২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:২০:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আমলাদের উপর নির্ভরতা কতটা সঠিক!
আমলার বৈশিষ্ট সুযোগে পাত্রের রুপ ধারণ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৫-২০২২
আমলার বৈশিষ্ট সুযোগে পাত্রের রুপ ধারণ


বাংলাদেশে এবার নির্বাচনী হাওয়া একটু আগেই শুরু হয়ে গেছে। এমিনতেই বিশ্বজুড়ে নানা সংকট, করোনা অতিমারী বিশ্বের অনেক কিছুই লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। যেই না একটু ফুরসত সে মুহূর্তে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মহাসংকট। 

বাংলাদেশ কিন্তু গত দশকে আমূল পাল্টে গেছে। সবার চোখ না পড়লেও নীরব বিপ্লব হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।  প্রণোদনা পেয়ে কৃষকরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ম্ভর করেছেন। যেভাবেই হোক দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। দেশে এখন সন্ত্রাস না থাকলেও সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আছে, অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে। ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটে, আর আমলাদের নিয়ন্ত্রণে রাজনীতি এখন গৃহবন্দি।

দেশে মানুষ এখন নির্বাচনবিমুখ। খেতে খাওয়া মানুষ জীবন জীবিকার তাড়নায় অনিশ্চিত দিনযাপন করছে। এহেন বাস্তবায় জনগণ নির্বাচন নিয়ে খুব একটা আগ্রহী মনে হয়না। দুষ্টের পালন আর সিস্টের দমন এখন চারিদিকে। তবুও ভরসা, দেশের সিংহভাগ মানুষ এখন তরুণ। ওদের হাতে একসময় হয়তো বদলে যাবে দেশ। 

মেরুকরণে বাংলাদেশ এতো অশুদ্ধ যে, সেখানে নিরপেক্ষ একটি পক্ষ। আছে প্রকৃত প্রস্তাবে দুটি পক্ষ। একটি স্বাধীনতার চেতনাধারী প্রগতি চিন্তার, আরেকটি ধর্মের ধ্বজাধারী দুর্নীতিপরায়ণ পক্ষ। উভয়পক্ষ থেকেই সুযোগ মতো সুযোগসন্ধানীরা লেবাস বদল করে ভণ্ড সাধু বনে যায়। এর বাইরে নিরীহ নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ ঘানি টেনে চলে। এহেন দেশে লাউ চোর,গরু চোরদের ধরে বাহবা নেয়া হয়। কিন্তু সাগর চোরদের করা হয় রাজকীয় আদর আপ্যায়ন। 

কর্তৃপক্ষীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক, বীমা,ব্যবসা সব লুটে পুটে একশ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়েবিদেশে নির্বিচারে বাধাহীনভাবে পাচার করে। চেয়ে চেয়ে দেখে নিরীহ কৃষক, শ্রমিক,কুলি,মজুর,তাঁতি, মাঝি, প্রবাসে রেমিট্যান্স-যোদ্ধাও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এহেন দেশে কি কোনোদিন নিরপেক্ষ সরকার বলে কিছু ছিল বা আসবে কখনোই। তাই বলছিলাম নিরপেক্ষ, সরকারের অধীনে নির্বাচত এখানে শুধুই কথার কথা। 

অনুন্নত দেশের কাটা পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ২০২৬ থেকে শুরু হবে নয়াযাত্রাপথে পথচলা। করোনার অভিঘাতে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ আবারো দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। সরকার নানা প্রণোদনা দিয়ে ব্যবসায়ী সমাজকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। প্রান্তিক মানুষদের প্রণোদোনা দেয়া হচ্ছে, যদিও ঘুণেধরা সমাজে বিতরণব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত। তবে স্বীকার করতেই হবে দেশের মানুষ দুই বেলা পেট পুড়ে খেতে পারছে, পরিধানে কাপড় আছে। দুর্নীতির রাশ টেনে রাখা গেলে উন্নয়নের সুফল সমভাবে বণ্টন করা যেতো। 

ভাবতেই হচ্ছে, ২০২৩ শেষে বা ২০২৪ শুরুতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে কিন্তু এবার আর ২০১৪ বা ২০১৮ আদলে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। সারা বিশ্ব কিন্তু বাংলাদেশেরনির্বাচন প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। বাংলাদেশ নিয়ে কিন্তু ভারত ছাড়াও চীন, জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র,পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা আছে।

এবার কিন্তু প্রশাসনের ঢালাও সহযোগিতা নিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করা যাবেনা। সরকার ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সরকারঘনিষ্ঠ মানুষদের দুর্নীতির অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণাদি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। 

দেশে দায়িত্বশীল নির্ভরযোগ্য বিকল্প রাজনৈতিক দল বা শক্তি নেই। শাসকদল হাইব্রিড এবং ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত। তবুও মনে হয়, কিছুটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবং শাসক তৃণমূল জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দিলে অন্তত ২০০ সাংসদ শাসকদলের জোট থেকে নির্বাচিত হবে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে স্বৈরাচারী শাসনের সৃষ্টি করে সেটি বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশেও উদাহরণ আছে। 

না নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখনই কিছু বলবো না। এদের কয়েকজনকে চিনি। সবাই বিতর্কের ঊর্ধ্বে বলবো না। কেবলমাত্র আমলাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন কতদূর কি করবে, তা নিয়ে দেশ বিদেশে আলাপ হচ্ছে বিস্তর। আমি বারবার বলছি, আমলারা কিন্তু তরল পদার্থ। সুযোগ বুঝে যে কোনো পাত্রের রূপ ধারণ করে। বা হওয়ার অনুকূলে পাল তুলে দেয়, ২০০১  প্রকৃত উদাহরণ।

তাই বলছি, বর্তমানে অবাস্তব নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না তুলে, নির্বাচন কীভাবে অধিকতর নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ করা যায়, জনগণকে কীভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করা যায়, সেটি নিশ্চিত করাটাই এ মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।


শেয়ার করুন