০১ মে ২০১২, বুধবার, ৬:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশের স্কোয়াড নির্বাচন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশের স্কোয়াড নির্বাচন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ


অনেক নাটকীয়তা, অনেক ছলচাতুরি করে অবশেষে উঁচু বেতনভুক শ্রীলঙ্কান হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে প্রভাব দূষিত বিসিবি বিতর্কিত স্কোয়াড ঘোষণা করলেন। এই ঘোষণায় ইতিমধ্যেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলে না থাকার বিষয়টি।

বাংলাদেশ স্কোয়াডে রয়েছেন- সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, তানজীদ হাসান, নাজমুল হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান, হাসান মাহমুদ, শামীম হোসেন, আফিফ হোসেন, শরীফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম ও নাসুম আহমেদ।

স্কোয়াডে বর্তমান অবস্থায় লেট মিডল অর্ডারে অপরিহার্য বাংলাদেশ অনেক ওডিআই ম্যাচ একক কৃতিত্বে জয় করা অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে করে বলেই দেওয়া যায়, সাইলেন্ট কিলার রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল। কেননা বিসিবি সভাপতি বলেই দিয়েছেন এশিয়া কাপের এ দলটিকেই মূলত বিশ্বকাপের জন্যও বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ এশিয়া কাপে নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারলে এবং ব্যর্থ হলেও সম্ভাবনা দেখাতে পারলে টিকে যাবে দলটি বিশ্বকাপের জন্যও।

দলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা উইকেট টেকিং স্পিনার তাইজুল ইসলামের চেয়েও নাসুমকে প্রাধান্য দেওয়া হলো। রিয়াদের জায়গায় স্থান পেয়েছে আফিফ এবং শামীম হোসেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফরমেন্স অথবা অভিজ্ঞতা কোনোভাবেই রিয়াদের সঙ্গে তুলনীয় নয়। দলে মূল ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে তানজিদ তামিমকে নেওয়া ঠিক আছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী দল পাকিস্তান, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার তুখোড় পেস বোলারদের কথা মাথায় রেখে অন্তত এনামুল হক বিজয়ের মতো অভিজ্ঞ ওপেনার রাখা সমীচীন হতো। অপর প্রধান ওপেনার লিটন সম্প্রতি ভালো ফর্মে নেই। শেষ সিরিজগুলোতে নাজমুল শান্ত রান পাননি। নতুনদের মধ্যে তৌহিদ হৃদয় ইতিমধ্যেই জাত চিনিয়েছেন। জানি না স্কোয়াড নির্বাচনে সাকিবের ভূমিকা কি ছিল। দলের ব্যাটিং কিন্তু অনেকটাই সাকিব-মুশফিক-হৃদয়নির্ভর হয়ে পড়বে। বিদ্যমান অবস্থার বিবেচনায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অবজ্ঞা করা শুধু ভুল না পাপ হয়েছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে আফিফ বা শামীম পাটোয়ারী দলকে রক্ষা করতে পারবেন না যেটি নিয়মিত করে এসেছেন রিয়াদ।  

দলে বেশ কিছুদিন যাবৎ খেলোয়াড়-খেলোয়াড়, খেলোয়াড়-কোচ বনিবনার অভাব ছিল। অধিনায়ককে দল পরিচালনায় প্রভাবিত করা হতো। অনেকটা বিরক্ত হয়েই আফগনিস্তানের সিরিজ চলাকালেই অবসর ঘোষণা করেছিলেন তামিম। ক্রীড়াপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তামিম প্রত্যাবর্তন করলেও ম্যাচ ফিটনেস নিয়ে সমস্যা থাকায় তামিম এশিয়া কাপে নেই, বিশ্বকাপেও খেলবে কি না নিশ্চিত নেই। আর এই সুযোগে সাকিব অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়ে প্রথম সুযোগেই হয়তো তার ইচ্ছা অনুযায়ী দল সাজালো। হয়তো তার ইচ্ছার সঙ্গে হাতুরার অভীলাষ মিলে দুয়ে দুয়ে চার হওয়ায় রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল। নীরবে নিভৃতে হারিয়ে যাওয়ার পথে নীরব ঘাতক। হয়তো তামিম অধিনায়ক থাকলে রিয়াদকে বাদ দেওয়া এবং তাইজুলের স্থানে নাসুমকে নেওয়া সহজ হতো না। যদি রিয়াদকে এভাবে বাদ দেওয়াই হয়, তাহলে কেন বারবার নির্বাচকরা বলেছিলেন রিয়াদ ভালোমতোই এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব কাপের পরিকল্পনায় আছে? রিয়াদও ওই কথা অনুসারে নিজের প্রস্তুতি নিয়ে ঘাম ঝরিয়েছেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। একজন বিশ্বমানের পারফরমারের সঙ্গে এই ধরনের হঠকারিতা করা ঠিক হয়নি বিসিবির। 

বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে প্রাথমিক রাউন্ডে আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলতে হবে। দুটি দল কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি প্রস্তুত। খেলার মধ্যেই আছে দুই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়। বাংলাদেশ দুটি দলকে হারাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। আর গ্রুপ অব ফোরে বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হবে আগ্নেয়গিরি হয়ে জ্বলতে থাকা পাকিস্তান এবং ভারতকে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ভালো না করলে প্রক্রিয়া পর্বে বিশ্বকাপে। অথচ সবকিছু ওলটপালট না হয়ে গেলে উভয় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের স্বর্ণালি সম্ভাবনা ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মের সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদের পাশাপাশি উদীয়মান তরুণদের অবদানে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল। সাকিব-হাতুরা জুটিকে এখন প্রমাণ করতে হবে, তাদের কৌশল দলকে পরিবর্তন করেছে। এশিয়া কাপে কিছু অর্জিত না হলে কিন্তু নিন্দুকেরা দায়দায়িত্ব নির্বাচকম-লীসহ সাকিব হাতুরার ওপর বর্তাবে। জানি না বিসিবি সভাপতি এখন বা সেই সময় কি বলবেন? যদিও তিনিও দায় এড়াতে পারবে না। কারণ ওই দুয়েকটা দল করে ছেড়ে দেবে আর বিসিবি সভাপতি কিছু বলবেন না, সেটা অতীতে নজির নেই। 

আমি তরুণ খেলোয়াড়দের হতাশ করবো না। হয়তো নিজেদের সেরাটা নিবেদন করলে দলটি চমক সৃষ্টি করতেও পারে। ক্রিকেটে আগাম কিছু বলা অনেক ক্ষেত্রেই বোকামি। তবে রিয়াদকে দল থেকে ছেটে ফেলার জন্য দলকে বিরাট মাশুল দিতে হতে পারে।

শেয়ার করুন