২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:১৯:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আইপেক বয়কট জোট গঠন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
আইপেক বয়কট জোট গঠন


আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (আইপেক) ক্ষমতাকে মোকাবেলা করার জন্য ডেমোক্রেটিক প্রগতিশীল গ্রুপগুলো ‘বয়কট আইপেক’ নামক একটি জোট গঠন করে। ১১ মার্চ সোমবার থেকে ‘বয়কট আইপেক’ জোট প্রচারণা শুরু করে। নবগঠিত প্রগতিশীল গ্রুপগুলোর জোট আমেরিকার রাজনীতির মাঠে ইসরায়েল এবং গাজা নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক যুদ্ধে একটি নতুন ফ্রন্ট খুলেছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও ব্যাপক সামরিক আক্রমণের সমালোচক উদারপন্থী কংগ্রেস সদস্যদের প্রাইমারি নিবার্চনে ও আগামী নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত করতে ইসরায়েলপন্থী পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (আইপেক) মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআইপিএসি আগামী নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ইসরায়েলের সমালোচনাকারী ডেমোক্রেটিক মুসলিম ও উদারপন্থী কংগ্রেস সদস্যদের পরাজিত করার জন্য এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জোট আমেরিকার রাজনীতির মাঠে ইসরায়েলপন্থী পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি এআইপিএসির এই নোংরা কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করতে গত ১১ মার্চ সোমবার ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির পরিকল্পনা চ্যালেঞ্জ করে পলিটিক্যাল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটসের নেতৃত্বে ২০টিরও বেশি প্রগতিশীল গ্রুপ নিয়ে ‘বয়কট আইপেক’ নামক একটি জোট গঠন করেছে। নভেম্বরের প্রাইমারি নির্বাচনের আগে সব ইসরায়েলপন্থী গ্রুপগুলোর মুসলিমবিরোধী নোংরা কর্মকাণ্ড মোকাবিলা ও তাদের প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জ করে প্রত্যাখ্যান করতে এ মিশন যোগ দিতে আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানায়। এআইপিএসি বয়কট নামক জোটটিতে জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস, ইউএস ক্যাম্পেইন ফর প্যালেস্টাইন রাইটস অ্যাকশন, ইফ নাউ মুভমেন্ট, ওয়ার্কিং ফ্যামিলি পার্টি, সানরাইজ মুভমেন্ট, ইহুদি ভয়েস ফর পিস অ্যাকশন, এমপিপাওয়ার চেঞ্জ অ্যাকশন ফান্ড, সোইং আপ ফর রেসিয়াল জাস্টিস, সেন্টার ফর পপুলার ডেমোক্রেসি অ্যাকশন, আওয়ার রেভুল্যুশন, প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটস অব আমেরিকা, গ্রাসরুট গ্লোবাল জাস্টিস অ্যাকশন, জাস্টিস ইজ গ্লোবাল অ্যাকশন, ফিউচার কোয়ালিশন, পিস অ্যাকশন, ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিল অ্যাকশন, ইহুদি ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস, ড্রিম ডিফেন্ডার, আমেরিকার ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টসহ ২০টিরও বেশি প্রগতিশীল গ্রুপ নতুন জোট গঠনের জন্য একত্রিত হয়েছে। 

