২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৫৩ পূর্বাহ্ন


হাদির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের বিষোদগার
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের অন্তরালে
মইনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের অন্তরালে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শরিফ ওসমান হাদিসহ অন্যরা


বাংলাদেশে একজন হাদির জন্ম হয়েছিল। সেই শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যু হয় ঘাতকের বুলেটের আঘাতে। ঘাতক কে-তা সবারই জানা। ঘাতককে জেল থেকে বের করে এনে হাদি হত্যায় নিয়োজিত করা হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান কিংবা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর বা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কেউ এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিলো না কিংবা অনুশোচনাও করলো না। হাদি আজ নেই, সব দায়দায়িত্ব থেকে সে চলে গেছে। কিন্তু তার বিচারের যেন শেষ নেই। বিএনপি নেতৃবৃন্দ তার নামাজে জানাজা কিংবা তার মৃত্যুতে দায়সারা গোছের শোক ছাড়া অন্যকিছুতে শামিল হলো না। মির্জা আব্বাস বললেন, অনেক হাদি আসবে যাবে কিন্তু প্রথম আলো কিংবা ডেইলি স্টার শেষ হলে আর আসবে না। হয়তো তার কথাই ঠিক। কি চমৎকার তুলনা। এই উক্তিতে প্রচ্ছন্ন আভাস রয়েছে হাদির প্রতি তার আক্রোশ। যেন হাদির মৃত্যুতে তেমন কিছু যায় আসে না। হাদি অবশ্য মির্জার চরিত্রের বিশ্লেষণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন যখন তিনি সংসদ নির্বাচনের কথা মির্জা আব্বাসকে বলতে গিয়েছিলেন, তখন তাকে কীভাবে তাচ্ছিল্যভরে বিদায় দিয়েছিলেন। হাদি সেই তাচ্ছিল্যের জবাব না দিয়ে তার বিশাল আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন মাত্র। বাংলাদেশের সংবাদপত্র এসব লিখে না। এমনভাবে লিখে যাতে সাংবাদিকতা ক্রমাগত ফ্যাসিবাদের কুটিরে আবদ্ধ থাকে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে ভারতের পদলেহী খলিলের কথা বলতে চাই না। বলতে চাই না জাহাঙ্গীরের কথা। বলতে চাই না আসিফ নজরুলের কথা। এরা তাদের তদবির নিয়ে আখের গোছানোর কাজে থাকবে। হাদির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের বিষোদগার চলছে। অথচ জাতীয় নিরাপত্তার কি কাজ খলিলুর রহমান করছেন? না তার নিজের ভবিষ্যৎ নির্মাণে ভারতের পায়রবি করছেন তা বলা মুশকিল। জাহাঙ্গীরের অবশ্য ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা নেই। তার চিন্তা বর্তমান নিয়ে। তারপর আসিফ নজরুলের এক সময়কার তুখোড় নেতৃত্ব জুলাই বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়েছিল। অথচ পরম্পরা তার বক্তব্য বিপ্লবের ধারাকে ব্যাহত করেছে। 

রাজনৈতিক মেধাশূন্য ড. ইউনূসকে বিশ্ব নির্মাণ করেছে অনেক কারণে। পশ্চিমাগোষ্ঠী তার বন্দকী বিহীন ঋণ দাদন নীতির সবচেয়ে গুণগ্রাহী হলেও তার রাজনীতিকে তেমন মূল্যায়ন করেননি। আর ইউনূসের রাজনৈতকি প্রজ্ঞা কিংবা মেধাহীন তৎপরতার বিষয়ে তারা জেনেও তা পূরণে বা ঘাটতি মেটাতে কোনো উপদেশ দেয়নি। অবশষে আলী রিয়াজের মতো এক অপ্রয়োজনীয় শিক্ষককে একবার বিদায় দিয়ে আরেকবার নিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশের পুনর্গঠনের নিরিখে এই শিক্ষককের প্রধান বৈঠকখানা ছিল দুটি-একটি হচ্ছে ডেইলি স্টার ও অন্যটি প্রথম আলো। এই দুটি পত্রিকার সম্পাদকদের পদলেহন করে তিনি এতদিন বাংলাদেশে চলেছেন, জুলাই বিপ্লবের নথি বানিয়েছেন, কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন ফরমুলার কথা বলেননি। ভারতের কাছে জুলাই বিপ্লবের ফসলকে বন্ধক রাখতে এই শিক্ষকের তেমন কোনো প্রয়াস তো নিতে হয়নি। বরং বিষয়টাকে পাশ কাটিয়ে এই ফসলকে ভারতের হাতে তুলে দিতে প্রয়াস চালিয়েছেন। অথচ জুলাই বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ভারতের অবয়বকে উৎপাটিত করা। 

