২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৭:২৫:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


কীভাবে মোকাবিলা হবে গ্যাস সংকট?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
কীভাবে মোকাবিলা হবে গ্যাস সংকট?


পত্রিকার পাতা খুললেই শিরোনাম নারায়ণগঞ্জে, গাজীপুরে, চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট। রান্না করার গ্যাস নেই, শিল্পগুলো গ্যাস সংকটে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে, মেঘনাঘাটে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কবে পাবে গ্যাস নিশ্চয়তা নেই। চারিদিকে গ্যাস নিয়ে হা হা কার। এমন হওয়ার কথা ছিল না। কেন হলো তাই নিয়ে সবার প্রশ্ন। গ্যাস সেক্টরের ২৮ বছর মাঠপর্যায়ে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার জন্য লেখকের কৌতূহল অনেক। 

বিদ্যুৎ সেক্টরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেন গ্যাস সেক্টর বিকশিত হলো না, সেই বিষয়ে সবার কৌতুহল। জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগ কিন্তু একই মন্ত্রণালয়ের অধীন, সচিবালয়ের একই ভবনে অবস্থান। কিন্তু একই মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় নেই। এই যে মেঘনা ঘাটে তিন তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হলো গ্যাস সংকট সময়ে কোন তথ্যের ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল? যেখানে অনেক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট এখনই গ্যাস সংকটের কারণে অলস বসে আছে তখন কোথা থেকে আসবে ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস? নতুন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। সেখানেও নানা সংকট আছে। অচিরেই ভূমি অধিগ্রহণ না হলে চলতি শুস্ক মৌসুমে পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ হবে না।

গ্যাস নেই জেনেও অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণকাজ জিটিসিএলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে পঙ্গু বানানো হয়েছে কোম্পানিটিকে। একই অবস্থা বাপেক্সের। এককভাবে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্বে থাকা বাপেক্সকে জনবল, অর্থ দিয়ে সাজানো হয়নি। বাপেক্সের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোকে দায়িত্ব দেওয়ার উচিত ছিল, সেটি হয়নি। আমলা নিয়ন্ত্রিত পেট্রোবাংলা উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থাকে বেসামাল করে ফেলেছে। কয়লাসম্পদ মাটির নিচে, জলে-স্থলে প্রয়োজনমাফিক গ্যাস অনুসন্ধান, আহরণ হয় নি। ২৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন কমছে। শেভ্রন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র কিছু দিন আগেও ৪০ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন করতো। এখন সেটি কমে ১০৫০ এমএমসিএফডি। যে কোনো সময় বড় ধরনের ধস নামতে পারে। এলএলজি আমদানি সর্বোচ্চ হতে পারে ১০০০ এমএমসিএফডি। তার পরেও ঘাটতি থাকবে ১২০০-১৫০০ এমএমসিএফডি। আইওসির গ্যাস মূল্য পরিশোধ এবং এলএনজি কেনার পর্যাপ্ত টাকা নাই পেট্রোবাংলার। বিপিডিবি এবং বিসিএসির কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া আছে পেট্রোবাংলার। ২০২৪, ২০২৫ অভিশপ্ত সময় খনিজ এবং জ্বালানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। 

তথাকথিত কয়েকজনের আমলার পরামর্শে দেশের কয়লা উত্তোলনে স্থবিরতা, সাগরের গ্যাসসম্পদ আহরণ ঝুলে আছে। ভারতীয় কোম্পানি এলএনজি আমদানি করে বাংলাদেশকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করবে। ভারত থেকে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ আসছে। এমনকি ভারতীয় কোম্পানি কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশে রফতানি করছে। পাইপলাইন দিয়ে পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ রফতানি করছে। ডাল, নুন, চিনি, পেঁয়াজ, মরিচ, বিদ্যুতের পর এখন এলএনজি গ্যাস হয়ে আসবে ভারত থেকে। নিজেদের গ্যাস কয়লা মাটির নিচে রেখে ভারত নির্ভরতা বিস্ময়ের বিষয়। 

২০২৪-২০২৫ সাল কিভাবে সামাল দেওয়া হবে গ্যাস সংকট। ২০২৬ এর আগে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। বিপুল ঘাটতি নিয়ে কীভাবে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে মেঘনা ঘাটের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর? কীভাবে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাবে রফতানিমুখী শিল্পগুলো? ২০১০-২০২৪ সালে পেট্রোবাংলায় কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কি অর্জন করেছেন? জ্বালানি উপদেষ্টা বা জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী কি অর্জন করেছেন সেটাও এখন পর্যালোচনার সময়।

শেয়ার করুন