গ্রুপের নেতৃত্বাধীন সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটসের পরিচালক উসামাহ আন্দ্রাবি বলেন, আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি ইসরায়েলের সমালোচনাকারী ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যদের পরাজিত করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বা পরিকল্পনা করছে। তাদের সেই প্রচারণা অন্যভাবে নিরাপদে গণতান্ত্রিক ডিস্ট্রিক্টগুলোকে নির্বাচনী রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এরা মুষ্টিমেয় কালো এবং বাদামি প্রগতিশীল পদপ্রার্থী, যারা ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের হুমকির মুখে রয়েছে। তাই আমরা একত্রিত হয়েছি এবং তাদের মোকাবিলায় আমাদের রিসোর্স রয়েছে। আন্দ্রাবির মতে, তাদের কৌশলটি হলো একটি সাত অঙ্কের ‘নির্বাচনী প্রতিরক্ষা প্রচারের’ ফান্ড করা। ডেমোক্রেটিক পার্টির দীর্ঘদিনের মূল্যবোধ থেকে তৃণমূল সংগঠনগুলোকে সংযুক্ত করা, যার লক্ষ্য শুধু আইপেক দ্বারা টার্গেটকৃত কংগ্রেসের সদস্যদের রক্ষা করা নয়, বরং তাদের আলোকিত করা। তিনি আরো বলেন, আমরা কখনই সমতার মধ্যে থাকবো না এবং এটাই এর বাস্তবতা। এটি সব সময়ই ডেভিড বনাম গোলিয়াথ দ্বন্দ্বের মতো এবং এটি চলতেই থাকবে। আমাদের কাজ হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করা। জোটের লবিং প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনপন্থী সদস্য এবং প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারের পাশাপাশি জাতীয় ভোটকে হাইলাইট করার ওপর ফোকাস করা। 

কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলপন্থী পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির কিছু আইনপ্রণেতা, যারা এআইপিএসির সঙ্গে যুক্ত। তারা সিভিল লিবেটিজ নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেন। নতুন জোটের কৌশলের অংশ হলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এই ফাটলগুলোকে প্রকাশ্যে এনে ঐক্যবদ্ধ করা এবং তাদের বাধ্য করা। এআইপিএসির মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রচারাভিযানের অর্থকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা, যা ঐতিহাসিকভাবে ওয়াশিংটনে প্রচুর প্রভাব ফেলেছে। আইপেক গত কয়েক বছরে তার নিজস্ব কৌশলে একটি লবিং সংস্থা থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক ইসরায়েলপন্থী ডেমোক্র্যাটদের সাহায্য করার জন্য গঠিত হয়েছে। ২০২২ সালে আইপিএসি প্রাইমারিতে ডেমোক্রেটিক নেতাদের চ্যালেঞ্জ করা শুরু করে। ডেমোক্র্যাটরা যারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-নিউইয়র্কের জামাল বোম্যান, মিনিসোটার ইলহান ওমর, মিশিগানের রাশিদা তালিব, পেনসিলভানিয়ার সামার লি এবং মিসৌরির কোরি বুশ। যাদের সবাই কেবল যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি বরং ইসরায়েলে মার্কিন সহায়তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ২০২২ সালে এআইপিএসি প্রগতিশীল প্রার্থীদের লক্ষ্য করে প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ২০২৪ সালে গাজা যুদ্ধের কারণে এই চক্র বেশি পরিমাণ ডলার ব্যয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ডেমোক্রেটিক পার্টিতে গুরুতর সমস্যা তৈরি করছে। যার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্টেটে অসন্তুষ্ট ভোটাররা প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে তাদের মতামত নিবন্ধন করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুধু টোকেন বিরোধিতার মুখোমুখি হন।

মিশিগান আরব আমেরিকানদের বসবাসকারী একটি জনবহুল স্টেট। ২৭ ফেব্রুয়ারি ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে ১ লাখেরও বেশি লোক ‘আনকমিটেড’ ভোট দিয়েছে। এক সপ্তাহ পর ‘আনকমিটেড’ লাইনটি মিনেসোটাতে শতাংশের ক্ষেত্রে আরো বড় ফলাফল অর্জন করেছে। মিনেসোটা স্টেটে প্রায় ১৯ শতাংশ ভোটার ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে ‘আনকমিটেড’ ভোট দিয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট/ইউগভ পোল অনুসারে, ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলিদের চেয়ে সামান্য বেশি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। জরিপে দেখা গেছে যে, ২৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। সে তুলনায় ১৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ৩৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে, তারা উভয় পক্ষের প্রতি সমানভাবে সহানুভূতিশীল।

আইপেক কি? কারা এর সঙ্গে জড়িত?

আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি সংক্ষেপে আইপেক। যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল সমর্থিত একটি মার্কিন লবিং গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ও নির্বাহী শাখায় যাতে ইসরায়েলপন্থী নীতি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সে ব্যাপারে এরা নিরলস লবিং চালায়। আমেরিকা-ইসরায়েল নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হলেও এটিই মূলত আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়াও আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে সংস্থাটি। বলা যায়, পরোক্ষভাবে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিও এদের পরামর্শ অনুযায়ী করা হয়ে থাকে। এ কারণে দেখা যায় ক্ষমতায় যারাই আসুক না কেনো আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি সর্বদাই ইসরায়েলবান্ধব। এখানেই শেষ নয়, নির্বাচন থেকে শুরু করে আমেরিকান কংগ্রেসেও এদের লবিং রয়েছে। এজন্য সংস্থাটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলিত হয়ে মূলত লবিং করে থাকে। সংস্থাটি আমেরিকার নির্বাচনের ইসরায়েলপন্থী প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে, এমনকি আর্থিক সহায়তাও নিশ্চিত করে। এর ফলে আমেরিকান কংগ্রেসে এদের এতোটাই প্রভাব যে, এরা চাইলে অনেক বিলও আটকে দিতে সক্ষম।

১৯৫০ সালে কংগ্রেসে ইসরায়েলের জন্য দ্বিদলীয় সমর্থন গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অতীতে এআইপিএসি বেশির ভাগ কাজ করত ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কংগ্রেসের সমর্থন আদায় করা। এটি কখনো আমেরিকার অভ্যন্তরের নির্বাচনে জড়িত ছিল না। কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ, রাশিদা তালিব, ইলহান ওমর এবং আয়না প্রেসলির নির্বাচনে যুগান্তকারী জয়ের পর কংগ্রেসের সদস্যরা প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। ফলস্বরূপ, ২০২১ সালে এআইপিএসি তার নিজস্ব পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি এবং সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি গঠন করে, যা ইউনাইটেড ডেমোক্রেসি প্রজেক্ট (ইউডিপি) নামে পরিচিত। কংগ্রেসম্যান সামার লি এবং ইলহান ওমরের মতো প্রগতিশীল, শান্তিপন্থী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিলিয়ন মিলিয়ন খরচ করে। আইপেকের শেষ কৌশল হলো ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলতে পারে-এমন কাউকে চুপ করতে মিলিয়ন ডলার খরচ করার হুমকি দেওয়া।

আইপেক যদিও তারা দ্বিদলীয় বলে দাবি করে কোটিপতি এবং বিলিনিয়ারদের কাছ থেকে ব্যাপক অনুদান লাভ করে। ডানপন্থী মেগা ডোনাররা যারা ডোনাল্ড ট্রাম্প, রন ডিস্যান্টিস এবং নিকি হ্যালিকে দান করেছেন। একই লোকেরা ট্রাম্পকে পুনরায় নির্বাচিত করার চেষ্টা করছেন। আইপেকের অন্ধকার অর্থের প্রভাব বিস্তৃত। কংগ্রেসের ৫৩৫ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩৩ জন গ্রুপের নেটওয়ার্ক থেকে অর্থ পাননি। এআইপিএসি যাদের লক্ষ্য করে, তবে প্রার্থী এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠী। আইপেকের সুপার প্যাক প্রাইমারিতে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে একচেটিয়াভাবে ব্যয় করে। বিশেষ করে তরুণ, কালো এবং বাদামি প্রগতিশীল প্রার্থী চ্যাম্পিয়নদের মতো স্কোয়াড। প্রকৃতপক্ষে সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি ও ইউনাইটেড ডেমোক্রেসি প্রজেক্ট (ইউডিপি) অর্থের ৮৫ শতাংশেরও বেশি ব্যয় হয় বাদামি, হিস্পানিক ও আফ্রিকান আমেরিকান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।

শেয়ার করুন