এই ভারতীয় ধ্বজাধারী উপদেষ্টামণ্ডলীর কাউকেও দেখা যায়নি তারা কীভাবে হাদির মৃত্যুকে দেখছেন। তবে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় হাদির বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেছেন। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, আজকাল-প্রত্যেক পত্রিকা প্রশ্ন তুলেছেন হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি নজরুলের পাশে দাফন করা নিয়ে। হাদিকে তারা চিত্রিত করেছে মৌলবাদী হাদি বলে। বলা হচ্ছে, ইউনূসের বাংলাদেশে অসম্মান নজরুলেরও। প্রশ্ন তুলেছে হাদির কবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানায় না নজরুলের পাশে। কারণ হাদি নাকি ছিলেন জেহাদি আর এক জেহাদির মৃত্যুতে লক্ষ জেহাদির নাকি তাণ্ডব চলছে। এসব কথার কোনো উত্তর ইউনূস সরকারের প্রেস উইং কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল দেয়নি। বিএনপি এখন ক্ষমতায় যেতে বিভোর। গত ১৯ ডিসেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একটি খবর। লিখেছে-‘খালেদা পুত্রের সম্বল নয়াদিল্লির বন্ধুত্ব, মুক্তিযুদ্ধ’। সব ঠিক থাকলে ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় নামছেন তারেক জিয়া। ব্রিটেনে বসে ১৭ ডিসেম্বর বুধবার তিনি নিজেই সে কথা ঘোষণা করেছেন। এমন একটা সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়।

অথচ এসব পত্রিকায় সব সময় ড. ইউনূস নিয়ে বিষোদগার করা হলেও হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তার মৃত্যু পর্যন্ত ভারত একটা কথাও কোনো পত্রিকায় লিখেনি। তারা হাদির বিরুদ্ধে বিষোদগার সৃষ্টি করে চলেছে। হাদি সম্পর্কে তারা কোনো প্রকার ইতিবাচক মন্তব্য করেননি। এই হাদি হাসিনার মতো পয়সা চুরি করেনি। এই হাদি বাংলাদেশকে বিক্রির কথা বলেনি। বলেছেন, বাংলাদেশে ইনসাফের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে। এ হাদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অবমূল্যায়নের কথা বলেছেন। কিন্তু হাদি কখনই ধর্মান্ধতা নিয়ে কথা বলেননি। হাদির মৃত্যুর পর মুসলিমবিদ্বেষী তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের নাম দিয়েছে জিহাদিস্থান। নিজের দেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার এ নারীর যৌনতা ও বেঁচে থাকার সম্বল। সৌমেন চট্টোপাধ্যায় তসলিমা সম্পর্কে বলেছেন, যে নারীর পুরুষ যে খারাপ তা বুঝতে চারজনকে বিয়ে করতে হয়, সে নারীর প্রজ্ঞা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু ভারতীয় পত্রপত্রিকা এই নারী চরিত্রের বন্ধনা করে থাকে। 

নজরুলের পরিবার নাকি বলেছেন নজরুলের কবর মৌলবাদীরা রাখবে না। এই ধরনের কথাই মৌলবাদকে জিইয়ে দেয়। হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতীয়রা এই মৌলবাদকেই উসকে দিচ্ছে।

ভারতীয়দের কাছে হাসিনার ফ্যাসিবাদ যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, তার জন্য কোনো শোক নেই। শোক নেই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদের জন্য। একইভাবে কবি আল মাহমুদের ভাষায় ‘চোরের চোধনী’ তসলিমাও এই আন্দোলনকারী পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব ও মৃত্যুবরণকারী আবু সৈয়দ, মুগ্ধসহ হাজার হাজার জনতা নিয়েও কিছু লিখেনি। লিখেছে এবং বলেছে শরীফ ওসমান হাদিকে নিয়ে। যিনি বাংলাদেশে ইনসাফের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিলেন। 

হাদির মৃত্যুর চোরাগলি পথে হাঁটছেন খলিলুর, জাহাঙ্গীর ও আসিফের দল। সম্ভবত তারাই বিএনপির পৃষ্ঠে চড়ার জন্য তৎপর। আর বিএনপির পৃষ্ঠে চড়ে তারা বৈতরণী পাড়ি দিতে চান। তবে বিষয়টা তত সহজ হবে না।

আজ মোদির পদলেহীরা ভারতে বসে হাদির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। আগামী দিন সম্ভবত তাদেরই প্রয়োজন হবে হাদিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে। সেভাবে পথের অন্ধকারকে পায়ে ঠেলে শহিদ জিয়ার অনুপ্রেরণায় বসতি স্থাপনা করে পথঘাট মাঠের মধ্যখানে পথ রচনা করে হাদি নবজন্মের স্বাদ নিতে ছিল প্রতিজ্ঞাবন্ধ আগামী দিনে বাংলাদেশের যুবসমাজ তার পথই অনুসরণ করবে। আর নজরুলের কবর গাহকে সজীব করে তুলবে এই হাদি।

শেয়ার করুন