মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিবৃন্দ
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল, বিলিয়নাররা অর্থ বিলিয়েছিল, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মামদানির বিরুদ্ধে ছিলেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এভাবে আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা গভর্নর নির্বাচিত করবো, কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবো। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির ট্রানজিশনাল টিমের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভাটি গত ৭ ডিসেম্বর জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মমিন মজুমদারের পরিচালনায় মতবিনিময়ে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ট্রানজিশনাল টিমের সদস্য আব্দুল আজিজ ভুইয়া, আরমান চৌধুরী, সামশুল হক, কাজী ফৌজিয়া, তাজিন আজাদ এবং ফারিয়া আক্তার। এ টিমে ১২ জন বাংলাদেশি আমেরিকান থাকলেও ৬ জন অংশগ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন।
ট্রানজিশনাল টিমের সদস্যদের জানান, ট্রানজিশন টিমের প্রধান দায়িত্ব হবে মেয়রের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে রূপ দিতে দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা তৈরি করা। যেমন-ভাড়া কমানো, গণপরিবহন উন্নয়ন, বাস সার্ভিস ফ্রি করা, নিরাপত্তা জোরদার, স্কুল সংস্কার ও গৃহহীনতা কমানোর পরিকল্পনা। তারা বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি শপথ নিতে যাওয়া নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে কাজ করতে ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের আবেদনের সংখ্যা কত তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বাংলাদেশিদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া গেলে তারা সিটি টিমে অন্তর্ভুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তারা বলেন, আপনাদের মধ্যে যদি কারো যোগ্যতা থাকে তারাও আবেদন করতে পারেন, আপনারা সুপারিশ করতে পারবো। আমরা বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য সেতু হিসাবে কাজ করবো।
নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি মামদানির নির্বাচনে ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিল উল্লেখ করে ট্রানজিশনাল টিমের সদস্যদের জানান, ভোট প্রার্থনা থেকে শুরু করে তহবিল সংগ্রহ-সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। নবনির্বাচিত মেয়র মামদানি তার অভিষেক টিমে বাংলাদেশিকে অন্তর্ভুক্ত করে সেই সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশি আমেরিকানরা এবার ব্যাপাক হারে ভোট দিয়েছে, যে কারণে আমাদের মূল্যায়ণ করা হয়েছে। প্রায় ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি জোহরান মামদানিকে ভোট দিয়েছেন।
কাজী ফৌজিয়া বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল, বিলিয়নাররা অর্থ বিলিয়েছিল, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মামদানির বিরুদ্ধে ছিলেন কিন্তু কোন বাজ হয়নি। এভাবে আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা গভর্নর নির্বাচিত করবো, কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবো।
তাজিন আজাদ বলেন, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুল বোর্ডে আমি প্রথম মুসলিম বাংলাদেশি সদস্য। আমি বাংলাদেশি আমেরিকান নতুন প্রজন্মের জন্য কাজ করবো। আমি সিটির সঙ্গে আপনাদের যোগসূত্র তৈরি করতে চাই। যে কারণে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ফারিয়া আক্তার তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী সিটি গড়তে চাই। আপনারা জানেন ট্রাম্প একটি ফ্যাসিবাদী সরকার। আবারো নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরা মামদানির নির্বাচনে নতুন শক্তি হিসাবে অভির্ভূত হয়েছি, এই শক্তিতে ফাটল ধরানো যাবে না। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই।
সামশুল হক বলেন, মামদানির জয় নিয়ে শুধু নিউইয়র্ক নয়, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশি মিডিয়াও এবারের নির্বাচনে জোহরান মামদানিকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি।
আজিজ ভুইয়া বলেন, আমি এক সময় রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ছিলাম। ১৯৯৭ সালের দিকে রাজনীতিতে যুক্ত হই। এবারের নির্বাচনে যেসব এলাকায় বাংলাদেশিরা বেশি ছিল সেখানে মামদানি বেশি ভোট পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে মামদানির বিরোধীতা করেছিলেন, মিলিয়নরা দুহাতে অর্থ খরচ করেছে- কিন্তু তারপরেও কাজ হয়নি। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করবো। তিনি সবাইকে ভোটার হবার আহ্বান জানান।
আরমান চৌধুরী বলেন, আমাদের আজকের অবস্থানের জন্য বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা ভোট দেয়ার কারণেই আমরা নির্বাচিত হয়েছি। তিনি বলেন, মামদানির নির্বাচনে ৯২ শতাংশ মুসলমান তাকে ভোট দিয়েছেন। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত করেছে।
এ সময় মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। অন্যদের মধ্যে গোল্ডেন অ্যাজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম।