২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৪৬:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নকে বঙ্গোপসাগরে জলাঞ্জলি দিয়েছে : দেশকে দিবালোক সিংহ
ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আচরণে মানুষ থমকে আছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আচরণে মানুষ থমকে আছে দিবালোক সিংহ


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকরি কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ বলেছেন, শাসক দলের প্রতি সমর্থন না থাকলেও ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আচরণে মানুষ থমকে আছে। তবে এধরনের অবস্থা দ্রুত পাল্টে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সে দিকনির্দেশনাই দিচ্ছে।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 


দিবালোক সিংহ একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কমরেড মণি সিংহ এদেশের কৃষক শ্রমিক আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও পথিকৃত। শ্রমিক কৃষকের বিভিন্ন আন্দোলন করত গিয়ে দীর্ঘসময় কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশও তাকে কারা অন্তরালে থাকতে হয়েছে। টঙ্ক আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের বাড়ি ঘর সব উচ্ছেদ ও নিলাম হয়েছে। তারপরও তিনি রয়েছেন অপ্রতিরুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারে ছিলেন অন্যতম উপদেষ্টা। দিবালোক সিংহের মা কমরেড অণিমা সিংহ ছিলেন কৃষক নেত্রী। মুক্তিযুদ্ধে ও এদেশের কৃষক আন্দোলনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। অন্যদিকে দিবালোক সিংহ নিজে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। রাশিয়ায়  লেখাপড়া করেছেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি এলাকার মানুষের ও ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লড়াই সংগ্রাম আন্দোলনে সবসময় পাশে থাকেন। স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ডাক্তারদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে জেল খেটেছেন দিবালোক সিংহ। বর্তমানে দলকে সময় দেয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বার্থে প্রতিষ্ঠা করেছেন দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, যা বিগত তেত্রিশ বছর ধরে দেশের দরিদ্র মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। নিচে দিবালোক সিংহের পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 





দেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন?

দিবালোক সিংহ: বাংলাদেশের পুঁজিবাদী উন্নয়ন গতিধারার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল লুটপাট। আমাদের দেশে করোনা অতিমারী ও তার পরবর্তী সময়ে সামাজিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জোর ধাক্কা লেগেছে। বাংলাদেশের বৈষম্য সূচক বা গিনি অনুপাত সকল সময়ের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী। ব্রাকের গবেষণা (মে ২০২২) বলছে কোভিড অতিমারী ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮.৫৪ শতাংশ। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে জনসংখ্যার ২০.৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে ২০২৬ সালের ভেতর নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের যে প্রচার সরকার করছে তা জনসংখ্যার এতোবড় অংশকে বিবেচনায় না নিয়ে অগ্রসর হওয়া কঠিন। বাংলাদেশে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে এ স্লোগান নির্বাচনী ইশতেহারে লিখে ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু গত চৌদ্দ বছরে দুর্নীতি তো কমেইনি বরঞ্চ দুর্নীতির পাহাড় গড়ে উঠেছে। GFI (Global Financial Integrity)  বলছে ২০০৮ থেকে ২০১৭-এর ভেতর প্রতি বছর পাচার হয়ে গেছে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর রাজনীতি তো অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ঘনীভূত বহিঃপ্রকাশ। একদিকে চলছে চরম দুর্নীতি ও লুটপাট, অন্যদিকে সেই লুটপাট সুরক্ষা দেয়ার জন্য স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী কায়দার প্রশাসন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর লুট করা হয়েছে নির্বাচনীব্যবস্থা। 

একদিকে বাংলাদেশের কৃষক আর ক্ষেতমজুরেরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কৃষি উৎপাদনের রেকর্ড করছে। পোষাক শ্রমিকদের শ্রমে আমরা হয়েছি চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ যা কিনা আমাদের রফতানি আয়ের পঁচাত্তর ভাগ। আর এক কোটির বেশি প্রবাসী শ্রমিক রেকর্ড বিদেশি মুদ্রা আয় করছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে রাখার জন্য। অন্যদিকে লুটপাটের পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ধারক-বাহকদের বতর্মান মধ্যমণি আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় ক্রমাগতভাবে তা পাচার হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে। একটা ক্ষুদ্র লুটপাটকারী পুঁজিপতি শ্রেণি ও তার একাংশের প্রতিনিধিত্বকারী আওয়ামী লীগ এভাবে গত ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। আর স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় বাংলাদেশ শাসন করছে। বাংলাদেশের শ্রমিকের, কৃষকের, নিম্নবিত্তের ন্যূনতম অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। চলছে বিরোধী মত ও সংগঠনসমূহের বিরুদ্ধে চরম নির্যাতন ও দমন। বিভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ছয়শোর মতো ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না (Human Rights Watch 2021)। পরিচালিত হচ্ছে আয়নাঘরের মতো নির্যাতন কেন্দ্র। এ হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। মূলকথা হলো স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী লুটেরা পুঁজিবাদী ধনিকগোষ্ঠী সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি সমর্থনে তাদের শাসনকে নিরঙ্কুশ করার যতো ধরনের ফন্দিফিকির, কায়দাকানুন করে তাদের অত্যাচারী শোষণ ও চরম বঞ্চনার পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে প্রলম্বিত করে চলেছে।





দেশ: দেশে তো অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, মানুষ এসবের সুফল ও পেয়েছে। আপনি কি বলেন বা কিভাবে দেখেন এসব উন্নয়নকে? 

দিবালোক সিংহ: বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ এগিয়ে চলেছে। আমরা এমন সময় অতিক্রম করছি যখন এদেশে কর্মক্ষম স্বনির্ভর জনসংখ্যাই (১৫-৬০ বছর) সর্বোচ্চ। যাকে বলা হয় demographic dividend। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ব্যর্থ। প্রতি ঘরে চাকরি দেয়া হবে এই চটকদার স্লোগান দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সেটা স্লোগানেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। যখন শেষ হয়েছে তখন খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ১২শ কোটি ডলার বা এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এতে উৎপাদিত হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যেখানে রাশিয়ার একই কোম্পানি অর্ধেক দামে ভারতের তামিলনাড়ুতে এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে, সেখানে বাংলাদেশে তার খরচ দ্বিগুণ। এতো অল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনে এত ব্যয়বহুল প্রকল্প নেয়ার বিষয়টি ব্যপকভাবে সমালোচিত। সম্ভবত আমরা কয়লা দিয়ে অনেক কম খরচে এর থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হতে পারতাম। গত সাত বছরে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে শুধু বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এ তথ্য গণমাধ্যমে দিয়েছেন স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। এগুলো হল লুটপাটের জ্বলন্ত উদাহরণ।

২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর সুদ আসল মিলিয়ে আমাদের পরিশোধ করতে হচ্ছিল একশ কোটি মার্কিন ডলার। বড় বড় মেগা প্রকল্পে ঋণ নেয়ায় পরিশোধের কিস্তি বছরে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুশো কোটি ডলারে। আর আগামী অর্থবছর গুলোতে এ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়ে বছরে দাঁড়াবে আড়াইশ কোটি ডলার। বাংলাদেশের আয় ও দায় পরিশোধে বড় রকমের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা বাড়বে। ইতিমধ্যে ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টে’ ঋণাত্মক অবস্থান লক্ষণীয়। অযৌক্তিক মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও তার পরিণতি কি হতে পারে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। অথচ পুঁজিপতিদের ফ্যাসিবাদী সরকার লুটপাট করে মুনাফা অর্জন ও তা পাচারে ব্যস্ত রয়েছে। অন্যদিকে বিশাল বৈদেশিক ঋণের বোঝা দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কোভিড অতিমারী দেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা নগ্নভাবে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। গত দশ বছরে স্বাস্থ্য সেবা খাতে বাজেট বরাদ্দ একটি সীমার ভেতর রয়ে গিয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আমাদের জাতীয় আয়ের এক শতাংশের নিচে রয়েছে। এ প্রবণতা সার্ক দেশগুলোর ভেতর সর্বনিম্ন। একই পরিস্থিতি শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের। বড় বড় মেগা প্রকল্প আর মেগা দুর্নীতি, আর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা থেকে যাচ্ছে চরমভাবে অবহেলিত। এই হলো লুটপাটের উন্নয়ন ধারার প্রকৃত ছবি।





দেশ: বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে হামলা হচ্ছে। এটা কীভাবে দেখেন?

দিবালোক সিংহ: বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থী পুঁজিপতি শ্রেণির অনেকগুলো দল আছে। তাদের একটি দল আওয়ামী লীগ। নজিরবিহীন ভোট কারচুপি করে তারা ক্ষমতায় আছে। তারা যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের সরিয়ে আরো দক্ষিণপন্থীরা ক্ষমতায় আসতে আগ্রহী। তাদের ভেতর রয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য ছোট দল। আরো রয়েছে চরম সন্ত্রাসী মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো। এদের ভেতর চলছে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ ও প্রতিযোগিতা। এদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মদদ দিচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহ। এছাড়া রয়েছে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত। গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের কথা বলে তারা তাদের ভূ-রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, কূটনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ আদায়ে তৎপর। বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমাগতভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় পরিচালিত হয়েছে। আমরা সে প্রবণতা দেখেছি এরশাদের স্বৈরশাসনের সময়। দেখেছি ২০০৬ সালে বিএনপির নির্দেশে ইয়াজ উদ্দিনের তথাকথিত নির্বাচন আয়োজনের সময়। আর তারই ধারাবাহিক চরম অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী রূপ দেখছি বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে। পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সম্পন্ন দক্ষিণপন্থী দল আওয়ামী লীগকে সরিয়ে অন্যরা ক্ষমতা দখল করতে চায়। তাই রাজপথে সংঘর্ষ হচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণের স্বার্থ নেই। সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হবে না। নব্য উদারবাদী পুঁজিবাদী ধারার পরিবর্তনের কোন প্রসঙ্গ এসব দক্ষিণপন্থী ও চরম দক্ষিণপন্থী দলের নেই। আর ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সম্পন্ন আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজের দলীয় স্বার্থে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। তাদেরকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছে। 





