০১ মে ২০১২, বুধবার, ১১:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


মার্কিন ভিসানীতি
গ্রিনকার্ড ডুয়াল সিটিজেনরাও দুশ্চিন্তায়
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
গ্রিনকার্ড ডুয়াল সিটিজেনরাও দুশ্চিন্তায়


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনেরে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডুয়াল সিটিজেনশিপ থাকাদের মধ্যে বড়ধরনের ভীতি কাজ করছে। মার্কিন ভিসানীতিতে কি কোনো না কোনোভাবে তারাও আক্রান্ত হবেন? লক্ষ কোটি ডলারের এ প্রশ্নে অনেকের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম। 

এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ওই ভিসানীতি আমজনতা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এরপরও অমন ডুয়াল সিটিজেনশিপ থাকাদের অনেকেই কিন্তু ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। 

বাংলাদেশে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছুদিন থেকে প্রচারিত হচ্ছে অনেকের নাকি ভিসা বাতিল করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংখ্যার দিক থেকে বেশ বড়সড় সেটা। কেউ কেউ নাকি দুবাই থেকে ফ্লাই করতে পারছেন না আমেরিকাগামী ফ্লাইটে। এরা কারা? এ প্রশ্নটা এখন বাংলাদেশে সর্বত্র। জানতে চোখ কান খোলা রাখছেন তারা প্রতিনিয়ত। অসমর্থিত কিছু কথাবার্তা কর্ণগোচর বা দৃষ্টিগোচর হলেও সেগুলোকে বিশ্বাস করা যায় না এ জন্য যে, সেটা নির্ভর করার মতো কোনো খবরের উৎস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে না। আবার এটাও ঠিক মার্কিন ভিসা ও ভিসাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিষয়টি খুবই সিক্রেট। যার ভিসা বাতিল হবে সেটা শুধু তিনিই জানবেন। তিনি প্রকাশ না করলে খবর বের হওয়ার উপায় কম। মার্কিন দূতাবাস বা প্রশাসন তো এটা প্রকাশ্যে বলে বেড়াবেন না! সব মিলিয়ে এটা গুজবের মধ্যে ফেলে দেওয়া যায়। তবে আলোচনা তো আলোচনাই। হতেও তো পারে! সন্দেহের দোলাচল বেশ প্রকট। 

ফিরে দেখা, ব্লিঙ্কেনের ঘোষণা  

গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আমি আজকে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।’

যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ হবে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি। ভোটারদের ভয় দেখানো। সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’

ডুয়াল সিটিজেনশিপদের ভয়ের কী? 

বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও অনেক রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী, সাবেক কর্মকর্তাসহ অনেক পেশার মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ নিয়েছেন। কেউ কেউ আছেন গ্রিনকার্ডহোল্ডার। এছাড়াও পাঁচ-সাত বছরের ভিসাপ্রাপ্তরাও রয়েছেন। কেননা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে সৌদি আরব থেকে। তার পরই আসছে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ডুয়াল সিটিজেনশিপ ও গ্রিনকার্ডহোল্ডারের অনেকেই দেশে নিয়মিত অর্থ প্রেরণ করেন না বা করার প্রয়োজনীয়তাও নেই। সাধারণ মানের লোকজনই ওই রেমিট্যান্সের বড় অঙ্কটা প্রেরণ করেন। ফলে সৌদি আরবের তুলনায় ওই মানের রেমিট্যান্সযোদ্ধা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কম নয়। গত মাসে সৌদি আরবকে হটিয়ে অর্থ প্রেরণে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষস্থানে চলে আসে।

প্রসঙ্গ আসলে সেটা নয়। আসা যাক, ডুয়াল সিটিজেনশিপ ও গ্রিনকার্ডহোল্ডারদের কথায়। এরা ম্যাক্সিমাম সমাজের উঁচুস্তরের লোক। যাদের অনেকেই আমেরিকায় পাড়ি জামিয়ে দেশের সঙ্গে খুব কমই যোগাযোগ রাখছেন। সেখানেই বাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মে স্থায়ী হয়ে গেছেন। কেউ কেউ রয়েছেন দুটোতেই। আমেরিকাতেও তাদের ব্যস্ততা, আবার বাংলাদেশেও। এদের কেউ বাংলাদেশে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত। কেউবা রাজনীতিতে। কেউ কেউ প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে। বিচারবিভাগ, নিরাপত্তাসহ বিভিন্নস্তরে বা সরকারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্নভাবে। এদের কেউ কেউ আছেন মৌসুমি। অর্থাৎ পছন্দনীয় সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে এসে প্রভাববিস্তার করেন। আবার অন্য সরকার এলে সুযোগ বুঝে প্লেনের টিকেট কেটে ফেরেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। 

ভয়ের কারণ এ শ্রেণির লোকজনের। যদি তারা ব্লিঙ্কেনের নীতিমালার আওতায় পড়ে যান কোনো ফরমুলায়, তাহলে তাদের দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা বাংলাদেশে দেওয়া ভিসানীতি কেন সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

তাহলে কী শাস্তি গ্রিনকার্ডহোল্ডার ও ডুয়ালদের? 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এধরনের মার্কিন নাগরিক বা গ্রিনকার্ডহোল্ডারদের চিহ্নিতকরণ করা হবে এবং তাদের বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উভয় স্থানেই তাদের অ্যাকাউন্ট সম্পদ, তাদের কর্মপরিধি চিহ্নিত করবে এবং তাদেরকে শাস্তির আওয়তায়ও নিয়ে যাবে মার্কিন প্রশাসন। সেটা মার্কিন আইনে। কারণ মার্কিন নাগরিকের জন্য আইন রয়েছে এভাবে ডুয়াল সিটিজেনশিপ, গ্রিনকার্ডহোল্ডারদের জন্য। চিহ্নিত হলে তাদের শুধু আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তিই দেবেন না, প্রয়োজন পড়লে তাদের মার্কিন ভিসা/মার্কিন নাগরিকত্ব স্ট্যাটাসও বাতিল করতে পারে। তার সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করতে পারেন দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট সহায়সম্পদও। বিশেষ করে, বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতিতে শুধুই যে অভিযুক্তরা শাস্তির আওতায় আসছেন তা কিন্তু নয়। শাস্তির কবলে পরতে হবে তাদের পরিবারবর্গের লোকজনও। 

ফলে দুশ্চিন্তার কালোমেঘ শুধু বাংলাদেশের আকাশেই ভাসছে না, তার ছিটেফোঁটা এখন আমেরিকাতেও। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসকারী বাংলাদেশি মৌসুমি ব্যবসায়ী, মৌসুমি ক্ষমতার পার্ট, মৌসুমি ক্ষমতারভাগিদার, মৌসুমি সরকারি আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বেলায়ও। তাদের যদি ভিসা বাতিল হয়, তাহলে তাদের পরিবার-পরিজনও এই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন। অনেকেই আছেন যারা দেশে কাজ করেন এবং তাদের পরিবার এখানে, বাড়ি এখানে, ব্যবসা এখানে, তারা যদি ভিসানীতির বিরোধিতা বা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধার কারণ হন, তাহলে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনের আওতায় আনা হবে। অন্যদিকে সাধারণ গ্রিনকার্ডধারীরা বা পাসপোর্টহোল্ডার তাদেরও বুঝেশুনে কথা বলতে হবে এবং কর্মকাণ্ড চালাতে হবে।

শেয়ার করুন