২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৪০:০৫ অপরাহ্ন


মিরপুর টেষ্ট
চোখ ধাধাঁনো ব্যাটিংয়ে মুশফিক লিটন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৫-২০২২
চোখ ধাধাঁনো ব্যাটিংয়ে মুশফিক লিটন দুর্দান্ত ব্যার্টিং করে দুইজনই করেছেন সেঞ্চুরী। আনন্দধারা এ জন্যই মুশফিক ও লিটনের /ছবি সংগৃহীত


রয়েল বেঙ্গল টাইগার্সদের অভয়ারণ্য মিরপুরের শেরে  বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এখানে খেলা শেষ ৮ টি টেস্ট ম্যাচের পাঁচটি জিতেছে বাংলাদেশ। স্পিন ফাঁদ তৈরী করে আইসিসি ডিমেরিটস পেয়েছে। নতুন তৈরী উইকেট টিতে হয়তো ময়েশ্চার ছিল। কাশুন রঞ্জিতা আর ফার্নান্দোর প্রথম ৬ ওভার কিছুটা সুইং ছিল। 

তবে এমনভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে বাংলাদেশ ব্যাটিং সেটি কাঙ্খিত ছিল না। যেন বৈশাখী ঝরে কাঁচাআম পাঁকা আম টুপটাপ ঝরছিল। মাঠে আসা আইসিসি চেয়ারম্যান আজ বাংলাদেশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের  আনাড়িপনা দেখেন। যেভাবে আউট হয়েছেন বাংলাদেশ টপ অর্ডার, তারা রিপ্লে দেখে লজ্জা পাবে। 

দুর্বল পায়ের কাজের খেসারত দিয়ে কাসুনের ইনসুইং বলে শুন্য রানেই ফিরলো মাহমুদুল হাসান জয়। পা বাড়িয়ে ডিফেন্ড হয়তো করা যেত। ব্যাট পাড়ের মাঝে দরজা খোলা ছিল। অভিজ্ঞ তামিম ফের্নান্ডোর লেগ স্ট্যাম্পে পড়া একটু লাফিয়ে ওঠা বল ভুল খেলে সহজ ক্যাচ তুলে শুন্য রানে বিদায় নিলো। ৬/২ কেঁপে উঠলো টাইগার শিবির। এমনিতেই উষ্ণ আবহাওয়ার অস্বস্থি , তার পর শুরুতেই যুগল আঘাত সামাল দেয়ার মতো ধৈর্য , দক্ষতা বা কৌশল নেই শান্তর। জয়ের মতোই ব্যাট পাড়ের দুয়ার খুলে উইকেট হারালো শান্ত। নড়বড়ে ফর্মে থাকা মোমিনুল ছিকটে গেলো।মোমিনুল আড়াআড়ি যেতে থাকা বল খেলবো কি খাবো না ভেবে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলো। এমনকি সাকিবকে পরিকল্পনা  করে প্রথম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেললো রঞ্জিতা।  ভাগ্য সহায় ছিল না, আম্পায়ার্স কল না হলে সাকিব রক্ষা পেতো।  

৭ম ওভারে , ২৪/৫ উইকেট হারানোয় যখন অনেকেকেই আঁশের বাংলাদেশের ভেঙে পড়ার শঙ্কায় ছিল। ঝরা  পালকের ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দাঁড়ানোয় বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। দেয়ালে পিঠ রেখে উঁচু মানের ব্যাটিং  করে মুশফিক লিটন দলকে টেনে তুললো গভীর গিরিখাত থেকে। 

লাঞ্চ অবধি দ্বিতীয় ঘন্টা কথাই  নেই।  লাঞ্চ এবং চা বিরতির মাঝেও অবিচ্ছিন্ন জুটি নতুন মাইল ফলকে পৌছালো। ২৫ রানের কমে ৫ উইকেট হারানো কোনো ব্যাটিং জুটি আগে। ২৫৩ (ব্যাটিং) রান করে নি। যা  ৬ষ্ট উইকেট জুটির রেকর্ডও। দু’জনই করেছেন সেঞ্চুরী। আজ সে সেঞ্চুরীর মাইলফলক কোথায় নিয়ে যেয়ে থামবেন সেটাই দেখার প্রতীক্ষা। 

 আসলে ওদের সাচ্ছন্দ ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে ওরা দুইজন যেন ভিন্ন উইকেটে খেলছে। চোখ ধাধাঁনো ব্যাটিংয়ে মুশফিক লিটন | প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে দুইজনই প্রতি আক্রমণ করে রানের গতি সচল রেখেছে। যতই সময় গাছে প্রবল আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে দুইজন ব্যাক্তি গত মাইলস্টোন আর স্বস্তির দলীয় সংগ্রহের দিকে আগুয়ান হয়েছে। ওদের ব্যাটিং দেখে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণের তীরহারা নদীতে নৌকায় ভাষার স্মৃতি মনে পড়ছিলো। তখন স্বাধীন বাংলা বেতারের গান 'তীরহারা এই ডেউয়ের সাগর পারি দিবোৰে আমাদের সাহস জগত। অথই সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকা দুই মাঝি তেমনি করে আজ ডেউয়ের সাগর পারি দিলো। মুশফিককে বাক যুদ্ধে তাতিয়ে দেয়ার   

 কৃত্তিত্ব কেউ নিলে অবাক হবো না। 

মুশফিক লিটনের মাইল ফলক জুটি ছিল বাহারি স্ট্রোকস সমৃদ্ধ। ওদের যুগল উঁচু মানের মানের ব্যাটিং অতিথি দলকে হকচকিয়ে দিয়েছিলো। লিটনের ব্যাটিং যদি হয় বাউন্ডলে কবি নজরুলের এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, মুশফিকের ব্যাটিং ছিল কবিগুলোর সোনারতরী সচ্ছন্দ প্রবাহ। যেখানে বাংলাদেশ দিনশেষে পৌঁছেছে বলবো না ম্যাচ থেকে ছিটকে গাছে শ্রীলংকা।  তবে চালকের আসনে বাংলাদেশ বলতেই পারি। 

শেয়ার করুন