২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুক্রবার, ০৩:২৮:২৯ অপরাহ্ন


দুদিনব্যাপী ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ কনভেনশন
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী স্বপ্নের বাংলাদেশ সবার প্রত্যাশা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৮-২০২৪
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী স্বপ্নের বাংলাদেশ সবার প্রত্যাশা বক্তব্য রাখছেন আলমগীর খান আলম


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৮ আগস্ট আন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি তাদের নানাবিধ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তারপরই তারা যা করছেন, ভালো করছেন। তবে দু-একটি কাজ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। যার মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অন্যতম। তাছাড়া এই সরকারকে আরো সময় দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এবারের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রধান দাবি ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এ রাষ্ট্র সংস্কার সহসাই সম্ভব নয়। এজন্য সময় প্রয়োজন। আমরা তাদের সময় দিতে চাই এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চাই। গত ২৪ এবং ২৫ আগস্ট জ্যামাইকার মেরি লুইস একাডেমিতে ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ সম্মেলনের সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, স্মরণকালের বন্যায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনের শুরুতেই শোটাইম মিউজিকের প্রেসিডেন্ট আলমগীর খান আলম ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করেন এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে বন্যায় নিহতদের প্রতিও তিনি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই অর্থ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

দুদিনের এ সম্মেলনে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতি তুলে ধরে নিউইয়র্কের শোটাইম মিউজিক। এ সম্মেলনের আয়ের অর্থ বাংলাদেশের বন্যার্ত মানুষের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম।

দুদিনের এ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম, গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট এবং সপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ফোবানার কর্মকর্তা জাহাংগীর হোসেন বাবুল, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ইশতিয়াক রুমি, আব্দুর রশিদ ও ইঞ্জিনিয়ার খালেক প্রমুখ।

বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর প্রায় সবচেয়ে বেশি দূরত্বে অবস্থিত উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় অর্ধযুগ পূর্বে শুরু হয় বাংলাদেশ সম্মেলন। দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনে ছিল না কোনো প্রবেশ মূল্য। অনুষ্ঠানে ছিল সেমিনার, কাব্য জলসা, ফ্যাশন শো, শাড়ি কাপড়, জুয়েলারি, খাবার স্টল এবং দেশ ও প্রবাসের শিল্পীদের পরিবেশনায় আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

সম্মেলনের প্রথম দিনে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ নিয়ে সেমিনার। সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড। আলমগীর খান আলমের সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক হিসাবে অংশগ্রহণ করেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ ও সাংবাদিক রওশন হক। ফাহাদ সোলায়মান বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এটাই আমাদের সবার প্রতাশা ছিল। আমরা একটি স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। আমাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমরা এখন স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চাই। নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তাদের সময় দিতে হবে। এ সরকার কেমন করবে-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যা দেখেছি তাতে ভালো বলেই মনে হচ্ছে। পুরো মূল্যায়ন করার সময় এখনো আসেনি।

রওশন হক বলেন, আমাদের সন্তানরা যা করেছে তা অবিশ্বাস্য। আমরা এক দুর্বিষহ সময়ের মধ্যদিয়ে গিয়েছি। আমরা কয়েকটি বই ছিল, তা নিয়ে আলোচনাও করতে পারিনি। আমাদের সন্তানরা যে অসাধ্য সাধন করেছে এবং নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তা আমাদের প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।

আকবর হায়দার কিরণ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে কোনোভাবেই নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা নতুন করে বাংলাদেশ দেখতে চাই।

আলমগীর খান আলম বলেন, এ সরকারের কোনো কোনো কর্মকা- আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মামলা। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। আশা করি নতুন সরকার এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখ দাঁড় করাবে।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন-চন্দন চৌধুরী, নিলীমা শশী, কৃষ্ণা তিথি, ত্রিনিয়া হাসান, শামীম সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান বকুল, রায়ান তাজ, প্রেমা রহমান, প্রমি তাজ, মিঠু মাহমুদ, নিপা জামান, শাহ মাহবুব, রানো নেওয়াজ, বাবুল ফখরুল, আফতাব জনি, কাজল, মনিকা দাস, আনিক রাজ, আমান, বিন্দু কনা, পুলক, নাজু আখন্দ ও আমান।

শেয়ার করুন