২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৩০:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


কিডন্যাপের অভিযোগে ২ নারীসহ ৬ বাংলাদেশি গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
কিডন্যাপের অভিযোগে ২ নারীসহ ৬ বাংলাদেশি গ্রেফতার আঞ্জুম খান, সৈয়দ রুবেল আহমেদ, আবু চৌধুরী, শাহেদ আলম


নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে জ্যামাইকা অন্যতম। সেই জ্যামাইকাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে নতুন প্রজন্মও রয়েছে। অতি সম্প্রতি জ্যামাইকায় কিডন্যাপের অভিযোগে ২ নারীসহ ৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই এই সংঘবদ্ধ চক্রের ৬ সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। বাংলাদেশি পরিচয় না দিয়ে আদালতে এসব লোকজনকে একই কমিউনিটির লোকজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে অপহরণ, মারধর ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী আদালতে দায়ের করা প্রতিবেদনে বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে দুই সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল স্টিফেন পাক ও ভিসেন্ট চাইয়াপিনি আদালতে প্রমাণসহ অভিযোগ দাখিল করেছেন। তারা এই অভিযোগ দাখিল করেন গত ১১ জানুয়ারি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারে এসব লোকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

ব্রুকলিনের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট নিউইয়র্ক আদালতে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেন ১. রুবেল আহমেদ, বয়স ৪৩, জ্যামাইকা। ২. শাহেদ আলম, বয়স ২৯, জ্যামাইকা। ৩. আবু চৌধুরী, বয়স ৩৪, জ্যামাইকা। ৪. আনজু খান, বয়স ২৮, জ্যামাইকা। ৫. সুলতানা রাজিয়া, বয়স ৩৮, উডসাইড। ৬. ইফফাত লুবনা, বয়স ২৪, জ্যামাইকা। এদের মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী। এদের বিরুদ্ধেই প্রথমে মামলা করা হয়েছিল এবং এদেরকেই প্রথমে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে এফবিআই তাদের তদন্ত এবং ফোন ও ভিডিও রেকর্ডের মাধ্যমে বাকিদের শনাক্ত করে। গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এদের আদালতে উপস্থাপন করা হয় এবং আদালতে শুনানি শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের একটি অভিযোগ রয়েছে এদের ৬ জনের বিরুদ্ধেই। আর আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অভিযোগ রয়েছে অপহরণের। আদালতের নথিকে বাংলাদেশি কমিউনিটিরই আরেক ব্যক্তিকে তারা অপহরণ করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা অপহৃত ব্যক্তিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় ও যৌন নিপীড়ন করে।

ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি ব্রেয়ন পিস বলেছেন, একই কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই জঘন্য অপরাধ পরিচালিত হয়েছে এবং একটির পর একটি অঘটন ঘটিয়েছে চক্রটি। প্রথম অপহরণের ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ। সেদিন রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়া একযোগে ষড়যন্ত্র করে ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে অপহরণ করেন। জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ের ১৮১ স্ট্রিটের কাছ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। আবু চৌধুরী এ সময় অপহৃত ব্যক্তিকে জোরপূর্বক একটি হোন্ডা এসইউভি গাড়িতে তুলে নেন এবং বেদম মারধর করতে থাকেন। এ সময় তার স্ত্রী গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছিলেন। পরে গাড়ি থেকে নামিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উলঙ্গ করে তা ক্যামেরায় ধারণ করেন তারা। রুবেল, শাহেদ, আনজু ও রাজিয়ার সঙ্গে তাদের ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল। অপহৃতকে তারা মারধর করেন ও হত্যার হুমকিও দেন। এমনকি পানি পান করতে চাইলে অপহৃতকে তারা চেতনানাশক জিনিস দেয়। এতে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তার জ্ঞান ফিরে। তাকে মোট ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল এবং তিন ঘণ্টারও বেশি ভিডিও করেছিল।

ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিবাদীপক্ষের আইনজীবী সারাহ স্যাকস সুলতানা রাজিয়ার হয়ে আদালতে শুনানি করেন। তিনি দাবি করেন অপহৃত ওই ব্যক্তির হাতে তার মক্কেল গত ৫ বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। আর সে কারণে আত্মরক্ষায় রাজিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই যুক্তি তুলে ধরেন। তার দাবি অপহৃত ব্যক্তি রাজিয়ার চুল ধরে টানছিলেন আর তিনি আত্মরক্ষা করতে চেষ্টা করছিলেন।

অপহরণের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১১ মে। সেদিন আবু চৌধুরী ও লুবনা অপর একজনকে অপহরণ করে। অপহৃত ব্যক্তিটি উডসাইডের ব্রডওয়ে অ্যাভিনিউয়ের ৭২ স্ট্রিটের কাছে লুবনার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় আবু চৌধুরী জোর করে অপহৃতকে একটি মিনিভ্যানে তুলে নেন এবং তাকে মারতে শুরু করেন। পরে তারা অপহৃতকে একটি হোটেলে নিয়ে যান এবং আবু চৌধুরী তার সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেন। অপহৃত ব্যক্তির বাবার কাছে ফোন করে আবু চৌধুরী ২০ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করেন বলেও আদালতের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। অপহরণে তৃতীয় দিনে আবু চৌধুরী অপহৃত ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রেখে যান বলেও এতে বলা হয়েছে। পরে অপহৃত ব্যক্তি তার চোখ খুলে একটি জানালা দিয়ে বাইরে আসেন এবং নেইবারহুডের লোকজনের কাছে ৯১১ কল করতে বলেন।

রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়াকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয়। আর আবু চৌধুরী ও লুবনাকে আগেই আটক করা হয়। আবু চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারে তার বন্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত। অন্যদিকে ইফফাত লুবনার বন্ড মঞ্জুর হয়েছিল। সেই বন্ডের সহযোগিতায় যারা এগিয়ে এসেছেন পরবর্তী সময়ে তারাই শনাক্ত হয়েছেন।

আটক লোকজন কমিউনিটিতে পরিচিত। জানা গেছে, জ্যামাইকাতে তাদের দুটি দোকান রয়েছে। হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ে একটি সুপার মার্কেট এবং জ্যামাইকা অ্যাভিনিউয়ে একটি গাড়ির গ্যারেজ। নিউইয়র্কের মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদটি ফলাওভাবে প্রচার করা হয়েছে। আদালতের নথিতে যাদের অপহরণ করা হয়েছে তাদের নাম দেওয়া হয়নি। তবে তারাও বাংলাদেশি। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় কমিউনিটি ছি! ছি! রব উঠেছে এবং তাদের ধিক্কার জানানো হচ্ছে। কেউ বিশ্বাসও করতে পারছেন না, তাদের পক্ষে আমেরিকার মতো দেশে বসবাস করে এমন জঘন্য কাজ করা সম্ভব।

শেয়ার করুন