২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৫০:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


দেশকে ফয়জুল হাকিম
আগামী নির্বাচনেও গদি দখলের চক্রান্তে সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২২
আগামী নির্বাচনেও গদি দখলের চক্রান্তে সরকার ফয়জুল হাকিম


জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অতীতের মতো গদী দখলে রাখতে শেখ হাসিনা সরকার নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। তবে  সে সম্পর্কে দেশবাসী হুঁশিয়ার। এই চক্রান্ত রুখে দাঁড়াতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের তাগিদ অনুভব করছেন। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নটিও একই সাথে সামনে চলে এসেছে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এসব কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাল্যকালে মনোজগতে যে প্রভাব ফেলেছিল তা থেকেই  প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে টেনে এনেছে ফয়জুল হাকিমকে।  তার মতে, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সংগঠক হিসেবে, আশির দশকে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সংগঠক হিসেবে সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে, বুর্জোয়া রাজনীতির বিষাক্ত বৃত্ত থেকে ছাত্র আন্দোলনকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সংগঠন প্রতিষ্ঠায়, ১৯৮৭ সালে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট গঠনে, নব্বইয়ের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসক স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার পতনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিচালনায়, ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে, সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানি কর্তৃক দেশের তেল গ্যাস সম্পদ লুন্ঠনের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদী ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে সাধ্যানুযায়ী সক্রিয় রেখেছেন নিজেকে। দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহার দাবিতে তার কন্ঠ সোচ্চার সব সময়। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 

দেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন।

ফয়জুল হাকিম : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতারণামূলক নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার মধ্য দিয়ে গদি দখলে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে দেশে যে আওয়ামী  ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়াতি হতে চলেছে তার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। শোষণ লুণ্ঠন দুর্নীতি  বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি বাজারি শোষণকে এই ফ্যাসিবাদী শাসন যে মদদ দান করে চলেছে তা আর গোপন বিষয় নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অতীতের মতো গদী দখলে রাখতে হাসিনা সরকার যে নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে সে সম্পর্কে দেশবাসী হুঁশিয়ার। এই চক্রান্ত রুখে দাঁড়াতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের তাগিদ অনুভব করছেন। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নটিও একই সাথে সামনে চলে এসেছে। 

দেশ: রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন পরিবেশ কি আগে ছিল না?

ফয়জুল হাকিম :  না, এমনভাবে ছিলো না। বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলগুলো মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু এরা জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে অবাধে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে এরাই নব্বইয়ের দশকে নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান জারি করে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী করেছিল। জাতীয় ঐক্যমত্যর ভিত্তিতেই এরা এই বিধান করেছিল। কিন্তু হাসিনা সরকার হাইকোর্ট এর মাধ্যমে তা বাতিল করে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করে হাসিনা সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে।

দেশ: দেশবাসী বিএনপি বা জাতীয় পার্টির আমলে কি এমন পরিস্থিতি দেখেনি?

ফয়জুল হাকিম : ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনেও জয়ী বিরোধী দলের প্রার্থীর বিজয় কেড়ে নেয়া হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে দেশে সব দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করা হয়েছিল। সামরিক শাসন ও সংসদীয় সামরিক শাসন আমলের তথাকথিত নির্বাচনও জনগণ দেখেছে। বিএনপি জাতীয় পার্টির আমলও দেখেছে। আসলে শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। আর শেখ হাসিনা সরকার তো গত ১৪ বছরে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাই তুলে দিয়ে দুর্নীতিবাজ সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র আর ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সিন্ডিকেট কায়েম করেছেন।   

দেশ: তাদের আমল কি খুব ভালো ছিল। 

ফয়জুল হাকিম : আশির দশকে সামরিক শাসনের অবসান করে সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো যেমন আন্দোলন করেছিল, তেমনই ছাত্র শ্রমিক কৃষকসহ শ্রেণী পেশার সংগঠনগুলো অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু জনগণের বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুযোগকে নিজ শ্রেণীগত স্বার্থে শাসক শ্রেণী সংকুচিত করেছে। আর গত ১৪ বছরে হাসিনা সরকার বিরোধী দল দমনে গুম বিচার বহির্ভূত হত্যা গ্রেফতার মিথ্যা মামলা নির্যাতন হয়রানি করে সমগ্র দেশকে এক পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। 