দেশ: আপনার ওপর হামলা হয়েছে। এর কারণ কি?

দিবালোক সিংহ: অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মেহনতি মানুষের স্বার্থে ভোটের ও ভাতের অধিকারের লড়াইকে জোরদার করে সত্যিকারের একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। বুর্জোয়ারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নকে বঙ্গোপসাগরে জলাঞ্জলি দিয়েছে। দেশের মানুষের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সেই চেতনা ও স্বপ্ন ফিরিয়ে আনতে হবে। করতে হবে তার বাস্তবায়ন। সিপিবি সারা দেশে মানুষের চরম দুঃখ-দুর্দশা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তথা, ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের দাম কমানো ও একটি সর্বজনগ্রাহ্য নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে কালো টাকা ও পেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দ্বি-দলীয় দক্ষিণপন্থী পুঁজিবাদী ধারার বাইরে একটি মেহনতি মানুষের বিকল্প শক্তি সমাবেশের প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে অসহিষ্ণু করে তুলছে। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে সিপিবির ওপর হামলা হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় আমার এলাকায় বাধা দিয়েছে, হামলা হয়েছে। উল্লেখ্য বিষয় হলো আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহের ও পুলিশের হামলার পরও আমরা থেমে যাইনি। হামলার প্রতিবাদে মিছিল ও জনসমাবেশ অব্যাহত রেখেছি। সংগ্রাম চলছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার কলমাকান্দায় কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে হামলা হয়েছে। ওইদিন বিকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শহিদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। এতে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে আরো রয়েছেন সিপিবির কার্যকরি কমিটির সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ, জেলা সিপিবির সভাপতি নলিনী কান্ত সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি স্বপন চৌধুরী ও উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার। প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতাকর্মীরা জানান, জ্বালানি তেল ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে উপজেলা সিপিবি সমাবেশের আয়োজন করে।





দেশ: জনগণ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখছে। তাই রাজপথে বিরোধীদলের দাবি ও পাশাপাশি বাম দলগুলোর হরতালেও তারা সাড়া দিচ্ছে না?

দিবালোক সিংহ: আমাদের হরতালে জনগনের নৈতিক সমর্থন দৃশ্যমান হয়েছে। মিডিয়া বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। টকশোতে আওয়ামী নেতৃবৃন্দ কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক হয়নি তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের নৈতিক বিজয় দৃশ্যমান হয়েছে। শাসকদলের প্রতি সমর্থন না থাকলেও ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আচরণে মানুষ থমকে আছে। তবে সে অবস্থা দ্রুত পাল্টে যেতে পারে শ্রীলঙ্কার ঘটনাবলি সে দিকনির্দেশনাই দিচ্ছে।





দেশ: বাম দলগুলির ভবিষ্যৎ?

দিবালোক সিংহ: বামপন্থীরা এদেশের মেহনতি মানুষের লড়াই সংগ্রাম আন্দোলনের নিরবিচিছন্ন অংশীদার। এদেশে মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠিত সতের হাজার গেরিলা জীবনবাজি রেখে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে শহিদ হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সমর্থন নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে নিজেদের বুকের রক্ত মিশিয়ে দিয়ে গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। মেহনতি মানুষের আন্দোলনে বামপন্থীরা ক্রমাগতভাবে জেল, জুলুম, হুলিয়ার স্বীকার হয়েছে ও হচ্ছে। যে কোন নির্যাতন, জেল, গুম, খুন কমিউনিস্টদের পিছু হটাতে পারেনি। বামপন্থীরা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা বদল করে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। এদেশের সাধারণ মেহনতি জনতার কাছে ব্যবস্থা পরিবর্তনে তারা দায়বদ্ধ। ব্যবস্থা বদলের সে লড়াই তথা মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। সেটাই বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ।


শেয়ার করুন