০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ১১:৪৩:৫০ অপরাহ্ন


উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কি-না সন্দিহান খোদ আ. লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৪
উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কি-না সন্দিহান খোদ আ. লীগ


উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ উদ্বেগ উৎকন্ঠার পাশাপাশি হতাশা দেখা দিয়েছে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। তারা মনে করছে এবারের উপজেলা নির্বাচনকে জোর যার মুল্লুক তার-এই নীতিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

আওয়ামী লীগের নেয়া নয়া কৌশল

এবার প্রথম ধাপে মোট ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। এবার উপজেলা নির্বাচন হবে মোট চারটি ধাপে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। ফলে একক দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও আর থাকছে না। যাঁর যাঁর মতো করে স্বতন্ত্রভাবে দলের নেতারা নির্বাচন করতে পারবেন। যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতারা ভোট করতে পারবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমন কৌশলের নেপথ্যে। তিনি চান এই নির্বাচনকেও আর্ন্তজাতিকমহলে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণ করতে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়।

মাঠ পর্যায়ে কি হচ্ছে

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম ভারী হয়ে উঠছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একধরণের ব্যর্থতার কবরই প্রায় সব ক’টি গণমাধ্যমেই ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে । কেউ কেউ লিখেছেন, পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মেতে উঠেছেন জাতীয় সংসদের সদস্যরা (এমপি)। উপজেলা পরিষদকে নিজের মুঠোয় রাখতে আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের পরিবার থেকে প্রার্থী দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপিরা। তাদের কারও কারও স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-ভাতিজা, শ্যালক, মামা-ভাগ্নের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে উপজেলার প্রার্থিতা। আবার প্রকাশিত হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিসহ তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগে। এ জন্য প্রার্থিতা ঘোষণার চেষ্টায় নিষেধাজ্ঞা এবং কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। বলা হচ্ছে এতে করেও বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এমন খবরের পাশাপশি দেখা গেছে আরেক চমকপ্রদ ঘটনা। তা হলো জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেছিলেন যেসব স্থানীয় জণপ্রতিনিধি তাদের কেউ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আবার নানা কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি কেউ কেউ। এর মধ্যে কয়েকজন এমপি নির্বাচিতও হয়েছেন। বাকিদের অনেকেই এমপি হতে না পেরে আবার উপজেলায় ফিরতে চান। উপজেলা নির্বাচন হওয়ার আগে এমনই জটিল মারাত্বক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তৃণমুলে। 

শেষ কথা..

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকার পেছনের কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূলে মারাত্মক বিভেদ তৈরি হয়েছে। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে একজনকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিলে অন্যরা স্বতন্ত্র ভোট করবে। এতে বিভেদ আরও বাড়বে। বরং উন্মুক্ত করে দেওয়াই ভালো হবে। দলীয় কোন্দল ও সংঘাত থেকে নেতা-কর্মীদের দূরে রাখতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না রাখার কৌশলটি নেয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যে চিত্র ফুটে উটেছে তা দেখে রাজনৈতিব পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করে, দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সদিচ্ছা থাকলেও কতিপয় নেতার কারণে উপজেলা নির্বাচন কার্যত সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। তারা মনে করে দলের প্রভাবশালীরা প্রভাব কাটিয়ে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের আয়ত্তে রাখতে গিয়ে বিপত্তি ঘটবে। উপজেলা নির্বাচন অংশ্রগ্রহণমূলক দূরে থাক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে বলেও প্রমাণ করা দুরুহ হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই যে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হতে পারে না বা হচ্ছে না সে-টি সহজেই প্রমাণ করে দেবে মাঠের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল। এটি প্রমাণ করে বিএনপি তাদের আপোষহীন ইমেজটি জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরেকবার সফল হবে। বিএনপি সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ না নিয়েও দেশে বিদেশে আরো সমর্থন লাভ করবে। কেননা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পশ্চিমারা একে এখনো সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য বলে গ্রহণ করেনি।

শেয়ার করুন