দেশ: এ সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে বলে তারা দাবি করে। এব্যাপারে কিছু বলুন।

ফয়জুল হাকিম : শাসক শ্রেণীর দৃষ্টিতে উন্নয়ন হচ্ছে সেতু নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি। এইসব তথাকথিত বৃহৎ সব উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে  বৃহৎ দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে যা এখন আর অজানা নয়। এইসব প্রকল্প দ্বারা এরা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত বলে এর গুণগান করে। স্মরণ রাখা দরকার এদেশে করোনাকালে প্রায় তিন কোটি লোক দরিদ্রসীমার নীচে নেমে গেছে আবার একই সময় কয়েক হাজার নতুন কোটিপতির জন্ম হয়েছে। গত ১৪ বছরে বিদেশে প্রায় দশ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কানাডা আমেরিকায় বেগম পাড়া গড়ে উঠেছে। 

দেশ: দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে বলে মাঠের আন্দোরনরত দলগুলি কথায় কর্নপাত করছে না-এটা কি ঠিক?

ফয়জুল হাকিম : না, ঠিক নয়। উন্নয়নের আসল সজ্ঞা জনগণ নিজের জীবন থেকে, অন্যের জীবনের সংগে তুলনা করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ফলে উন্নয়নের সুফল সম্পর্কে শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য দেখা যা । জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে হিমশিম খাওয়া সাধারণ  মানুষের জীবনে কোন অবসর নেই। সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পথ সম্পর্কেও তাদের উপলব্ধি কম। অন্যদিকে অতীতে সংগ্রামে অংশ নিয়েও সামাজিক  কোনো পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে তাদের ভিতর চরম হতাশা কাজ করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সরকার শ্রেণী পেশার আন্দোলনকে নির্মম ভাবে দমন করে চলেছে।

দেশ: বর্তমান সরকারের কাছে আপনাদের পরামর্শ কি?

ফয়জুল হাকিম : প্রতারণ মূলক নির্বাচনে গঠিত, ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে পরামর্শ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করি না

দেশ: বাম রাাজনৈতিক দলগুলির ভবিষ্যত  কি?

ফয়জুল হাকিম : আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদ, চরম দুর্নীতি লুণ্ঠন বাজারি শোষণের প্রতিরোধ, সা¤্রাজ্যবাদী ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য থেকে দেশকে মুক্ত করা, নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহাল রেখে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে বাম সংগঠনগুলোর ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে।

দেশ: বাম ঐক্য গড়ে উঠছে না কেনো?

ফয়জুল হাকিম : বামপন্থী দল বলে যারা পরিচিত এদের অধিকাংশই বুর্জোয়া শ্রেণীর খেদমতগার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনকে এদের অনেকেই সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। আর এদের অনেকের কাছে আন্দোলনটা বড়, লক্ষ্য কিছু নয়। এরা বাঙালি লুটেরা ব্যবসায়ী শ্রেণীর সাথে জনগণের দ্বন্দ্ব দেখতে পায় না, এরা সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে হাজির করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। এদের সাথে ঐক্য হবে কি করে ? 

দেশ: আপনারা কি ধরনের বাম ঐক্য চান?

ফয়জুল হাকিম : সাম্রাজ্যবাদ ফ্যাসিবাদ বিরোধী, শ্রমিক কৃষক নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সরকার সংবিধান রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে বাম ঐক্য ।

দেশ: বহত্তর বাম ঐক্যে বাধা কি কি?

ফয়জুল হাকিম : প্রকৃত বাম ঐক্যে বাধা এদের শ্রেণীগত অবস্থান, জাতীয় মুক্তির পথে বাধা সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে এদের দৃষ্টিভঙ্গি। শ্রমিক কৃষক নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সরকার রাষ্ট্র কায়েমের সংগ্রামের রূপ নিয়ে পার্থক্য।

দেশ: প্রায় বলা হয়ে থাকে স্বাধীনতার সুফল দেশবাসি পাচ্ছে না। কিন্তু কেনো?

ফয়জুল হাকিম : স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা আসেনি, জনগণের সংবিধান জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

শেয়ার করুন