২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:১৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


নির্বাচন বর্জনের লিফলেট কর্মসূচিতেও অস্বস্তি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
নির্বাচন বর্জনের লিফলেট কর্মসূচিতেও অস্বস্তি লিফলেট বিতরণ করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান


এক দফা দাবিতে অসহযোগের ডাক দেওয়া বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ অহিংস কর্মসূচিতেও সরকারের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য শুধু বিএনপি না দলটির সাথে সমমনারা এমন কর্মসূচিতে নেমে পড়ায় সরকার উদ্বিগ্ন। এর পাশাপাশি সর্তক অবস্থানে রয়েছে সরকার। এক দফা দাবিতে অসহযোগের ডাক দেওয়া বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলছে। দলটি রাজধানীসহ সারাদেশে এই কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এমন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে,এটা চলবে আরো দুই দিন। 

সরকার সর্তক তা-ই বাধা দিচ্ছে 

মতিঝিলে গণতন্ত্র মঞ্চের গণসংযোগ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দিয়েছে গত ২৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটায় ‘একতরফা ভোট বর্জন করুন’ এই আহবান নিয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের গণসংযোগপূর্ব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমম্বয়ক ইমরান ইমন ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবু ইউসুফ সেলিম। সভা পরিচালনা করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের ধারাবাহিক প্রতিবাদী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওইদিন মতিঝিল থেকে ধূপখোলা পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী গণসংযোগ পূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। কিন্তু দেখা গেছে বক্তব্য শেষে মঞ্চের নেতৃবৃন্দ মিছিল শুরু করতে গেলে পুলিশ বলপূর্বক বাধা দেয় ও হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। এর পূর্বে সমাবেশ স্থলে আসার পথে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির মিছিলে কয়েক দফায় বাধা দেয় পুলিশ ও ব্যানার কেড়ে নেয়।

অন্যদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণ শুরু করলেও পুলিশের বাধার মুখে কর্মসূচি পন্ড হয়ে যায়। এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়কারী ও স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি)’র আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. সামছুল আলম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হারুন চৌধুরী ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান।

কিন্তু কেনো বাধা দেয়া হচ্ছে

সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার আশায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সবাই প্রায়শ বলে আসছে তারা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে যাচ্ছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক প্রমাণ করতে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু এমন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন সবাই উদ্বিগ্ন। এধরনের পরিস্থিতিতে বিএনপি ডাক দিয়েছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ অহিংস কর্মসূচি। এমন কর্মসূচিকে সরকারের পাশাপাশি আইন শৃংখলা বাহিনী সাধারণভাবে নেয়নি। তারা মনে করে বিএনপিসহ সমমনাদের এমন ডাক দেশের সাধারণ জনগণ গ্রহণ করে ফেললে মহা বিপদে পড়বে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন। কারণ এমনিতেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এই নির্বাচনে কতটা উপস্থিতি হবে? তার মধ্যে বিএনপিসহ সমমনাদের এমন কর্মসূচি আরো প্রতিক্রিয়া ফেলবে বলেই তারা মনে করেন। ভোটার শূন্য কেন্দ্র বা উপস্থিতি কম দেখিয়ে কী করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করা দেখানো হবে তা-নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। আর একারণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ অহিংস কর্মসূচিতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। একারণে এসব মাথায় রেখে কেউ ভোট ঠেকাতে এলে তাদের অপতৎপরতা পুলিশ ‘সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে’ প্রতিহত করবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন খোদ ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ’ভোট দেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট না দেওয়াও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয় যারা ভোট ঠেকাতে আসে তাদের অপতৎপরতা প্রতিহত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিক ও জনপ্রতিনিধির। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষমহল মনে করে বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে, গত ২৫ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে ঢাকার দুই সিটির কাউন্সিলরদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা পর্যন্ত করা হয়েছে। এনিয়েও বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠক নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনে সত্যিই জনসমর্থন থাকলে কেন্দ্রে ভোটার আনতে ঢাকার কাউন্সিলরদের ডেকে পুলিশের কেন বৈঠক করতে হচ্ছে? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও কর্মসূচি পালন করতে গিয়েই এমন প্রশ্ন তুলেন। 

সরকারের এমন আচরণ তৎপরতায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বিএনপি’কে ছাড়া এমন নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে নানান ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়ছে সরকার। বিএনপি’র অংশগ্রহণ ছাড়াই প্রচুর ভোটার ভোট কেন্দ্রে এনে নির্বাচনকে উৎসবমুখর দেখানোকে সরকার তাদের রাজনৈতিক বিজয় হিসাবে দেখাতে চায়। কিন্তু এটা দেখাতে গিয়ে সরকার মাঠে হোচট খেলো মাঠে বিএনপি এমন ধরনের কর্মসূচিতে। এমন অবস্থায় এক দফা দাবিতে অসহযোগের ডাক দেওয়া বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ অহিংস কর্মসূচি সরকারের জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে হাই কমান্ড মনে করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক দফা দাবিতে অসহযোগের ডাক দেওয়া বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ অহিংস কর্মসূচিতেও সরকার উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠায়, আছে চরম অস্বস্তিতে। এখন দেখা যাক এক দফা দাবিতে অসহযোগের ডাক দেওয়া বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ অহিংস কর্মসূচির বাকি দু’দিন সরকার রাজনৈতিক মাঠে কি করে, কি পদক্ষেপ নেয়। এমনটা দেখার আগ্রহ সকলের। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আন্দোলনরত জোট ও দলগুলো সবাই যার যার মতো তার সামর্থ অনুযায়ী কাজ করছি। আমরা খুশি যে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন-নির্যাতন-জেল-জুলুম চালাচ্ছে। না তারা খেতে পারছে, না তারা চাকুরি পাচ্ছে না নিরাপত্তা দিতে পাচ্ছে।এর বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে আজকে সোচ্চার হতে হবে।”

মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের কাছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ২০/২২ জন নেতা-কর্মীদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ফুটপাতের পথচারি-হকার-রিকশা চালকদের হাতে ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন। এই সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, রফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেন,মফিদুল ইসলাম মোহন, বদরুল আলম সবুজ, জিল্রুর রহমান খান প্রমুখ নেতারা ছিলেন।

ভোট বর্জনের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের তিনদিনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপিসহ সমমনা জোটরা মঙ্গলবার ছিলো তার প্রথম দিন। রাজধানীতে মতিঝিল ছাড়াও রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে।

শেয়ার করুন