২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৬:৫১:৩০ পূর্বাহ্ন


গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের দায় পলিসি মেকারদের
অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম বিরাজমান তীব্র গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের জন্য দায়ী সরকারের ভুল জ্বালানি-বিদ্যুৎ নীতি


বাংলাদেশে বিরাজমান তীব্র গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের জন্য দায়ী সরকারের ভুল জ্বালানি-বিদ্যুৎ নীতি, ভ্রান্ত ব্যবস্থাপনা। শত প্রশ্ন করলেও বিশ্বাসযোগ্য উত্তর মিলবে না ২৯ হাজার মেগাওয়াটের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও কেন ১৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা মেটাতে পারছে না সরকার? ঢাকা মহানগরীতে বসে কিছু মানুষ হয়তো স্বস্তিতে আছেন। কিন্তু ঢাকার বাইরে শহরাঞ্চল, গ্রামগঞ্জে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং। কোথাও তারও বেশি। শিল্পগুলো ভুগছে মারাত্মক জ্বালানি সংকটে, দেশের অধিকাংশ সারকারখানা বন্ধ, অনেক ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। 

সরকারি পলিসি মেকাররা অজুহাত দেবে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরো কত কি। এই গ্রীষ্মকালে প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। দু-একদিন পিক চাহিদার সময় দু-এক ঘণ্টা বাংলাদেশ ১৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলেও দৈনিক উৎপাদন ১৪৫০০-১৫০০০ মেগাওয়াট সীমিত রয়েছে। মূল কারণ প্রাথমিক জ্বালানি সংকট, গ্যাস সরবরাহ সংকট, কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি আমদানি সক্ষমতার অভাব। 

সবাই জানে, সরকারের ভুল পরিকল্পনার কারণে মূল্যবান কয়লাসম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে। জলে-স্থলে গ্যাস অনুসদ্ধান উন্নয়নে ধীরগতি। নির্ভরযোগ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা না করেই দেশীয় জ্বালানিসম্পদ উপেক্ষা করে আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে হাত বাড়িয়েছে। ১৫ বছরের অধিক চতুর্থ টার্মে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য একান্তভাবে দায়ী , সেই ২০১০ থেকে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ অ্যাক্ট নামের আড়ালে একটি জবাবদিহি বিহীন আইন চালু আছে। এর আড়ালে প্রতিযোগিতাবিহীনভাবে অনেক বিদ্যুৎ কারখানা গড়ে তুলে সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মহলকে হাজার কোটি টাকা আয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনুসদ্ধান করা হয়নি গ্যাসসম্পদ, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি কয়লা উত্তোলন করে কাজে লাগানোর। 

বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ১০ বছরের অধিক সময় ধরে সরকারকে বর্তমান পরিস্থিতি ঘটার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করে আসছে। কিছু উপদেষ্টা, পরামর্শকদের প্রভাবে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত সময়মতো নিতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমান সংকট সৃষ্টি করেছে। বৈষয়িক সংকট সব দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করেছে। অধিকাংশ দেশ সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ পারেনি, কখন কাটিয়ে উঠবে এখনো অনুমান করা যাচ্ছে না। 

এখন যে সরকার ১০০ গ্যাসকূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে, সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে, প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে ৫-৭ বছর আগে কেন করেনি? মনে আছে ২০১৯ ঢাকায় কনফারেন্স অব নন রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (কোন) আয়োজনে জ্বালানি উপদেষ্টাকে কয়লা উত্তোলন এবং সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তখন কিন্তু কোভিড শুরু হয়নি। বর্তমান সরকার ২০০৯ থেকে একাধারে চতুর্থ টার্ম রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে আছে। ২০১০ থেকে কয়লা উত্তোলন, গ্যাস অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বর্তমান সংকট সৃষ্টি হতো না। আজ আমদানিনির্ভর বিদ্যুৎখাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতো না। 

এই সরকারের জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি উপদেষ্টা দীর্ঘসময় সংযুক্ত আছেন। অথচ কয়লা মাটির নিচে পড়ে রয়েছে, গ্যাস পরিস্থিতি ভয়াবহ। সবাই জানেন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হবে। কিন্তু মাতারবাড়ীতে ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাসসম্পদ জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সংযুক্ত হচ্ছে না। সাগরের গ্যাসসম্পদ আহরণ করে কাজে লাগাতে ৮-১০ বছর সময় লাগবে। ভাবতে অবাক লাগে, ২০০০ বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানির জন্য ভারত সরকার প্রস্তুত ছিল, সেই ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান এলএনজি আমদানি করে বাংলাদেশে রফতানি করার উদ্যোগ নিয়েছে, ভারতের আদানী গ্রুপ কয়লা আমদানি করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করছে, ভারতের একটি তেল শোধনাগার বাংলাদেশে পাইপলাইনে তরল জ্বালানি রফতানি করছে। 

প্রশ্ন তুললেই সরকার-ঘনিষ্ঠ মানুষগুলো ২০০১-২০০৬ বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলের জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটের কথা বলেন। প্রশ্ন আসতেই পারে যে, ১৫-১৬ বছর পর সার্বিক জ্বালানি-বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কি ২০০৯-২০১০ থেকে খুব উন্নত হয়েছে? অনেকে বলবেন, প্রাচুর্যের অভিশাপ। সম্পূর্ণভাবে দায়ী সরকারের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবরা।

শেয়ার করুন