০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৭:১১ অপরাহ্ন


জামায়াত-বিএনপি রাজনৈতিক বিরোধ কৌশলগত পরিকল্পনা কি না?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২৫
জামায়াত-বিএনপি রাজনৈতিক বিরোধ কৌশলগত পরিকল্পনা কি না?


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যখন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনি জামায়াত কিছু সহযোগী স্যাটেলাইটে শক্তি নিয়ে পিআর পদ্ধতি, জুলাই ঘোষণা বাস্তবায়ন এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। এ বিষয়গুলো দেশের বিদ্যমান কনস্টিটিউশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোনো অনির্বাচিত সরকারের আইনগত অধিকার নেই এ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এ মুহূর্তে যে দাবিগুলো নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করাকে ঘোষিত নির্বাচন পথনকশাকে বাধা প্রদানের অপপ্রয়াস হিসেবে দেখছে বিএনপি। তবে অন্তরালে বিএনপি জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা কোন পর্যায়ে সে বিষয় নিয়ে জনমনে কৌহল রয়েছে। জামায়াত-বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী। ২০০১-২০০৬ উভয় দল মিত্র হিসেবেও সরকারে ছিল। দুটি দল আওয়ামী-বিরোধী, প্রতিবেশী ভারত-বিরোধী হিসেবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত। বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিরোধের কারণে আপাতত দুটি দল বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্রশিবিরের ভূমিধস বিজয়ের ফলে পালে হাওয়া লেগেছে জামায়াতের। জুলাই-আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাঙ্গনসহ সরকারের সব স্তরে সুকৌশলে জামায়াত তাদের অবস্থান সুনিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে নির্বাচন হলেই সরকার গঠন করবে এমন আত্মবিশ্বাসে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলো চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব। মামলাবাজি, মব সন্ত্রাসে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের বিতর্কিত করেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ছে বলে সাধারণের বিশ্বাস। এমনি অবস্থায় কিছু মৌলিক সংস্কার বিষয়ে দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান নিদৃস্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।

সবাই জানে পিআর পদ্ধতিতে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ নেই। নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কনস্টিটিউশন পরিবর্তন করে পিআর পদ্ধতি যুক্ত করার সুযোগ নেই। আর পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না-সে বিষয়েও যৌক্তিক সংশয় রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলকে কোন যুক্তিতে কীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে তা-ও সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলছে না। আর জুলাই ঘোষণার কিছু অংশ কনস্টিটিউশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় এগুলো বাস্তবায়ন করতেও নির্বাচিত সংসদ অপরিহার্য। মোটকথা, এ মুহূর্তে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একমাত্র সমাধান। কোন দল স্বৈরাচার, কোন দল গণতান্ত্রিক-সে বিষয়ে সাধারণ জনগণ অবহিত। জনগণ দীর্ঘ ৫৪ বছর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং বিভিন্ন মেয়াদে অনির্বাচিত অন্তর্র্বর্তী সরকার দেখেছে। কোনো দল বা সরকার জনগণের স্বার্থরক্ষা করেনি, বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও দেশ কিন্তু গভীর অনিশ্চয়তায় পতিত হয়েছে। সংকট মুহূর্তে দেশপ্রেমিক গোষ্ঠী নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে সহায়তা করা সমীচীন। আমি নিশ্চিত বর্তমানে যে অবস্থান থাকুক বিএনপি, জামায়াতসহ দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকারের উচিত কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে বিশেষ প্রণোদনা না দিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা। নির্বাচনে রাজনৈতিক মেরুকরণ হবে, সেই ক্ষেত্রে বিএনপি জামায়াত নির্বাচনী জোট গঠিত হবে কি না, সেটিও নিশ্চিত নয়।

শেয়ার করুন