২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৫২:৫৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০২-২০২৩
গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ


শীত পেরিয়ে গ্রীষ্মকাল দাঁড়িয়ে দুয়ারে। রমজান মাস আসছে পাশাপাশি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নিবিড় সেচ কাজ। বাংলাদেশে শীতে যতটুকু বিদ্যুৎ লেগেছিল, এখন এমন মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে জ্যামিতিক গতিতে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ-জ্বালানির গভীর সংকট সৃষ্টি হতে পারে। 

এমনিতেই জ্বালানি বিশেষত গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প-কলকারখানাগুলো ধুঁকছে। সরকার ডলার সংকটের কারণে এলএনজি, কয়লা, তরল জ্বালানি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে সরকারকে জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনস্বার্থে কিছু সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেটা কী সম্ভবপর হবে? 

বিদ্যুতের এমন ক্রাইসিস জাতীয় সংকট। আর এ সংকটের দায়ভার সবাইকে বহন করতে হবে। উচ্চমূল্যের দায় কেন শুধু সাধারণ জনগণ বহন করবে? দেশের জ্বালানি বিদ্যুৎ পরিকল্পনায় সাধারণ জনগণের ভূমিকা নেই। সবকিছুই করে এখন সরকারি আমলা। অবৈধ ব্যবহার, অদক্ষ ব্যবহারের দায় অবশ্য ব্যবহারকারীদের। তবে মোদ্দাকথা, ২০২৩ জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট সামাল দিতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে পেশাদারি দক্ষতায় বাস্তবায়ন করতেই হবে। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হলে অর্থনৈতিক আর সামাজিক সংকট সৃষ্টি হবে। বহু মানুষ চাকরি হারাবে, বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাহত হবে।  অর্থনৈতিক সংকট ত্বরান্বিত হবে।  

গ্রিড বিদ্যুতের চাহিদা আসন্ন গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ ১ হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করলে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সেই ক্ষেত্রে জ্বালানি দক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। কয়লা-বিদ্যুৎ থেকে আসা উচিত ১২৪০ (পায়রা)+১৩০০ (রামপাল)+২০০ (বড়পুকুরিয়া ২৭৪০ মেগাওয়াট।  আমদানি ১০০০ মেগাওয়াট। তরল জ্বালানি থেকে ৫৫০০ মেগাওয়াট। নবায়ন যোগ্য জ্বালানি ৫০০ মেগাওয়াট। তাহলে দেখুন ৬৫০০+৫৫০০+২৭৪০+১০০০+৫০০=১৬ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট।  তাহলে আদানির বিদ্যুৎ (১০০০) নেয়ার প্রয়োজন হবে না। এমনিতেই ভারতের আদানি বিদ্যুৎ রফতানি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আদালতে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। 

আমি মনে করি, এই সময়ে কিছু ক্যাপটিভ জেনারেটরে গ্যাস সরবরাহ না করে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দেয়া হলে সাশ্রয় হবে। 

সম্প্রতি সরকারি এদেশে জ্বালানি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করছেন সরকারি আমলারা। সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি বিদ্যুৎ বা গ্যাসবিল নিজে পরিশোধ করে না। অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস এবং জ্বালানি বিল বকেয়া থাকে। কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিল মাসিক বেতনের সঙ্গে পরিষদ করা হয়। তাই সরকারি আমলারা বর্ধিত বিল বিষয়ে উদাসীন। এ যেন ‘কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আসি বিষে দংশেনি যারে।’ আমলাদের গাড়ির জ্বালানি সরকার সরবরাহ করে। এখন থেকে জ্বালানি-বিদ্যুতের দাম আমলাদের পরিষদের সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। জাতীয় সংকটে সবাইকে সমানভাবে বিবেচনা করতে হবে। পরিস্থিতির দায় শুধু সাধারণ জনগণ কেন বহন করবে। একই সঙ্গে জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যাবহারে সব পর্যায়ে কৃচ্ছ্রসাধন একান্ত জরুরি এবং একইভাবে বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে বৈষম্য হওয়া মোটেও উচিত নয়। লোডশেডিং হলে সবাইকেই ভাগ করে লোডশেডিং দেয়া উচিত। সব দায় যেন জনসাধারণের ঘাড়ে না পড়ে।

শেয়ার করুন