেঙে পড়িনি। ওপরওয়ালার ওপরে অনেক বেশি বিশ্বাস ছিল। সব সময় ভেবেছি, আমার মধ্যে যদি ট্যালেন্ট থাকে, সব বাধা অতিক্রম করব। আমার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল, মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। এটা কোনোভাবে আমাকে মন খারাপ বা হতাশায় পড়তে দেয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, আমার পরিবারের সদস্যরা সব সময় পাশে ছিল।

প্রশ্ন: বিষয়টি যদি আরেকটু খোলাসা করতেন।

রুনা লায়লা: আমার সমস্যাগুলো নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তাই আমার গান সম্পর্কে যেমন শ্রোতারা জানত, তেমনি আমার সঙ্গে যা ঘটছে, এসবও তারা জানত। আমার পরিবারও জানত। এত বেশি লেখালেখি হয়েছিল যে আমার কাউকে বলতেও হতো না। আমার সঙ্গে কেন এমনটা হচ্ছে, সেটাও ভক্তদের বুঝতে সমস্যা হয়নি। আর এসব নেতিবাচক বিষয়ে আমি উত্তেজিত হয়েছি বা ভয় পেয়ে গেছি, তেমনটা কখনো ঘটেনি। যারা আমাকে নিয়ে নেগেটিভিটি ছড়াচ্ছে, তাদের ভুল একদিন ভাঙবে, এই বিশ্বাস ছিল। সব সময় ভেবেছি, আল্লাহ তাআলা সব দেখছেন, ভালো করলেও সেটার বিচার পৃথিবীতে পাওয়া যায়, খারাপ করলেও হয়। তাই মন থেকে কখনো কাউকে বদদোয়া দিইনি, দেবও না। সব সময় যারা আমার বিপক্ষে গেছে, তাদের সম্পর্কে ভালোই বলেছি। আমি আমার মতো আছি। গান নিয়ে আছি, পরিবার নিয়ে হ্যাপি আছি। তাই কে কী বলল, তা নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না। পরোয়াও করি না। আমি সব সময় সোজা পথে চলেছি। কারও ক্ষতি করিনি, করার ইচ্ছাও ছিল না, নেইও। কোনো দিন হবে না। যতটা পারব মানুষের উপকার করব, সে যতটা আমার সঙ্গে খারাপ করুক। প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা কোনো দিন জাগেনি, জাগবেও না। আমি সে ধরনের মানুষও নই।

প্রশ্ন: জীবনকে কীভাবে দেখেন?

রুনা লায়লা: জীবনটাকে সবসময় ইতিবাচকভাবে দেখি এবং সবকিছু ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবি। এই সময়ে এসেও চিন্তা করি নতুন কী করা যায়। সেভাবে কাজও করি। নতুন নতুন গান ও গানের সুরও করি। গানের মধ্যেই জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিলাম। বাকি দিনগুলোও কাটাতে চাই।

প্রশ্ন: ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার আফসোস কিংবা অপূর্ণতা আছে?

রুনা লায়লা: অনেক পেয়েছি। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। চাওয়ার চেয়ে বেশিই দিয়েছেন। আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। অপূর্ণতা নেই। এত মানুষের ভালোবাসা-সম্মান পাচ্ছি, এটা অনেক। সেজন্য আফসোস করি না। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এখনো গান করি। এখনো কনসার্ট করি।

প্রশ্ন: আপনি প্রায়ই নতুনদের নিয়ে কাজ করেন। এর কারণটা জানতে চাই।

রুনা লায়লা: আমি চাই নতুনরা এগিয়ে যাক। অনেক দূর যাক। আমি চাই তারা ভালো করুক। সেরা কণ্ঠসহ আরও ইভেন্ট থেকে অনেক নতুনরা এসেছে। তারা অনেক কাজ করছে। অনেক গান করছে। দেশে করছে, বিদেশে করছে। স্টেজে করছে, টেলিভিশনেও করছে। তাদের মধ্যে ভালো সম্ভাবনা আছে। উৎসাহ দিলে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার ও সামনে পথচলার অনুপ্রেরণা পায়। এটা দরকার। আমি ভালোবাসা থেকেই তা করি। নতুনদের ভালোবাসি, তাদের গান ভালোবাসি, সেজন্য উৎসাহ দিই। কখনো কখনো তাদের ফোনও করি।

প্রশ্ন: সঙ্গীত জীবনের বড় প্রাপ্তি কি?

রুনা লায়লা: সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। সংগীতজীবনে অনেক গান করেছি। সুযোগ হয়েছে তিন দেশে অনেক গান করার। তাদের ভাষায় গান করেছি। তিন দেশেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটাও বিরাট পাওয়া। এটাও আনন্দের ঘটনা। মানুষ আমার গান গ্রহণ করেছেন। তিন দেশ মিলিয়ে বহু গান করেছি। সংগীতজীবনের বড় প্রাপ্তি এটি। আরও অনেক দেশে গান করেছি। যেখানেই গান করেছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

প্রশ্ন: অবসরে আপনি কার গান শোনেন?

রুনা লায়লা: আমি সবার গান শুনি। সিনিয়র শিল্পী থেকে শুরু করে তরুণদের গানও শুনি। মনে করি সবার কাছ থেকে কিছু না কিছু শেখার আছে। সিনিয়রদের কাছ থেকে একরকম করে শিখি। তরুণদের কাছ থেকে আরেকরকম করে শিখি। সেজন্য সবার গান শুনি।

প্রশ্ন: মা নাকি বাবা, আপনার জীবনে কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি?

রুনা লায়লা: মা তো আমার সঙ্গে সব সময় থাকতেন। ছোট বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেছি। আব্বাও থাকতেন। দু’জনেরই সমর্থন ছিল। বড় বোনেরও ছিল। ভাইয়েরও। তবে মায়ের খাটুনি বেশি হয়েছে। সবারই অবদানে আমি।

শেয়ার করুন