১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫১:৩১ পূর্বাহ্ন


আওয়ামী লীগের দুর্বলতার সুযোগ নিলো জাপা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
আওয়ামী লীগের দুর্বলতার সুযোগ নিলো জাপা


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে কিছুটা কোণঠাসাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিল জাতীয় পার্টি। বাগিয়ে নেওয়া হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ। এছাড়াও আরো অনেক জাপা নেতাও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে যে সব নেতারা এর বিরোধীতায় ফেটে পড়েছিল তাদেরও কপাল এই সুযোগে পোয়াবারো। তাদের দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা। যেনো বিরোধী দলের আসনে বসে জাপাকে এবং এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশে বিদেশে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়। এমন খবরই মিলেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে। একই অভিমত প্রকাশ পেয়েছে জাপা’র ঘনিষ্টজনদের সাথে আলাপ কালে। যদিও ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাপাই হচ্ছে বিরোধী দল।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা, তারা পেয়েছেন ৬২টি আসন। তবে অনেক গর্জন আর হাক ডাক মেলে চমক দেখিয়েছে রাজনীতির মাঠে জাপা। জাপা পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল। তবে জাপা গর্জে উঠেছিল এই বলে যে তারা ক্ষমতায় আসীনও হয়ে যেতে পারে। আবার দাবি করেছিল ২৬টিরও বেশি আসন পাবে। কিন্তু জাপা সে আশা পূরণ হয়নি। 

তারপরেও বিরোধী দল হওয়ার নেপথ্যে

টানা তৃতীয় মেয়াদে বিরোধী দলের আসনে থাকছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের পরে দলটি বিরোধী দলের আসনে বসবে কি-না তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শেষ ছিল না। এব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আওয়াজ না মিললেও শেষমেষ হঠ্যাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এর আগে সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে ধারণা দেয়া হয়েছিলো যে, স্বতন্ত্ররাও হতে পারে সংসদে প্রধান বিরোধী দল। এমন ধারণা পেয়ে স্বতন্ত্ররা কিছুটা জেগে উঠেছিল যারা আওয়ামী লীগই করেন অথচ মনোনয়ন পাননি কিন্তু স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করে জয়ের মালা ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা এসময় প্রকাশ্যে এসে দাবি করতে থাকে দলের সভানেত্রী চাইলে তিনি বিরোধী দল গঠন করতে পারেন। তিনি বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বলা যায় সংগঠিত করে একটি মোর্চা গঠন করে সংসদে বিরোধী দল গঠনে সাজ সাজ রব দিয়ে হাক ডাক ছাড়তে থাকেন। সে-ই আওয়ামী লীগ নেতা সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার শুরু করেন। তার এমন দেনদরবারে সরকারের শীর্ষ মহল বিব্রতবোধ করে, সেখানে কিছুটা রহস্যেরও সৃষ্টি করে। এবং খোদ আওয়ামী লীগেই দ্রুত মত পাল্টে ফেলে এ প্রসঙ্গে। আওয়ামী লীগের একটি শীর্ষ নেতা এই প্রতিনিধি বলেন, দলের হাইকমান্ড চান সংসদে ছোট্ট বহরের একটি বিরোধী দল। এমন ধারণার খবর পাওয়ার পর বিজয়ী স্বতন্ত্রদের দ্বারা মোর্চা করে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা আর হযনি এই গ্রুপটির। 

যেভাবে জাপা সুযোগ হাতিয়ে নিলো

এবারে জাতীয় পার্টি এবারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে যেভাবে নাটকীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তার পেছনে ছিলো একটি প্রতিবেশি দেশ। এই প্রতিবেশি দেশটি জাপা’র শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিশেষ করে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বুঝিয়ে সুজিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করায়। এবং ওই দেশটি জি এম কাদেরকে আশ্বস্ত করেছিল এবারের নির্বাচন অধিক আসন নিয়ে বিরোধী দলের আসনে জাপাই বসতে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে জাপা ১১টি আসন পেয়ে গোমড়া হয়ে যায়। এবং এর পরপরই নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগে যেমন আচরণ করে ঠিক ফলাফল ঘোষণার পরও তেমনটা শুরু করে। জি এম কাদের প্রায় প্রকাশ্যেই বলতে থাকে যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ভোটে ভরাডুবি নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা-কর্মীদের একটা অংশের নানা অভিযোগের ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘যারা বলছে, আমরা টাকা পাইছি, টাকা যে পাইছি, এর সাক্ষী-প্রমাণ কী। বললেই হলো টাকা পাইছি।’ জি এম কাদের আরও বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আরও কী কী হয়েছিল, সেটা তিনি বলতে চান না। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশি দেশটির একধরনের হস্তক্ষেপে আবারো জাপাকে পুরনো ট্র্যাকে নিয়ে আসতে বাধ্য আওয়ামী লীগ। অর্থ্যাৎ সংসদের বিরোধী দলের আসনটিই তাদেরই দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে এতে জাপা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কম আসন পাওয়ায় ক্ষোভ থেকে কিছুটা শান্ত হবে। কেননা জাপা নেতা জি এম কাদেররা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে ঠিক এমন সময় উচ্চবাচ্য শুরু করছে, যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গন নানান কারণে উত্তপ্ত অবস্থায়। কেননা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার ইত্যাদি প্রশ্নে পশ্চিমা বিশ্ব নির্বাচনের আগে যেমন বেশ সরব রয়েছে তেমনি এই বিষয়টি নিয়ে এর পরও তারা উচ্চবাচ্য শুরু করেছে। এসব করা হচ্ছে কখনো প্রকাশ্যে কখনওবা আবার পর্দার আড়ালে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদন্ড অনুযায়ী হয়নি বলে অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এদিকে সরকারের দিক থেকে এমন নাজুক পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্রদের বিরোধী আসনে বসালে তা-নিয়েও আরো বির্তক উসকে দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যতো বিধি বিধান থাককু না কেনো কেউ তা মানবে না। কেননা সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল এবং যুক্তি দেখিয়েছিল যে সংবিধানে বিরোধী দল সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা নেই। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট) ধারা অনুযায়ী, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসংঘের নেতা।’ কার্যপ্রণালি বিধিতে বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে হলে এককভাবে কয়টি আসন পেতে হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। সেহিসাবে বিরোধী দলের স্বীকৃতির বিষয়টি স্পিকারের একক এখতিয়ারের বিষয় বলেও প্রচার করা হয়। কিন্তু এমন বিধিবিধানে তোয়াক্কা না করে শেষ-মেষ জি এম কাদেররাই সংসদে বিরোধী দলের আসন পেয়ে গেলেন। এপ্রসঙ্গে স্বতন্ত্র হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসতে উদগ্রিব ছিলেন আওয়ামী লীগের এমন বেশ কয়েকজন নেতা এই দেশ প্রতিনিধিকে দেন চমকপ্রদ তথ্য। তাদের মতে, জাপা’কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিশেষ করে জি এম কাদের গ্রুপকে বেকায়দা রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু একদিকে পশ্চিমাদের চোখ রাঙানি অন্যদিকে প্রতিবেশি দেশটির এক ধরনের তৎপরতায় ক্ষমতাসীনরা মত পাল্টে ফেলে। আর জাপা বাগিয়ে নেয় বিরোধী দলের পদটি।

শেয়ার করুন