০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:২৭:০১ পূর্বাহ্ন


দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৪
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য দুর্নীতির বরপুত্র বেনজীর


অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের অবসর গ্রহণকারী দুইজন শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যাবহার এবং দুর্নীতির খবর বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। একজন বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ অপরজন সাবেক সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, গুরুতর অভিযোগের সত্য মিথ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রমাণ সাপেক্ষ। ঘটনাক্রমে দুইজন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার অধিবাসী। যদিও দুর্নীতিবাজদের কোনো পরিচয় নেই। তারা দুর্নীতিবাজ ওটুকুই। 

সাধারণের ধারণা ২০০৯-২০২৩ ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির আকার বিকশিত হলেও সকল স্তরে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাপক দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের ফসল জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছায়নি। সরকার প্রধান ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ উপহাসে পরিণত হয়েছে। ভীষণভাবে আমলা নির্ভর সরকারের সময়ে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত থাকা আমলা, কর্মকর্তারা সুযোগ সন্ধানী ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটের মত দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তারই একটি ছিটে ফোটা বেনজির আহমেদ এবং মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগসমূহ হতে ফুটে উঠেছে। 

কানাঘুষা আছে সরকার প্রধান তার ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ সত্যিকারভাবে এগিয়ে নিলে অনেক উপদেষ্টা, মন্ত্রী (বর্তমান এবং সাবেক), সাংসদসহ অনেকের অবাধ লুটপাটের কাহিনী প্রকাশিত হবে। অনুকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণেই সরকার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হচ্ছে না, সড়কে শৃখলা আসছে না, ব্যাঙ্ক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকট উন্নত হচ্ছে না। 

বেনজীর আহমেদ ছিলেন ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা। চাকরিতে থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের আশীর্বাদ পুষ্ট থাকায় একসময় পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো তার জন্য অসুবিধা হয় নি। বাংলাদেশের বিদ্যমান অবস্থায় প্রিন্ট মিডিয়া বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত না হয়ে দুর্নীতি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেনি। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের মত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষত পুলিশ প্রশাসনের অনেকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়ার কানাঘুষা আছে। অনেক দাম্ভিক পুলিশ অফিসারকে বলতে শুনা গেছে পুলিশ নাকি বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। পুলিশ সৎ এবং কর্তব্য পরায়ণ হলে সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হত বলে বিজ্ঞ জনের ধারণা।

অনেকের মতে অনেক পুলিশ সদস্য সড়কে চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আর এই কারণেই ঢাকা মহানগরী সহ সারা দেশে লক্কর ঝক্কর ফিটনেসবিহীন যানবাহন অব্যাহত ভাবে চলছে। লাইসেন্স বহন চালকরা নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ ঘাটতি না থাকলেও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সকল কার্যক্রম ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ এই সরকারের আমলে পুলিশ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ভালো কাজ করে সুমন কুড়িয়েছে। করোনা সময়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে জনতার পাশে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ তথা সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য অবিলম্বে বেনজীরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি। 

একই সঙ্গে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ সমান গুরুত্ব বহন করে। অভিযোগ আছে তিনি জ্বালানি সচিব থাকার সময় জ্বালানি সেক্টরে কর্মরত কিছু দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। পরিবর্তিতে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে চাকরিরত থাকা অবস্থায়ও অনেক দুর্নীতিপরায়ণ ব্যাক্তিকে সুরক্ষা দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। 

ইতিহাস বলে উন্নয়নশীল দেশসমূহে উন্নয়নের একটি পর্যায়ে সরকার কিছু মহলকে নিয়ন্ত্রিত দুনীতির সুযোগ দিয়ে ক্ষমতার অনুঘটক বানায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তেমনি হয়েছে হয়তো। কিন্তু এখন সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি স্থাপনের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। সেই দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন।

শেয়ার করুন