২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৩৪:২৬ পূর্বাহ্ন


বাঘা যতীনদের লড়াইই স্বাধীনতা পাওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা এনেছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
বাঘা যতীনদের লড়াইই স্বাধীনতা পাওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা এনেছে শহিদ বাঘা যতীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে মঞ্চে অতিথিবৃন্দ


বাঘা যতীনদের বিপ্লবের ইতিহাস গাথা যদি পৌঁছে না দিই, তাহলে দেশের ক্রান্তিলগ্নে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে কে? যে লড়াই প্রীতিলতা, মাস্টারদা সূর্যসেন, বাঘা যতীন এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু শুরু করেছিলেন, তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ বাঘা যতীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ ও আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। 

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ে শহিদ বাঘা যতীনের ১০৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক নাগরিক সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখা। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহান শহিদকে স্মরণ করার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র এবং একে প্রতিহত করার লক্ষ্যে নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে এই সমাবেশে আলোচনা করা হয়। সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম আবুল মনছুর মজনুর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্র্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমারখালী পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুণ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের আহ্বায়ক শহিদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর তন্ময়।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল, কুমারখালী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফ হোসেন, কুমারখালী নাগরিক পরিষদের সভাপতি আকরাম হোসেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী মমতাজ বেগম, কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয় সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান জোয়াদ্দার, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. আলি হোসেন, কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ  হারুন-অর-রশীদ।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল বলেন, ‘আমরা ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দেখতে পাই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পাশাপাশি শৃঙ্খলমুক্ত মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঘা যতীনসহ আরো অনেক বিপ্লবী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অন্যদিকে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস অহিংস আন্দোলন পরিচালনা করে। এই দুই আন্দোলনের যুগপৎ ব্যবহার করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অহিংস আন্দোলন চালিয়ে গেলেও প্ল্যান বি হিসেবে ভেবে রেখেছিলেন সশস্ত্র আন্দোলন এবং গোপনে এর প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি বাংলার নির্যাতিত মানুষকে পাকিস্তানি হানাদারদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন এবং চূড়ান্ত বিজয়ের পরে তিনি বলেন, যে লড়াই প্রীতিলতা, মাস্টারদা সূর্যসেন, বাঘা যতীন এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু শুরু করেছিলেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে।’

কাজী মুকুল আরো বলেন, ‘আমরা এমন এক সময় অতিবাহিত করছি, যখন বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশে মানবতার চিরশত্রু মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাদের ভয়াল ফণা বিস্তার করে বারবার ছোবল দিচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর। তিনি বলেন, আমরা চাই ৩০ লাখ শহিদের রক্তের মূল্যে অর্জিত পবিত্র জাতীয় সংসদে আমাদের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারাই যাবেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, যারা জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করেন না, যারা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নন, যারা প্রকৃত অর্থে এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী মমতাজ বেগম বলেন, ‘বাঘা যতীনের লড়াইয়ের ইতিহাস এবং তার দর্শন ও চেতনাকে যেমন জানতে হবে, তেমনি মা সরস্বতী দেবী কীভাবে সন্তান যতীনকে বিপ্লবী বাঘা যতীন হিসেবে গড়ে তুললেন তার ইতিহাসও জানতে হবে। আজ সাম্রাজ্য বিস্তারকারী শকুনের দৃষ্টি চারদিকে। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের বাঘা যতীনদের বিপ্লবের ইতিহাস গাথা পৌঁছে না দিই, তাহলে দেশের ক্রান্তিলগ্নে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে কে?’

শহিদ স্বাধীনতাসংগ্রামী বাঘা যতীনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মূল কমিটির আইটি সেলের আহ্বায়ক শহিদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, আগামী নির্বাচনে যাতে দেশের সব নাগরিক শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে পূর্বাহ্নে নিশ্চিত করতে হবে। যেসব এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আবাস তুলনামূলকভাবে বেশি, সেসব অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করুন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার দায় একা শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম আবুল মনছুর মজনু সভাপতির ভাষণে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন পঁচাত্তরের সেই অপশক্তি উঠেপড়ে লেগেছে বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণের জন্য। সভার সব আলোচক কয়া মহাবিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহিদ বাঘা যতীন কলেজ’ নামকরণের দাবি জানান।

শেয়ার করুন