২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৩৫:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


বাংলাদেশ সম্মেলনে ড. আবু জাফর মাহমুদ
বিভক্তি নয়, এখন যুদ্ধ হবে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
বিভক্তি নয়, এখন যুদ্ধ হবে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের এওয়ার্ড প্রদান করছেন ড. আবু জাফর মাহমুদ


বাংলাদেশি শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য সংরক্ষণের প্রত্যয় নিয়ে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিওট হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুদিনব্যাপী পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলন। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। দু’দিনেই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশির জীবন বাস্তবতার আলোকে দিক নির্দেশনাধর্মী বক্তব্য রাখেন তিনি। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের বাংলাদেশি জনগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশিদের মধ্যে বিভক্তি, হিংসা ও হানাহানির দলীয় রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ বাতাস নয়। দেশ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা এক হই। তাহলে কেন আমরা বিভক্তির সংস্কৃতি ও রাজনীতি পোষণ করবো? যারা আমাদের বিভক্ত করে আমরা কেন সেই রাজনৈতিক দলনেতা ও দলগুলিকে অনুসরণ করবো? যারা একে অন্যের বিরুদ্ধে হত্যায় লেলিয়ে দেয়, ঘৃণায় লেলিয়ে দেয়, পারিস্পারিক বিভক্তিকে অনিবার্য করে তোলে, আমরা তাদের আর সমর্থন করবো না। এখন জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে আমাদের একতা’র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন সম্মেলনের চেয়ারম্যান ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নুরুল আজিম, সম্মেলনের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এমডি আব্দুর দিলীপ ও সম্মেলনের সদস্য সচিব ও শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম।

প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমেরিকার বুকে বাংলাদেশের নামে এই সম্মেলন আমাকে নয় শুধু গোটা বাংলাদেশি সমাজ ও আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। এর আয়োজকরা যেভাবে একতার ঢেউ তুলে চলেছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। যখন আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বিভক্ত রূপ দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন স্থানে ফোবানা’র ছয়টি অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের ভাই ও বন্ধুরা, তাঁরাও আমাদের আপনজন, এভাবে বাংলাদেশের বিভক্ত রূপ দেখিয়ে কী আনন্দ পেয়েছেন আমি জানি না। যেভাবে রাজনীতিতে আমাদের বিভক্ত করা হয়, এক গ্রুপ দিয়ে আরেক গ্রুপকে হত্যা করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়, সেভাবেই আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ছি। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সম্মেলন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর প্রতি তার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানিয়ে বলেন, তার অধিনায়কত্বে যুদ্ধ করে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। অথচ যুদ্ধের রাজনীতিতে তাকে হারিয়ে দেয়া হয়। আমরা হেরে যাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন বলেন, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আগরতলা থেকে হেলিকপ্টার যোগে যখন কুমিল্লায় গিয়ে ভারতীয় জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাকে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত করা হয় ও সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এটা হচ্ছে যুদ্ধের রাজনীতি। এই যুদ্ধে আমরা হেরে গেলাম। আমরা আর আমাদের জেনারেলকে পাইনি। তিনি বলেন, জেনারেল আপনি নেই, আমি আবু জাফর মাহমুদ এখন জেনারেল। আপনার নেতৃত্বের শক্তি ধারণ করি। আমরা আগামীর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।

স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশ সম্মেলনে উপস্থিত শিল্পীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের বড় বড় শিল্পীদের কূটনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগিয়ে থাকে। বহির্বিশ্বে একটি দেশের পরিচিতিসহ বিভিন্নমুখী উৎকর্ষের প্রশ্ন শিল্পীদের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা সে কাজটি করতে পারিনি। আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার এ পর্যন্ত সে চিন্তাটি করেনি। শিল্পীদের দায়িত্বটি অনেক বড়। তাদের কূটনৈতিক কাজে মনোযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি যেখানেই থাকুক আমাদের মধ্যে একতা সৃষ্টির কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এই কাজে আর দেরি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে একতা একদিন আমাদের যুদ্ধ শিখিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে যে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সেই একতার কাছে ফিরতে হবে। আমাদের সামগ্রিক মুক্তির জন্য একতার কোনো বিকল্প নেই।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই আমেরিকায় আমরা যখন সারা পৃথিবীর নেতা, আমেরিকা যখন নের্তৃত্ব করে আমরাও নের্তৃত্ব করি। দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা যেন পরিষ্কার থাকি। যুদ্ধের সময় আমরা যখন যুদ্ধ করেছি, তখন ঢাকার মিরপুরে বিহারিরা ছিল। বিহারিরা এই ভূমির সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিরোধীতা করেছে। এই আমেরিকায় বসবাস করেও অনেকে আমেরিকাকে গালি দেয়। ঠিক ওই বিহারির মতো। আমি তেমন বিহারি নই। বাংলাদেশে থেকে যারা আমাদেরকে এখানে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করছে যে রাজনৈতিক দলনেতা আমাদেরকে উল্টোপথে ঠেলে দেয়। পৃথিবীর দেশে দেশে দেশের সংগঠনের শাখা কমিটির অনুমোদন দেয়, তারা দেশদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী; বাংলাদেশের জন্য মুনাফেক।

দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, সকল সেক্টর কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সকল কর্মীদের মাধ্যমে ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রিয়া ডান্স একাডেমির সৌজন্যে নৃত্য পরিবেশন করেন প্রবাসী নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশ ও প্রবাসের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। বাউল সম্রাট পবন দাস বাউল পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন। উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী প্রমি তাজ, রায়হান তাজ, সেলিম ইব্রাহিম, নীলিমা শশী, চন্দ্রা রয়, শামীম সিদ্দিকী, শাহ মাহবুব, শারিন সুলতানা, বাঁধন ও আফতাব জনি।

দ্বিতীয় দিন কাব্য জলসার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে ও বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম কবি কামাল চৌধুরী। কবিকে নিয়ে  চমৎকার কাব্য জলসা বসেছিল বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে। উপস্থাপন করেছেন বিশিষ্ট ছড়াকার মনজুর কাদের। দ্বিতীয় দিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ডঃ কামরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান বকুল,  ত্রিনিয়া হাসান, দীপ্তি, মিতু ও কৃষ্ণাতিথি।

আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, শাহ নেওয়াজ, জাকারিয়া চৌধুরী,  কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও মেয়র এরিক এডামসের  দক্ষিণ এশিয়ক বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলমান, সাহা  ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিও শহা জে  চৌধুরী ও  বাংলাদেশ সম্মেলনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান সেলিম এবং লস এঞ্জেলসের প্রিয় মুখ মমিনুল হক বাচ্চু। এদিন মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন ফ্রান্স থেকে আগত বাউল সম্রাট পবন দাস বাউল ও বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী টিনা রাসেল, প্রতীক হাসান, সেলিম চৌধুরী ও বিন্দুকনা।

পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও মূলধারা রাজনীতিবিদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, আর্তমানবতা সেবায় নিবেদিত শাহ ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আতাউর রহমান সেলিম, নুরুল আজিম, প্রিসিলা, চৌধুরী সরওয়ারুল হাসান এমডি, বেলাল চৌধুরী, দুলাল বেহেদু, আব্দুর দিলীপ ও বাংলা ট্রাভেলস এর প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও বিলাল হোসেনকে। 

উত্তর আমেরিকার সবার আনন্দময় উপস্থিতিতে এবারের পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলন শতভাগ সফল হয়েছে। বাংলাদেশি শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণই আমাদের প্রত্যয়। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ষষ্ঠ বাংলাদেশ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে দুই দিনের এই সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আলমগীর খান আলম।

শেয়ার করুন