২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুক্রবার, ০৫:১২:১৫ অপরাহ্ন


বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কী বার্তা দেবেন ডোনাল্ড লু
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৪
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কী বার্তা দেবেন ডোনাল্ড লু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু


বাংলাদেশের মানুষ বেশ ভালই চেনেন ডোনাল্ড লু’কে। তার আগমনকে পরখ করা হতো স্বস্থির কোনো বার্তা পাওয়া যায় কি না, সে দৃষ্টিকোণ থেকে। দীর্ঘ ১৬ বছর এককভাবে ক্ষমতা আটকে রাখা শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়ার সেক্রেটারি ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। তাদের অনুরোধ, নিবেদন ছিল একটাই- বাংলাদেশের সাধারন মানুষের চাহিদা অনুসারে নিজের ভোট নিজে দিয়ে পছন্দসই নেতৃত্ব বাছাই করে নেয়ার অধিকার ফেরানোর। এতে একটি সুষ্ঠুধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক ভোট অনুষ্ঠান, যা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গোটা বিশ্বে যে গণতন্ত্রধারা প্রতিষ্ঠা সেটার প্রতিফলনও ছিল এতে। কিন্তু মার্কিনীদের অমন দীর্ঘ চাওয়া বারবার প্রত্যাখাত হয়েছে শেখ হাসিনার কাছে। শুধু প্রত্যাখানই নয়, মার্কিনীদের নিয়ে তাদের নীতি নৈতিকতা নিয়ে উপহাসও চলছে অনাবরত। 

সর্বশেষ ২০২৪ এর জানুয়ারির ভোটেও মার্কিনীদের যথাসাধ্য চেষ্টা ছিল। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে বিএনপি’র উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বলেও তিরস্কার করা হয়েছে। এ বিষয়াদি সবার জানা, এবং নতুন করে আর বলার নেই। ব্যর্থ মনরথে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে আসা ডোনাল্ড লু ও পরবর্তিতে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস (নানা উপহাসের শিকার) ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু বার বার বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা মনের ভাষার সঙ্গে সঙ্গতি প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষায় ছিলেন কখন তারা আবার ফিরবেন এটা বলাই বাহুল্য। 

পরিশেষে, আবারও বাংলাদেশ মুখী হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ঢাকামুখী হচ্ছেন দেশটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। তবে এবার আর পুরনো ইস্যু নয়, এবার আসছেন তারা নতুন ইস্যু নিয়ে, যাতে থাকছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ও সহযোগিতার হাত প্রসারিতকরণ। আর এ প্রেক্ষাপটে সহসাই ঢাকা যাচ্ছেন ডোনাল্ড লু। 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্বে একটি অন্তর্বতী সরকার। যার নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের পরম বন্ধু শান্তিতে নোবেল পাওয়া প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ অন্তর্বর্তী সরকারের একমাসও হয়নি। তার আগেই মার্কিনীদের ঢাকায় আসার ঘোষণা। এবং কার কার সঙ্গে এসে সাক্ষাত চান সে প্রত্যাশা। 

মূলত সেই পুরানো ইস্যুই তারা আবার নতুন করে বলছেন। আর তা হলো বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করার পথ ও পন্থা নিয়ে আলোচনা। এবং সেটা জরুরি ভিত্তিতেই তারা করতে আগ্রহী হয়ে আসছেন ঢাকা। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ক’দিনের মধ্যেই যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও যাবেন তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে। সংক্ষিপ্ত ওইসফরেও তার সঙ্গে জরুরি আলাপটা সেরে নিতে পারতেন। তবু ঢাকায় এসে আলোচনা করাটাকেই যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সেটার নির্দশন রাখতেই ডোনাল্ড লু ও তার ক’জন সহযোগীর ওই ঢাকায় আগমন। 

যে দলে রয়েছেন ডোনাল্ড লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। তাদের আগমনের সম্ভব্য সময় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের যে কোনো এক সময়। প্রতিনিধি দলে কারা থাকতে পারেন সে বিষয় যতটুকু জানা গেছে এর মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড। বাংলাদেশের রক্তাক্ত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডোনাল্ড লু তথা যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রতিনিধি দলের এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম বাংলাদেশ সফর।

জানা গেছে, প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করা ছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক চেয়েছে। 

মূলত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার মতো বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার থাকলেও সার্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

মানবাধিকারের ক্ষেত্রে গত এক যুগের বেশি সময়জুড়ে বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচনা ছিল। যার সর্বাগ্রে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবসহ তার সাত কর্মকর্তাকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রদানসহ বেশকিছু পদক্ষেপ তারা দীর্ঘদিন থেকেই নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা যায়নি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। যদিও ওই ঘটনার পর উল্লেখযোগ্যহারে কমেছিল গুম খুনের ঘটনা। সেটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সন্তোষ প্রকাশ করেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এরই মধ্যে গুমবিরোধী সনদে সই করেছে। গুমের ঘটনাগুলোর বিচারে তদন্ত কমিশনও গঠন করেছে। এছাড়াও ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের ঘঠনার সুষ্ঠু তদন্তে ইউএন এর সহযোগিতাও চেয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকারের ফ্যাক্টফাইন্ডিং টিমও বাংলাদেশে তদন্তে আসবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। 

ফলে বাংলাদেশের সার্বিক ব্যাবস্থার উন্নতি ও সংস্কারে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন