৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:৩০:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


১২৫০০ টাকা মজুরির প্রস্তাবে শ্রমিক নেতাদের প্রত্যাখান
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
১২৫০০ টাকা মজুরির প্রস্তাবে শ্রমিক নেতাদের প্রত্যাখান বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা


মজুরি বোর্ড কর্তৃক গার্মেন্ট শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ থেকে একে প্রহসনমূলক প্রস্তাব বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা অবিলম্বে ঘোষিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করে গার্মেন্ট শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানায়। এবং এদাবিতে  আগামী ১০ নভেম্বর শুক্রবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ আহ্বান করেছে। শুক্রবারের সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ার করে দেন। 

দেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। মজুরি বোর্ডের বৈঠকের পর ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।  তিনি বলেন, নির্দেশেই আমরা এটা ঘোষণা করছি। ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। আট হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা হবে। সঙ্গে বছরে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।

সবশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পাঁচ বছরের জন্য পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি ঘোষণা করার দাবি ছিল শ্রমিকদের। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। গত ২২ অক্টোবর এই বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন। আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে- এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে মজুরি বোর্ড কর্তৃক গার্মেন্ট শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ থেকে প্রহসনমূলক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন-এর আহ্বায়ক তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাদেকুর রহমান শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, অঞ্জন দাশ, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রেজা, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি ইয়াসিন আলী, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, ডা. হারুনুর অর রশীদ, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন ও গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের নেতা শাহ আলম প্রমুখ। 

সমাবেশে থেকে বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মালিকপক্ষ ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি এ সময়ে টেনে এনেছে, যার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে। আইন মেনে ৬ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি ফয়সালা না করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিলম্ব করা হয়েছে। এখন এসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রস্তাব দেয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত শ্রমিকদের ক্ষোভকে উস্কে দেয়া হচ্ছে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে মজুরি বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপরে গুলিবর্ষণ, হামলা, নির্যাতন ও শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।  হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে শিল্পে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত পাঁচ বছরে শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। অন্যদিকে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। সাধারণ যৌক্তিক নিয়মেই শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করার কথা ছিল। ৫ বছর পর মজুরি বোর্ড গঠন হয়েছে, কিন্তু বোর্ডের প্রস্তাব শ্রমিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

এর আগে ৫ ও ৬ নং গ্রেড বিলুপ্ত করে ৫টি গ্রেডে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা ছাড়া ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত গার্মেন্টস শ্রমিকরা মানবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ এক বিক্ষোভ সমাবেশে। এর পাশাপাশি তারা রাসেল ও ইমরান হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের দাবি জানান। বলেন, দমন-পিড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তারা বলেন, হাজার-হাজার অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করে সেই মামলায় শ্রমিক নেতাদের গ্রেফতার করে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দাবির আন্দোলন দমনের যে কৌশল মালিকরা গ্রহণ করেছে তা সফল হবে না। দমন করে স্থিতিশীল শিল্প সম্পর্ক স্থাপন করা যায়না। ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে ৬৫ টি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের জোট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এ্যালায়েন্স বাংলাদেশ। ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলি এবং সন্ত্রাসী হামলায় গার্মেন্টস শ্রমিক রাসেল ও ইমরান হত্যার বিচার, ক্ষতিপূরণ, দমন-পীড়ন-হয়রানি বন্ধ, মিজান-জুয়েলসহ গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ৬৫ শতাংশ বেসিক, ৫ টি গ্রেড কাঠামোয় ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভার পূর্বে মজুরি বোর্ডের সামনে এই কর্মসূচি নেয় তারা। 

শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন এর সভাপতিত্বে এবং লাভলি ইয়াসমিন এর সঞ্চালনায় মজুরি বোর্ডের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা নঈমুল আহসান জুয়েল, তৌহিদুর রহমান, আহসান হাবিব বুলবুল, আব্দুল ওয়াহেদ, বজলুর রহমান বাবলু, কাজী রুহুল আমিন, রফিকুল ইসলাম সুজন, নাহিদুল হাসান নয়ন, খালেকুজ্জামান লিপন, সেলিম মাহমুদ, মরিয়ম আক্তার, বাহরাইনের সুলতান, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় ঘুড়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়।

শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারের নিন্দা, ক্ষতিগ্রস্থদের আজীবন আয়ের মানদন্ডে ক্ষতিপূরণ প্রদানের এবং দমন-পিড়ন-হয়রানির পথ পরিহার করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা পূর্বেই বলেছি যে মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের সময়ক্ষেপণের অপকৌশল আর তামাশামূলক মজুরি প্রস্তাব গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিকে রাজনৈতিক সংঘাতের আড়ালে চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকেই মালিকপক্ষ সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছিল। রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ তৈরি করে বিশেষ সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে গার্মেন্টস মালিকরা পরিকল্পিত ভাবে উস্কানি দিয়েছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত। নেতৃবৃন্দ, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে গার্মেন্টস শ্রমিক রাসেল হাওলাদার ও ইমরান হোসেন  হত্যার জন্য দায়িদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করার আহবান জানান। 

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শ্রমিকরা বেতন কাঠামোয় বৈষম্য কমানোর জন্য ৫টি গ্রেডে মজুরি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। মজুরি কাঠামোর মধ্যবর্তী দুটি গ্রেড সাধারণ অপারেটর ও জুনিয়ার অপারেটরের পদ অর্থাৎ ৫ ও ৬ নং গ্রেড বাদ দিয়ে ৫ টি গ্রেডে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা ছাড়া ভিন্ন কোনো ঘোষণা  গার্মেন্টস শ্রমিকরা মেনে নেবেনা।  শ্রমিকদের বঞ্চিত করার মালিকদের অপকৌশলের দায় শ্রমিকদের ওপর চাপানোর যেকোনো চেষ্টা সহ্য করা হবে না বলে নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

শেয়ার করুন