২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:০৯:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অহিংস আন্দোলনেই কঠোর হচ্ছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
অহিংস আন্দোলনেই কঠোর হচ্ছে বিএনপি


বিএনপির ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগে মুখরোচক বক্তব্য রয়েছে। যেমনটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বহুবার, ঈদপূর্ব বা ঈদের পরও বলছেন, বিএনপি ঈদের পরে আন্দোলন করবে-কোথায় তাদের সে আন্দোলন, কাদের নিয়ে সে আন্দোলন, মানুষ তো তাদের বিশ্বাস করে না, ঐ আন্দোলন আর কেউ চোখে দেখেনি, বিএনপির কথা এখন কেউ আর শোনে না-এ জাতীয় কথার আর অন্ত নেই। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবারও রমজান পেরিয়ে ঈদও শেষ। বিএনপি এবারও বলছে ঈদের পর আন্দোলন আরো জোরদার করবে। কিন্তু এবার আর সেই ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্য নেই। বিএনপি ঈদের পরে আন্দোলন জোরালো করবে কি-না এ নিয়ে আর নতুন বক্তব্য আসছে না বিএনপি বিরোধীদের পক্ষ থেকে। 

তবে এটা ঠিক, বার বার ঈদের পর ঈদের পর করে এবার বিএনপি সত্যি সত্যিই ঈদের পর কঠোর আন্দোলনেই নামতে যাচ্ছে। গত ২৩ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও জানান দেন, আন্দোলন এখন জোরদার হবে। তিনি বিএনপির আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, আমাদের এই  আন্দোলনে অলরেডি ১৭ জন প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমাদের শত শত মানুষ এখনো কারাগারে আছে। দি মুভমেন্ট ইজ অন।’ মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘মাঝখানে রোজা-রমজানের জন্য হয়তো... তার মধ্যেও কিন্তু আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করেছি। আপনারা দেখেছেন যে, এই কয়েক দিন আগে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি করেছি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এখন মুভেমেন্ট আরো বেগবান হবে। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে মুভমেন্টের ধরন কি হবে, জনগনই সেটা সিদ্ধান্ত নেবে।’ 

বিএনপি মহাসচিব যে কথাটা বলেছেন সেটা ঈদের পর কঠোর আন্দোলন বা নতুন করে শুরু এমনটা নয়। তিনি বলেছেন ‘দি মুভমেন্ট ইজ অন’। মানে আগের ধারাবাহিকতাই কন্টিনিউ করবে বিএনপি। এখানে তিনি ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমাদের আন্দোলনে ইতিমধ্যে ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের শত শত মানুষ কারাগারে। ফলে চলমান আন্দোলন আর নতুন করে কী শুরু করবে তারা। তাছাড়া রমজানেও এবার তাদের নানা কর্মসূচি ছিল। এর মধ্যে ইফতার পার্টির মাধ্যমে সমসমনা ও বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রয়াস ছিল বেশ জমজমাট। বিএনপি মহাসচিব আরেকটা ক্লিয়ার বক্তব্য দিয়েছে। সেটা বিএনপির এ সময়ের আন্দোলনের রূপ রেখা। 

বিএনপি এ পর্যন্ত যে আন্দোলন করে আসছে সেই ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে। সর্বত্র তারা অহিংস আন্দোলনের ডাক দিয়ে সেটাই করে আসছে। এতোগুলো কর্মী নিহত হয়েছেন তাতে কিন্তু একদিনের জন্য হরতাল-ধর্মঘট ডাকেনি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তুা করে। ফলে ঈদের পর যে আন্দোলন বেগবান করার কথা বলছে বিএনপি মহাসচিব সেটাও সেই অহিংস আন্দোলন। তবে মির্জা ফখরুল একটা টেকনিক্যাল বাক্য উচ্চারণ করেছেন। সেটা হলো আন্দোলন কোন মাত্রায় চলবে সে বিষয়টি। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হবে সরকারের মুভমেন্টের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ অহিংস আন্দোলন দমাতে যদি কঠোর আচরণ করা হয়, তাহলে বিএনপির আন্দোলনের ধরনও পরিবর্তন হবে। সেটা না হলে গতানুগতিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে। 

বিএনপি শুরু থেকেই বলে আসছে এ সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনেই আর অংশ নেবে না। সেটা সব পর্যায়ে নেয়ওনি। ফলে আগামী ৭-৮ মাস পর যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেটাতেও তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না সেটা নিশ্চিত। ফলে সময় যত ঘনিয়ে আসবে ততই বিএনপি দাবি জোরালো করবে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ। যেটা তারা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে। পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের। সে দাবিতেই তাদের চলমান আন্দোলন কন্টিনিউ হবে। 

বিএনপির এ দাবির প্রতি ডাইরেক্ট সমর্থন না থাকলেও প্রকারান্তে এর সমর্থন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাপান অস্ট্রেলিয়াসহ প্রমুখ উন্নয়ন সহযোগীদেরও। তারা অবশ্য দাবি জানাচ্ছে একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর ভিনদেশিদের এ দাবি বাস্তবায়িত হতে হলে দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়। তাহলে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে বিএনপির দাবি মানতে হবে। সব মিলিয়ে প্রকারান্তে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। যেহেতু বিএনপি বিরোধী পক্ষ। তাই এসব দাবির চাপ এখন সরকারের ওপর। প্রতিনিয়ত এ প্রেশারটা এখন ভিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত। 

এতে করে বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলন বা বিগত সময়ে নির্বাচনের আগে যে জ্বালাও-পোড়াও বা হরতাল-ধর্মঘট, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতো সরকারবিরোধীদের পক্ষ থেকে সেগুলো এখন আর হচ্ছে না। ভিন্ন ধরনের যে প্রক্রিয়া বিএনপি ও ভিনদেশিদের তাতেই সরকার পক্ষ ভীষণ প্রেশারে। কারণ উন্নয়ন সহযোগীরা যে শর্ত দিয়ে রেখেছে সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে তারাও যেমন বিরাগ হয়ে যাবেন। তেমনি বিএনপির অহিংস আন্দোলন যে যৌক্তিক সেটা তারাও সাপোর্ট করবেন। সব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন একে একে চার দেখছে। 

বিএনপিরও এমন আন্দোলন নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য। কারণ নতুন প্রজন্ম হরতাল-ধর্মঘট, জ্বালাও-পোড়াও এটা মোটেও পছন্দ করে না। যেহেতু আগামী নির্বাচনে নতুন প্রজন্মেরও বিশাল একটা ভূমিকা থাকবে। তাই বিএনপি তাদের সমর্থন টানতে এবং বিদেশের মতো তথা উন্নত দেশের আন্দোলনের ন্যায় অহিংস থেকে আন্দোলন করে যাওয়া প্রশংসা পাচ্ছে। 

বিএনপির মতো দলের হরতাল-ধর্মঘট করার অভিজ্ঞত আগেরও রয়েছে। সেগুলো বাদ দিয়ে মোমবাতি নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়ানোর মতো কর্মসূচিও তারা পালন করেছে এবং সে কর্মসূচিতে হামলাও হয়েছে। সেটাও ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপির অহিংস আন্দোলন পলিসি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ফলে সে ধারা তারা এবারও অব্যাহত রাখবে বলে বিএনপি মহাসচিব ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে একটা অনিশ্চয়তার দোলাচল সর্বত্র। কারণ কী হচ্ছে বা কী হবে সেটা আসলে কেউই ঠাহর করতে পারছে না। বিশেষ করে কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে ওগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে ক্ষমতাসীনরদের অনেক ছাড় দিতে হবে। আর সেটার প্রথমই হলো এমন কাজ/সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হবে যা অন্তত বিএনপি গ্রহণ করে। এর বাইরে অর্থাৎ বিএনপিকে নারাজ রেখে কিছু করে পার পাবে সেটা অন্তত এ মুহূর্ত পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যা বলছে তাতে মনে হচ্ছে না। তবু মানুষ বিশ্বাস করে রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। যেটা শুধু বাংলাদেশই নয়। গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রেই। রাজনীতিটা তো সর্বত্রই বিরাজমান নয় কি!

শেয়ার করুন