৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:৩৯:২৭ অপরাহ্ন


বিডস ওয়েবিনারে বক্তারা
বাংলাদেশের সার্বিক জাতীয় নিরাপত্তা রেড জোনে রয়েছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২৪
বাংলাদেশের সার্বিক জাতীয় নিরাপত্তা রেড জোনে রয়েছে আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ


বাংলাদেশের জাতীয় নিরপত্তার প্রতিটি ক্ষেত্র রেড জোনে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। গেল ১৫ বছরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা দেখার চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোয়েন্দা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে গণঅভ্যুথানের বিপক্ষে তথ্য সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন প্যানেলে অংশ নেওয়া আলোচকরা। সাংবাদিক জিমি আমিরের সঞ্চালনায় আয়োজিত ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডস এর পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন আনসারী। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান, সংযুক্ত আরব আমিরাত সেনাবাহিনীর আইসিটি নীতি বিভাগের প্রধান ও ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স বিশেষজ্ঞ ড. ফাহিম সুফী। 

স্বাগত বক্তব্যে ইমরান আনসারী বলেন, আজকে যখন আমরা গণঅভ্যুথান পরবর্তী বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় বসেছি তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯২৫ সালে বিনায়েক দামোদার সাভারকার উপস্থাপিত আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত একটি অভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। যার কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। শুধু তাই নয় ভারতের পানি আগ্রাসনে আজ ক্ষতবিক্ষত বাংলার বিস্তীর্ণ জনপদ। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার কথায় কথায় বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করছে। ২০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে এক বিরাট জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ফেলেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার নাজুক দিক তুলে ধরতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আজকে যখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরাপত্তা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, আজকে যখন দেশে বিগত ৫০ বছরে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি, প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি জাতীয় সাইবার কমান্ড সেন্টার। সে মুহূর্তে জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে এমন সব বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাতে হবে।

এম শাহিদুজ্জামান বলেন, গেল ১৫ বছরে বাংলাদেশের সমর নীতি পুরোপুরি ভারতনির্ভর হয়ে পড়েছিল। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভারতে প্রশিক্ষণে বাধ্য করা হয়েছিল। ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টিলিজেন্সে আওয়ামী ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে একটি দলীয় বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন সময় এসেছে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার এ বিষয়গুলোর প্রতি গভীরভাবে নজর দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের কাছ থেকে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমার সঙ্গে আমাদের দেশ ভুল পলিসি গ্রহণ করেছিল। তার মতে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে প্রস্তুত করা দরকার ছিল। এম শাহিদজ্জামান মনে করেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহযোগিতা অত্যাবশ্যকীয়। 

ড. ফাহিম সূফী বলেন, গণঅভ্যুথান পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের ৩৫০ শতাংশ তথ্য অভিযান বেড়েছে। তিনি তার বক্তব্যে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কীভাবে ভারত থেকে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভুল তথ্য, অপপ্রচার পরিবেশিত হচ্ছে। 

ড. সুফি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের পর তথ্য অভিযানের ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে বিশেষত আওয়ামী লীগ সমর্থক ও তাদের মিত্রদের দ্বারা পরিচালিত কার্যক্রমগুলো চোখে পড়ার মতো। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন যে, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য তথ্য অভিযানের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় কৌশলগত কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। তার সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-১. তথ্য অভিযান প্রতিরোধে একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল তৈরি করা, যা সামরিক, গোয়েন্দা এবং জননীতি খাতের মধ্যে সমন্বয় করবে।

২. সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা করে দ্রুত ক্ষতিকর কন্টেন্ট এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য অপসারণ করা।

৩. বিভিন্ন বিচারব্যবস্থায় হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি বৈশ্বিক তথ্য অভিযান টাস্ক ফোর্স নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা।

৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় শক্তিশালী করা, কারণ তথ্য অভিযান প্রায়ই জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে।

৫. তথ্য অভিযানের হুমকি পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল গঠন করা।

৬. কৌশলগত যোগাযোগ এবং পাল্টা প্রোপাগান্ডা প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করা, যাতে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে বর্ণনাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গভর্নমেন্টের রেজিস্ট্রিকৃত সংগঠন আনসারী একাডেমি ইউএসএর একটি প্রজেক্ট হিসেবে ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু করে।

শেয়ার করুন