২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:০১:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রাক নির্বাচনী
মালদ্বীপের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জয় বাংলাদেশের
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
মালদ্বীপের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জয় বাংলাদেশের মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ের পর আনন্দের জোয়াড়ে ভেসে বেড়ানো বাংলাদেশ দল/ছবি সৌজন্য


ক্রিকেট বিশ্বকাপের চলতি আসরে বাংলাদেশ প্রত্যাশার প্রদীপ জ্বালাতে পারছে না। ঠিক এমনি মুহূর্তে কাল ঢাকার বসুন্ধরা কিংস এরেনায় ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের প্রাক নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ খেলায় ২-১ জয়ী হয়ে দেশবাসীকে আনন্দ সাগরে ভাসিয়েছে। খেলাটি ছিল দুই দলের ফিরতি ম্যাচ। কিছু দিন আগে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে প্রথম ম্যাচটি লড়াই করে ১-১ শেষ করেছিল জামাল ভূঁইয়ার উজ্জীবিত বাংলাদেশ। দুটি খেলা মিলে ৩-২ ব্যাবধানে জয়ী বাংলাদেশ ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আই গ্রপে অস্ট্রেলিয়া ,প্যালেস্টাইন এবং লেবাননের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেলো। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত হল আগামী ৬-৯ মাসের মধ্যে ফিফা অনুমোদিত অন্তত ৬ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। ১৯৮০,১৯৯০ দশকে বাংলাদেশ নিয়মিত বড় ব্যাবধানে হারাতো মালদ্বীপ ,ভুটান ,নেপালদের।  কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের অবস্থান ফটবলে তলানিতে পৌঁছেছিল। আইসিসি রাংকিংয়ে ১৮৯ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের জন্য ৩৪ অবস্থান ব্যাবধানে থাকা মালদ্বীপের (১৫৫) জয় তাই বড় অর্জন। এই জয় বাংলাদেশ ফুটবলে গতি আনবে সন্দেহ নেই।


তিন শক্তিশালী দলের সঙ্গে হোম এন্ড এওয়ে পদ্ধতিতে খেলা ৬ টি ম্যাচ এবং একই সঙ্গে ফিফা অনুমোদিত অন্তত ৬ টি ম্যাচ থেকে অনেক উপকৃত হবে বাংলাদেশ ফুটবল।
স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ফুটবলের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে।  ছন্দ পতন না ঘটিয়েই ৯০ মিনিট বা প্রয়োজনে ১২০ মিনিট সমান তালে খেলতে পারছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী খেলার কৌশল এবং বিন্যাস পরিবর্তন করছে হাভিয়ার।  দলের গোল করার দক্ষতা বেড়েছে। অন্তত ২০-২৫ জন খেলোয়াড় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার জন্য তৈরী হয়ে আছে। আর তাই মাদক দ্রব্য বহনের দায়ে দণ্ডিত হয়ে বাংলাদেশের তিন অপরিহার্য খেলোয়াড় গোল রক্ষক জিকো, রক্ষণ ভাগের তপু বর্মন এবং স্ট্রাইকার মোরসালিন না থাকা সত্ত্বেও দুটি ম্যাচে আদৌ কোনো প্রভাব পরে নি বাংলাদেশের খেলায়।


এবারে ফিফা নতুন নিয়ম করেছে আওয়ে ম্যাচে করা গোলে বাড়তি ওজন নেই। তাই মালেতে অনুষ্টিত প্রথম খেলায় পিছিয়ে পরে সমতা আনার পরেও বাংলাদেশের জন্য কাল জয় ছিল অপরিহার্য। নির্ধারিত ৯০ মিনিট সমতা থাকলে অতিরিক্ত ১৫+১৫= ৩০ মিনিট এমনকি টাই ব্রেকার হত কাল। কিন্তু নিজেদের মাঠে ,পরিচিত পরিবেশে দর্শক সমর্থকদের উৎসাহে উজ্জীবিত বাংলাদেশ প্রথমে রাকিবের গোলে এগিয়ে যায়। মালদ্বীপ ইব্রাহিমের গোলে সমতা আনলেও ফয়সাল ফাহিমের গোলে ২-১ ব্যাবধানে ম্যাচ জয় করে।  


মালদ্বীপের ৩-৪-২-১ ফর্মাশনের মোকাবেলায় বাংলাদেশ ৪-৩-২-১ ফর্মাশনে খেলে। গোল রক্ষক মিতুল মারমা ভালো খেলে জিকোর অনুপস্থিতি অনুভব করতে দেয়নি আদৌ।  চার রক্ষণ ভাগ ছিল সক্রিয়। বিশেষ করে তারিক কাজী আর বিশ্বনাথ ঘোষ রক্ষণ দুর্গ সামলানোর পাশাপাশি ওভারল্যাপ করে আক্রমণে অংশ নিয়েছে নিয়মিত। মাঝমাঠে জামাল ,হৃদয় এবং সোহেল রানা সংযোগ সেতু রক্ষা করেছে আক্রমণ ভাগের সঙ্গে। আক্রমনাত্বক মিড্ ফিল্ডার সোহেল রানা কিছুটা আগ্রাসী খেলার কারণে লাল কার্ড পাওয়ায় বাংলাদেশকে অনেকটা সময় ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়। অবশ্য খেলার শেষ দিকে এসে মালদ্বীপের আহনাফ রাশিদ লাল কার্ড পায়।  


জানি বিএফএফ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।  দেশের ফুটবল অবকাঠামো গড়ে তুলে বিকাশ ঘটাতে ওদের ব্যার্থতা সর্বজন বিদিত। বিশেষ করে দেশ জুড়ে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমাগত বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া নিয়ে সঙ্গত কারণেই বিএফএফ তোপের মুখে। কিন্তু সীমিত সুযোগ পেয়েও মেয়েদের ফুটবল ,বয়স ভিত্তিক দলগুলো সাফল্য পাচ্ছে অনিয়মিত। গত সাফ ফুটবলেও ভালো খেলেছে বাংলাদেশ।  এবারের মালদ্বীপ জয়কে টনিক হিসাবে ব্যবহার করে বিএফএফ ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সবাই জানে জেলা উপজেলা পর্যায়ে এখনো ফুটবল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ঢাকাই ফুটবল শুধু তরঙ্গ হীন। অন্তত ৮ টি বিভাগীয় পর্যায়ে ফুটবলকে সক্রিয় করে জেলা উপজেলা ফুটবলকে সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক করা হলে ৫-১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম সেরা দল হতে পারবে।


যদি বেলজিয়ামের মোট ছোট দেশ পারে তাহলে ১৭ কোটি ক্রীড়া পাগল দেশের মানুষ কেন পারবে না। প্রয়োজন উন্নত মানের খেলার মাঠ, প্রশিক্ষণ অবকাঠামো, স্কুল ফুটবল , বয়স ভিত্তিক ফুটবল , অন্তঃ জেলা ফুটবল সহ জাতীয় ফুটবলকে গতিশীল করে তোলা। সেই সঙ্গে বসুন্ধরা কিংস , সাইফ পাওয়ার টেকের মত অন্নান্য শীর্ষ স্থানীয় দলগুলোকেও পেশাদারী ফুটবলের সঠিক আদলে বিকশিত করতে হবে। থাকতে হবে আধুনিক খেলার মাঠ , প্রশিক্ষণ সুবিধা, স্কাউট দল, বয়সভিত্তিক দল।  
সঠিক পরিকল্পনা আর পেশাদারি দক্ষতায় পরিচালিত হলে বাংলাদেশের ফুটবলের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। কিন্তু সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিবেদিত সংগঠক সম্পৃক্ত জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

শেয়ার করুন