০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:৪২:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দর্শকদের স্বপ্ন ঘোরের উৎস ভূমে ড্রামা সার্কলের নাটক ‘পাখি’
সনজীবন কুমার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
দর্শকদের স্বপ্ন ঘোরের উৎস ভূমে ড্রামা সার্কলের নাটক ‘পাখি’ নাটকে অংশগ্রহণকারী কলাকুশলীরা


‘সব দায় এড়িয়ে ভালো থাকা যায় না।’ মনোজ মিত্রের পাখি নাটকের এটাই বোধহয় ছিল মূল বার্তা, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। দেশে দেশে যুদ্ধের যে হিংস্র হুঙ্কার, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশ্বব্যাপী শ্রেণি-বৈষ্যমের যে নগ্ন উৎসব চলছে তার দায় কি আমরা এড়িয়ে যেতে পারি? নানা বিষয়ে আমরা যেভাবে অস্থির সময় অতিক্রম করছি, সেই প্রেক্ষাপটে মনোজ মিত্রের ‘পাখি’ নাটকটি মঞ্চায়ন ছিল অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত এবং সময়োপযোগী।

গত ২২ জুন জ্যামাইকা সেন্টার ফর আর্টস অ্যান্ড লার্নিংয়ে ড্রামা সার্কেল এই নাটকটি উপস্থাপনা করে। পাখি নাটকের কাহিনি, সংলাপের ভাষা, দৃশ্য পরিকল্পনা ও চরিত্র চিত্রণ আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক ছিল। ছাপোষা এক চাকরিজীবীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ, অভাবে জর্জরিত সরল ও কোমল প্রাণ এক নারীর হতাশা, অর্থনৈতিক শ্রেণি-বৈষম্যের বেদনা, অসহায় মায়ের মর্মবেদনা এসব নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে নাটক সাবলীলভাবে এগিয়ে যায়। বিছানার চাদর থেকে বেদনার নীল কষ্টে একটি পাখি হারিয়ে যাওয়া নাটকটির কাহিনির পরতে পরতে ছিল গভীর ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ অর্থ, কল্পনার ব্যাপ্তি ও হৃদয়গ্রাহী শিল্পময়তা।

পাখি নাটকে নিতিশ (আবীর আলমগীর) ও শ্যামার (কান্তা আলমগীর) দরিদ্রতা নিয়ে মনোজগতে দ্বন্দ্ব ও গভীরতম বেদনা মূর্ত হয়ে উঠলেও দম্পতি হিসেবে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে দেখা যায়। নাটকে উভয়ে পরস্পরের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে সম্পৃক্ত। যার জন্য তাদের রোমান্টিকতা ও ভাবালুতার উপস্থিতি সহজেই দর্শকদের মোহিত করেছে।

গোপালের ভূমিকায় চন্দন চৌধুরীর অভিনয় ছিল সাবলীল এবং অবশ্যই দর্শকনন্দিত। অসম্ভব সুুন্দর সংলাপ প্রক্ষেপণ ও মুন্সিয়ানা উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে চন্দন নিঃসন্দেহে উতরে গিয়েছে। তাকে একজন জাত নাট্যশিল্পীই মনে হয়েছে।

জাফরিন আবেদীন চৈতালীর উপস্থাপনার কৌশল ছিল সীমিত এবং কিছুটা আরোপিত। তবে তার কণ্ঠ মিলনায়তনের শেষ অবধি গিয়ে পৌঁছেছে, সেদিক দিয়ে তিনি সফল হয়েছেন।

নাটকে ঘটনার চাইতে স্পর্শকাতর সংলাপ ও শারীরিক অভিব্যক্তি দর্শক-শ্রোতাদের বেশি আনন্দ ও উপভোগ্য করে তোলে। কিন্ত নাটকের শেষপ্রান্তে চিঠিটি পড়ার পর আবীর, কান্তা ও চন্দন অভিনয়শৈলী ও কারুকার্যতা দেখার সুন্দর সুুযোগ হাতছাড়া করেছেন। এখানে তারা তিনজন আরো আবেগময় হতে এবং দর্শকদের হৃদয়ের অতল তলে স্পর্শ করতে পারতেন।

নাটকের শেষে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নার্গিস আহমেদ জানিয়েছেন, আবীর আলমগীর এবং কান্তা আলমগীর কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। তারপরও কমিটমেন্টের জায়গা থেকে আমরা সরে আসিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা ৭টার ট্রেন ৯টায় ছাড়িনি। ৭টার ট্রেন ঠিক ৭টাতেই ছেড়েছি, অর্থাৎ ঠিক ৭টাতেই নাটক শুরু করেছি।

দীর্ঘ চার মাসের প্রস্তুতি নিয়ে ৪৬ মিনিটের ‘পাখি‘ নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন জহির মাহমুদ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে নার্গিস আহমেদ, প্রযোজনা অধিকর্তা রিপা আহমেদ, মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় এস কে বুখারি, আবহ সংগীত ফারহানা তুলি আলক, পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ সুফিয়ান বিপ্লব এবং সঞ্চালনায় ছিলেন আদিবা জহির।

সব মিলে নাটকটি দর্শক-শ্রোতারা ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। যার জন্য নাটক চলার সময় বেশ কয়েকবার দর্শক করতালি দিয়ে অভিনয়শিল্পীদের অভিনন্দিতও করেছে। নাটক নিয়ে স্বপ্ন ঘোরের উৎস ভূমে ড্রামা সার্কল এগিয়ে যাক।

শেয়ার করুন