নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক সাক্ষাৎকার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চলছে নানা আলোচনা। সম্প্রতি জিটিও’র বৃটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস। যা বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যেকোনো সময় তুলে নেয়া হতে পারে’। প্রকাশিত এই তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) কর্তৃক পরিচালিত ‘বাংলা ফ্যাক্ট’। ফ্যাক্টচ্যাকিংয়ের এই প্রতিষ্ঠান সরকারকে নিয়ে হওয়া বিভিন্ন খবরের তথ্য যাচাই করে থাকে। তাদের দাবি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ড. ইউনূসের বরাত দিয়ে ‘যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হতে পারে’ বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়।
আলোচিত সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদতে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ‘কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না’। এমনকি আগামী নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবে না। তার ভাষায়, ‘দলটির বৈশিষ্ট্য দেখে এবং তারা যে পুরো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে সেই সম্ভাবনা বুঝে নির্বাচন কমিশন ভেবেছে যে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেয়াই ভালো’। স্পষ্টতার খাতিরে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যথায়, আমরা নির্বাচন করতে পারবো না।’ তবে একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টিকে তিনি ‘আপাতত’ বা ‘ফর দ্য টাইম বিয়িং’ বলতে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত’ কথাটা বুঝিয়েছেন। এ বছরের ১০ই মে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধের সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ থাকবে (সূত্র: প্রথম আলো, ১০ই মে ২০২৫, অনলাইন সংস্করণ)। সুতরাং মেহেদী হাসানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত’ সময়টাকেই ‘ফর দ্য টাইম বিয়িং’ হিসেবে বলেছেন। এবং ‘কোনো এক সময় এটা (কার্যক্রম) চালু হতে পারে’ বলে তিনি এই বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার পরের সময়কেই বুঝিয়েছেন; বর্তমান সময় বা নির্বাচনকালীন সময় নয়। বাংলা ফ্যাক্ট কর্তৃক আলোচিত সাক্ষাৎকারের প্রাসঙ্গিক অংশের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট এবং এর হুবহু অনুবাদও তুলে ধরা হয়।
মেহেদী: হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, আপনার সরকার তার সাবেক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছে, ফলপ্রসূভাবে তাদের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আপনার সহ-নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, যাকে আপনি খুব ভালো করে চেনেন; তিনি লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছিলেন, এটি কেবল আগের সরকারের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে। তারা ক্ষমতায় এসে তাদের বিরোধীদের নিষিদ্ধ করেছিল। আপনি শুধু সেই চক্রেরই পুনরাবৃত্তি করছেন। সেন এবং অন্যদের এ ধরনের সমালোচনার জবাবে আপনি কী বলবেন?
ড. ইউনূস: এটা তাদের নিজস্ব সমালোচনা, কারণ আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।
মেহেদী: মানে বোঝাতে চাইছি, আপনারা তাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছেন।
ড. ইউনূস: না, নিবন্ধন নয় (আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে: বাংলাফ্যাক্ট)। কেবল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
মেহেদী: এর কী অর্থ দাঁড়ায়?
ড. ইউনূস: এর মানে হলো, তারা কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
মেহেদী: তাহলে আপনারা তো মূলত... মানে, তারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না।
ড. ইউনূস: না, না। দলটি তো এখনো আছে।
মেহেদী: তারা কি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে?
ড. ইউনূস: এখন নয়। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মেহেদী: ঠিক আছে, তাহলে অমর্ত্য সেন যার বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন, এটা কীভাবে সেটাই নয়?
ড. ইউনূস: অতএব, তারা, তারা একটা দল হিসেবে বহাল থাকছে।
মেহেদী: আচ্ছা।
ড. ইউনূস: তবে আপাতত কার্যক্রম স্থগিত।
মেহেদী: আর কী...
ড. ইউনূস: মানে, কোনো এক সময় এটা (কার্যক্রম) চালু হতে পারবে।
মেহেদী: মানে আপনি তাদের স্থগিতাদেশ তুলে নিতে পারেন?
ড. ইউনূস: স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া। এটা একটা সম্ভাবনা।
মেহেদী: তাহলে আপনি দলটিকে নিষিদ্ধ করেননি, আপনি শুধু বলেছেন, আপাতত তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
ড. ইউনূস: ঠিক তাই।
মেহেদী: কিন্তু একটি গোষ্ঠীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করা কীভাবে গণতান্ত্রিক?
ড. ইউনূস: দেখুন...দলটির বৈশিষ্ট্য দেখে এবং তারা যে পুরো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে সেই সম্ভাবনা বুঝে নির্বাচন কমিশন ভেবেছে যে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেয়াই ভালো। অন্যথায়, আমরা নির্বাচন করতে পারবো না।