তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে সব ঠিক থাকলে এবছর ডিসেম্বরের ঠিক শেষেই তিনি দেশে ফিরছেন।
এদিকে সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন ‘অন্যান্য বৈঠকের মতো নিয়মিত বৈঠক হয়েছে স্থায়ী কমিটির। এটা দলের রেগুলার মিটিং, স্থায়ী কমিটির মিটিং। বিভিন্ন বিষয়ে, রাজনৈতিক আলোচনা এবং নির্বাচন ভিত্তিক বিভিন্ন আলোচনা, প্রচার ও কৌশল নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন আলোচনা করেছি। অন্য কোনো বিষয নয়। তবে জানা গেছে ডিসেম্বরে দেশে আসা নিয়েই এই বৈঠকটি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয় এবং এর পাশাপাশি দিনক্ষণ জানিযে দেওয়া হয়।
তবে জানা গেছে, তার দেশে ফিরে না আসা নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি। এক্ষেত্রে সবপক্ষই অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিডিওল ঘোষণার আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে চলে আসা জরুরি। আর বর্তমানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জিয়া অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ, কিন্তু এবারের অসুস্থতা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এবং মাত্রাও অন্যটিকে মোড় নিচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। দীর্ঘদিন তাঁর অসুস্থতার কারণে তারেক রহমান কার্যত দলের প্রধান। তা-ই অসুস্থ খালেদা জিয়ার পাশাপাশি সামনে দেশে নির্বাচনের অনেক আগেই রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে তারেক রহমানের দেশে চলে আসা জরুরি। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের নিরাপত্তাসহ অন্যসব ইস্যুত গ্রীন সিগন্যাল দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত। সর্বশেষ তারেক রহমানের দেশে আসার ব্যাপারে কোনো ধরনের আইনগত বাধা আছে বলে জানা নেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘আর যদি কোনো বাধা থেকেও থাকে, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে কোনো রকম আইনগত বাধা আছে বলে আমার জানা নেই। আর যদি কোনো বাধা থেকেও থাকে...অবশ্যই সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। ওনার নিরাপত্তার ব্যাপারেও আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’
অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে এক দিনে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এতোসব ইতিবাচক আশ্বাসের পর কেনো বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা হচ্ছে না তা নিয়ে নানান নেতিবাচক প্রচারণা চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর সোমবার স্থায়ী কমিটির মিটিং এবিষয়গুলো বেশ জোরেসোরেই আলোচিত হয়। তবে ওই স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তেই যে তারেক দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা কিন্ত না। বিষয়টি গত সোমবারের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়। তবে একটি সূত্র জানায় বর্তমানে গুরুতর চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে তারেক রহমানের দেশে আসা আবার পিছিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তারেক রহমান লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকালীন পুরো সময়টা সেখানে অবস্থান করবেন। আর যদি বাংলাদেশেই চিকিৎসা ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে সেক্ষেত্রে তারেক রহমান লন্ডন পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে দেশেই চলে আসবেন।
বিষয়টি দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধিকে পুরোপুরি নিশ্চিত করেছেন তারেক রহমানের সাথে দেশের আসা বহরের বেশ কয়েকজন সদস্য। তবে বাংলাদেশেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়ক্ষণ কিছুটা আগ-পর হতে পারে।
খালেদা জিয়া বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় কি না, দেখার পর তারেকের ফেরার সিদ্ধান্ত: ফখরুল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আরও বলেছেন, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগির দেশে ফিরবেন তিনি (তারেক রহমান)।
গত ২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত একটি দোয়া মাহফিলেও তিনি একই কথা বলেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। রোববার রাতে শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।